তড়িঘড়ি করে দেশজুড়ে হাইটেক পার্ক!

আগস্ট ১৫, ২০১৩

hi-tech-640ঢাকা জার্নাল: মহাজোট সরকার শেষ সময়ে হলেও সারা দেশের সব জেলায় হাইটেক পার্ক বা আইটি ভিলেজ স্থাপন করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে দেশের প্রায় সব জেলাতেই জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।

দেশের সাত বিভাগে আইটি ভিলেজ করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার থাকার পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের (আইসিটি) তরফ থেকে বিভাগসহ প্রতিটি জেলায় আইটি ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করার জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ১৯৯৯ সালে সর্বপ্রথম গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার।

এরপর মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকেট পার্ক বা আইটি ভিলেজ করার ঘোষণা দেয়। খুলনায় সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর শহরের টিঅ্যান্ডটি বোর্ডের তিন একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

গত বছর ২১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান সেখানে আইটি ভিলেজ স্থাপনের জন্য ভিত্তি প্রস্তরও স্থাপন করেন। ধীর গতিতে হলেও এখন কাজ চলছে।

এ ছাড়া গত ২৮ জুলাই তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজশাহী শহরে হাইকেট পার্ক স্থাপনের জন্য সুপারিশ করেছে।

এদিকে গত ২৩ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সরাসরি জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়।

এ নির্দেশনার পর জেলা প্রশাসকেরা জমি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জেলা সদরে ১৫ থেকে ২০ একর সরকারি জমি পাওয়া প্রধান সমস্যা হয়ে উঠেছে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পর্যায়ে একসঙ্গে বেশি জমি পাওয়া যাচ্ছে না। সদরে জমি অধিগ্রহণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না অথবা উপজেলা পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণ করা হবে কি না তা জানাতে মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দিয়েছেন জেলা প্রশাসকেরা।

রংপুরের জেলা প্রশাসক ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সদরে ১০ একর সরকারি জমি পাওয়া গেছে। আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, সদরে সরকারি জমির সঙ্গে অন্যান্য জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে সরকারি জমি আছে। সেখানে আইটি ভিলেজ করার ব্যবস্থা নিলে জমি পাওয়া যাবে বলেও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে জেলা প্রশাসকেরা।

নাটোরের জেলা প্রশাসক জাফর উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, নাটোর সদরে পুলিশ লাইনের পাশে ৬ একরের মতো জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাচীর দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরও জমি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর তা আইসিটি মন্ত্রণালয়কে জানানোও হয়েছে।

গাজীপুরের হাইটেক পার্ক
২০২১ সালের মধ্যে আইসিটিনির্ভর কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আইটি জ্ঞানসমৃদ্ধ তরুণদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে ১৯৯৯ সালে কাজ শুরু করে সরকার। ওই সময় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে সরকার। কিন্তু সরকারের মেয়াদে শেষ হলে এলেও প্রকল্পের কাজ খুব একটা এগোয়নি।

এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে হাইটেক পার্কের জায়গা বেদখল হয়ে যায়। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলে প্রকল্প হাতে নেওয়ার ১০ বছর পর আবার শুরু করা হয় প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটি শেষ করতে ২০০৭ সাল অবধি সময় নির্ধারিত থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে বর্তমানে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে সরকার।

বিভাগীয় শহরে হাইকেট পার্ক
সকারের জিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মহাজোট সরকার মেয়াদেই সাত বিভাগীয় শহরে হাইটেক পার্ক বা আইটি ভিলেজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে পর্যাপ্ত জমি না পাওয়ায় অনেকটাই ঝুলে যায় আইটি ভিলেজ করার কার্যক্রম। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর বিভাগীয় শহর খুলনায় প্রথম ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়।

বিভাগীয় হাইটেক পার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু করেছে সরকার। এদিকে আসছে সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজশাহীতে হাইটেক পার্ক স্থাপনের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

হাইটেক পার্কের অর্থায়ন
হাইটেক শিল্প স্থাপন ছাড়াও উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে কর্মশালা ও সেমিনারের সঙ্গে প্রতিটি জেলায় অর্থ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ হাইকেট কর্তৃপক্ষ। মাঠ প্রশাসনকে সেমিনার এবং কর্মশালার সঙ্গে এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখতেও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।

একেবারে শেষ সময়ে এসে হলেও দেশের প্রযুক্তিদক্ষ তরুণদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে দেশের প্রতিটি জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার। আইসিটি মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো এমনই তথ্য দিয়েছে।

লিখেছেন, এস এম আব্বাস, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আগস্ট ১৫, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.