অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে আট বছর অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার কথা ছিল। কিন্তু বিগত ১৩ বছরে মাত্র ৬৯৬টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় সব করা যায়নি। তবে বর্তমান সরকার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দেশের প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা হয় দেশ স্বাধীনের পরপরই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঘোষণায় ১৯৭৩ সালে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। বঙ্গবন্ধু প্রথম দফায় জাতীয়করণ করেন ৩৭ হাজার ৬৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দফায় নতুন করে জাতীয়করণ করেছেন ২৬ হাজার ১৫৯টি। আর বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে ১ হাজার ২০৭টি। দেশে বর্তমানে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এর মধ্যে ৬৯৬টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক অথবা স্বল্পমূল্যে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। টাকার জন্য কোনও শিক্ষার্থী যাতে নিম্ন মাধ্যমিক থেকে ঝরে না পড়ে সেই প্রয়াস থাকবে আমাদের।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ্ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘আগামী ৫ মে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কয়েকটি বৈঠক করতে হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করতে আমাদের ৬৯৬টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চলমান রয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করবো সেসব বিদ্যালয়ে অবকাঠামো থাকতে হবে। আমাদের শিক্ষক রয়েছে, তবে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ৫ মে বৈঠকের পর আপনাদের বিষয়টি বিস্তারিত জানাতে পারবো।’
নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত অবৈতনিক করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে যেমন পড়ানো হয়, তেমনি অন্যান্য সাপোর্ট দিচ্ছে সরকার। বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেওয়া ছাড়াও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গভাবে অবৈতনিক।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে সেসব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। গত ৩০ এপ্রিল প্রাথমিকের সব আঞ্চলিক উপ-পরিচালক ও জেলা শিক্ষা অফিসারদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের তালিকা চাওয়া হয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা যাবে সেসব বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক সংখ্যাও জানতে চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বৃদ্ধি করে আট বছর অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এটি বাস্তবায়নে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অবকাঠামোগত আবশ্যকতা মেটানো এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত শিক্ষকের ব্যবস্থা করা।
বর্তমানে শিক্ষকের স্বল্পতা থাকলেও শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ফলে শিক্ষক সংকট থাকবে না। তবে অনেক বিদ্যালয়ে এখনও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই।
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করার বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতিতে যেমন বলা আছে, তেমনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত অবৈতনিক করা জরুরি। দ্বাদশ পর্যন্ত অবৈতনিক করার বিষয়টি বাংলাদেশ সই করেছে। আমরা তা না পারি অন্তত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আপাতত করি। শুরু তো করা দরকার। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর মাধ্যমিক পর্যন্ত অবৈতনিক করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। যদিও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একটা জটিল অবস্থায় আছে। অনেক শিক্ষার্থী, অনেক প্রতিষ্ঠান। তবু ধাপে ধাপে করা ছাড়া উপায় নেই।’