বেনাপোল বন্দরে সংঘর্ষ

আগস্ট ৪, ২০১৩

Untitled-1ইয়ানুর রহমান, শার্শা (যশোর), ঢাকা জার্নাল: বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন(৯২৫) দখলকে কেন্দ্র করে দু-গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া ও বোমা বিষ্ফোরনের ঘটনা ঘটেছে।

এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা শার্শা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বন্দরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খালিদ ব্রাদার্সের মালিক অহিদজ্জামান অহিদের অফিস ভাংচুর করা সহ তার অফিসের সামনে থাকা ৩টি মটর সাইকেল, ১০টি বাই সাইকেলসহ অফিসের টিভি ও আসবাবপত্র আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনার সময় দু’গ্র“পের বোমা নিক্ষেপে ৪ পথচারী গুরুতর আহত হয়েছে।
এ সময় আতঙ্কে এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে। দোকান পাঠ বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল বন্দরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক অহিদুজ্জামান অহিদ জানান, বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন(৯২৫) এর বিগত কমিটির মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এ জন্য নতুন কমিটি প্রয়োজন হওয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্য থেকে নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়। যা শ্রম অধিদপ্তর (ডিডিএম) খুলনায় অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। বৃহস্পতিবার শ্রম অধিদপ্তর এ নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। সেলক্ষ্যে রোববার সকালে নতুন কমিটি শ্রমিক ইউনিয়নের পুরাতন কমিটির কাছ থেকে দ্বায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে পুরাতন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম লালের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা তাদেরকে অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ধাওয়া করে, আমার অফিস ভাঙচুর করা সহ অফিসের টিভি, আলমারি, সামনে থাকা ৩টি মটর সাইকেল, ১০/১২ টি বাই সাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে।

বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন(৯২৫) এর পুরাতন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম লাল জানান, আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় শ্রম অধিদপ্তরে আমাদের নতুন কমিটির তালিকা দিয়েছি। তা শ্রীঘ্রই পাশ হয়ে আসবে। কিন্তু এরই মধ্যে বন্দরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কারী শার্শা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অহিদুজ্জামান অহিদ বহিরাগতদের নিয়ে একটি মনগড়া কমিটি তৈরী করে সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে (৯২৫) শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস দখল নিতে আসে। এসময় সাধারণ শ্রমিকরা ঘটনা জানতে পেরে সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের ধাওয়া করলে ৩০ থেকে ৪০ জনের সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা নামাজ গ্রাম রাস্তা দিয়ে ১০ থেকে ১২টি হাত বোমা বিষ্ফোরন ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, বহিরাগতদের দিয়ে হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি গঠন শ্রমিকরা কখনো মেনে নেবেনা। তারা যতোগুলো বৈধ কমিটি পাশ করিয়ে আনুক তাতে কোন লাভ নেই। প্রয়োজনে শ্রমিকরা আরো কঠোর অবস্থানে যাবে।

বেনাপোলের মেসার্স মুক্তা ট্রেডিং সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী ও মানবাধিকার কর্মী আব্দুল মুন্নাফ খোকন জানান, এ ঘটনায় রোববার সকাল থেকে বন্দরের পণ্য লোড-আনলোড ও খালাস বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তবে, কবে নাগাদ এ বন্দর বন্ধ থাকবে তা বোঝা যাচ্ছেনা। তিনি আরো জানান, শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটিকে কেন্দ্র করে যে বোমার বিষ্ফোরন হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষ ছিল জীবন হানির ভয়ে। এ সময় রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া পথচারী ২ মহিলা, এক শিশু ও এক যুবক বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছে। আহত ৪ জনের মধ্যে ২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো- বেনাপোল পোর্ট থানার গাজিপুর গ্রামের ইব্রাহিমের স্ত্রী ময়না(৩০) ও নামাজ গ্রামের সুবহানের স্ত্রী হাসি(৬৫), অজ্ঞাত ২ জন। এ সড়কে একটি স্কুল রয়েছে। স্কুলটি ছুটির পর এ রাস্তা দিয়ে প্রায় এক হাজার ছ্ত্রা-ছ্ত্রাী যাতায়াত করে । যদি স্কুল ছুটির সময় এ ঘটনা ঘটতো তাহলে অনেক শিশু দূর্ঘটনার শিকার হতো।

এ ব্যাপারে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন দখল নিয়ে দু গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ থেকে ১২টি বোমার বিষ্ফোরন ঘটেছে। এসময় ৪ পথচারী আহত হয়েছে। শ্রমিকের একটি পক্ষ বন্দরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক অহিদের অফিস ভাংচুর করে আসবার পত্র ও ৩টি মটর সাইকেল সহ কয়েকটি বাই সাইকেল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। পরে, ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত আছে। তবে, যে কোন সময় আবারো সংঘর্ষ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশকে সজাগ রাখা হয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রমিকরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে মাইক নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা করছিল।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ৪, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.