৭২ বছর বয়সে আব্দুল গফুরের দাখিল পাস

মে ২৪, ২০১৩

Jhenidah Gofur Pic222রাজিব হাসান, ঝিনাইদহ, ঢাকা জার্নাল: ঝিনাইদহের রতনহাট গ্রামের ৭২ বছর বয়সে আব্দুল গফুর এসএসসি পাস করলেন। পুত্রবধুর ওপর অভিমান করেই তার এই সাফল্য। ফলাফলও ভাল করেছেন তিনি।

বিদেশে থাকা ছেলের পাঠানো চিঠি পুত্রবধু রিনা বেগম পড়ে না শোনার কারণে অভিমান করে ৬৫ বছর বয়সে লেখাপড়া শিখতে মাদ্রাসায় ভর্তি হন আব্দুল গফুর। সিদ্ধান্ত নেন আমৃত্যু জ্ঞানার্জন করেআ কাটাবেন। শিক্ষিত হয়ে কবরে গেলেও ভাল। এমনিই সিদ্ধান্ত তার।

২০০৫ সালে এই ঘটনার পর ৬৫ বছর বয়সে তিনি বই কিনে বাড়িতে বসে পড়তে শুরু করেন। ২০০৭ সালে আব্দুল গফুর যান ঝিনাইদহ শহরতলীর লাউদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায়। সেখানে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ক্লাস করেন।

গত এস.এস.সি সমমান (দাখিল) পরীক্ষায় অংশ নেন ৭২ বছর বয়সের আব্দুল গফুর। বি-গ্রেড পেয়ে করেন। আশা করছেন কামিল পর্যন্ত পড়ালেখা করবেন।

আব্দুল গফুর জানান, খুব ছোট বেলায় মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে বাবা-মা মারা যান। এতিম হয়ে ছোট বেলা থেকেই কৃষি কাজ করতে হয়েছে। স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি তার। বাবার রেখে যাওয়া দুই বিঘা জমি চাষাবাদ করে সংসার চালাতে থাকেন।

১৯৭২ সালে পাশ্ববর্তী জয়ারামপুর গ্রামের আকাল উদ্দিনের কন্যা নুর ভানুকে বিয়ে করেন। তিন পুত্র সন্তানের বাবা হন আব্দুল গফুর। কয়েক বছর পূর্বে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান বড় ছেলে শামছুল আলম। মেঝো ছেলে রুহুল আমিন ৯ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ার পর কাজের সন্ধানে বিদেশে গেছে। ছোট ছেলে আশরাফুল ইসলাম এইচ.এস.সি পর্যন্ত পড়েছে। রুহুল আমিন বিয়ে করেছে।

আব্দুল গফুর জানান, ১০/১১ বছর পূর্বে ছেলে রুহুল আমিন বিদেশ থেকে একটা চিঠি পাঠান। তিনি পড়ালেখা না জানার কারনে পুত্রবধু রিনা বেগমের কাছে নিয়ে যান। পড়ে শোনাবার জন্য বললে কাজের চাপ দেখিয়ে এড়িয়ে যান। ছেলের চিঠি পড়তে না পেরে অনেক কষ্ট পান আব্দুল গফুর। তখনই সিদ্ধান্ত নেন পড়ালেখা করবেন। শিক্ষিত হয়ে কবরে যান। অশিক্ষিত হয়ে থাকতে চান না।

২০০৫ সালে এই ঘটনার পর তিনি বই কিনে বাড়িতে বসে পড়তে শুরু করেন। ২০০৭ সালে আব্দুল গফুর যান ঝিনাইদহ শহরতলীর লাউদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায়। সেখানে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ক্লাস করেছেন। গত এস.এস.সি (দাখিল) পরীক্ষায় অংশ নেন ৭২ বছর বয়সের আব্দুল গফুর। বি-গ্রেডে পাশ করেছেন তিনি।

আব্দুল গফুর জানান, তিনি কামিল পর্যন্ত পড়ালেখা করবেন। ইতোমধ্যে ভর্তির বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আব্দুল গফুর আরো জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে তার সমস্ত খরচ দেওয়া হয়। কিন্তু পড়ালেখার খরচ দেওয়া হয়নি। বাড়ির অন্যরা বলে এই বয়সে পড়ালেখা করে কোন লাভ নেই। যে কারনে নিজের খরচ নিজেকে জোগাড় করে পড়ালেখা করতে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে।

অবশ্য পুত্র আশরাফুল ইসলাম জানান, বাড়ি থেকেই তার খরচ চালানো হয়েছে। পরিবারের সকলের সহযোগিতা আছে এ ব্যাপারে। আর পুত্রবধূ রিনা বেগম চিঠি পড়ে না দেবার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।

এ ব্যাপারে আব্দুল গফুরের প্রাইভেট শিক্ষক মইনুর রহমান জানান, তার উদ্যেগ দেখে তিনি খুশি হয়েছেন। তাই টাকা ছাড়াই নিয়মিত প্রাইভেট পড়িয়েছেন। লাউদিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সুপার ইয়াসিন আলী জানান, তারা আব্দুল গফুরকে উৎসাহ দিয়েছেন। আশা করছেন সে আরো পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন।

ঢাকা জার্নাল, মে ২৪, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.