অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নোটিশ দৃশ্যমান স্থানে টানানোর নির্দেশ

মার্চ ৪, ২০২৪

অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নোটিশ দৃশ্যমান স্থানে টানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে পৃথক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে সোমবার (৪ মার্চ) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশসহ রুল জারি করেন।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সেখানে ১৩ ইউনিট কাজ করে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

এ অগ্নিকাণ্ডে নারী-পুরুষ-শিশুসহ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষ রয়েছেন।

এ ঘটনায় বেইলি রোডসহ ঢাকা সিটিতে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ব্যবসা (কার্যক্রম) বন্ধের নির্দেশনা, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা এবং তদন্তে বিচারিক কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত রোববার (৩ মার্চ) রিট করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।

আইনজীবী ইশরাত জাহানও একটি রিট করেন। রিটে রুল চাওয়ার পাশাপাশি ভবনটিতে আগুন লাগার কারণ উদঘাটন, সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও জরুরি বেরোনোর পথ ছিল কিনা— এসব তদন্তে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে কমিটি গঠন ও আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

এ ছাড়া ব্লাস্ট, আসক ও বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত তানজিনা নওরীনের পরিবারের এক সদস্যের (ভাই আইনজীবী নাজমুস সাকিব) করা অপর রিটে রুল চাওয়ার পাশাপাশি বেইলি রোডে আগুনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিশ্চিতের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

দুই আইনজীবীর রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে সোমবার দুপুরে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আইন অনুসারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা এবং ভবিষ্যতে আরও কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ কমিটিকে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে পৃথক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। এ ছাড়া অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টানাতেও বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ও আইনজীবী ইসরাত জাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত জানান, আইনে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ আছে। সেগুলো যথাযথভাবে নেওয়া হচ্ছে না। এ নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক রিট হয়। আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছেন। রুলে আইন অনুসারে পদক্ষেপ না নেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।

এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত একটি কমিটি করে দিয়েছেন। সেই কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, ঢাকার দুই সিটির প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর, বুয়েটের একজন প্রতিনিধি ও রাজউকের প্রতিনিধি থাকবে। কমিটি চার মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে হাইকোর্টে দাখিল করতে হবে। অগ্নি প্রতিরোধে স্থাপনাগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা, এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ভবিষ্যতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অমিত দাশগুপ্ত আরও জানান, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত নোটিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট বলেছেন, অধিকাংশ সময় দেখা যায়, এ নোটিশগুলো পকেটে রেখে দেওয়া হয়। এ নোটিশগুলো যেন দৃশ্যমান হয়, বিল্ডিংয়ে সম্মুখভাবে যেন টানানো থাকে, নোটিশ পড়ে যেন বোঝা যায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

আর দুটি সংস্থা ও নিহত একজনের পরিবারের এক সদস্যের রিটের শুনানি শেষে আদালতে ২০২৩-২৪ সালের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব ও ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো.আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস যেন বিস্তারিত প্রতিবেদন দেন যে, ২০২৩-২০২৪ সালে কতটি উঁচু ভবনে কী ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, সেখানে কয়জন জীবন হারিয়েছেন এবং অন্যান্য কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে এবং এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নিয়েছে।

আইনজীবী নাজমুস সাকিব বলেন, ভাইয়ের কাছে বোনের (অগ্নিকাণ্ডে নিহত) একটা ফোন এসেছে বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে। আমি আশা করব, বাংলাদেশে এ অভিজ্ঞতা আর কারো যেন না হয়। আমার বোনের একটা বাচ্চা আছে। তার জন্য দোয়া করবেন। এ যে একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা, কারো বোন, কারো ভাই, কারো বাবা একটা বিল্ডিংয়ে আটকা পড়ছে, সেই বিল্ডিংয়ের এক্সিটের কোনো রাস্তা নেই। একটা মাত্র সিঁড়ি আছে। এখানে ফায়ার সার্ভিস থেকে তিনবার নোটিশ করে অথচ এটি বন্ধ করা হয় না। এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।

২০২৩-২৪ সালে কতগুলো অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, সেই অগ্নিকাণ্ডে জানমালের ক্ষতি হয়েছে এবং এর প্রেক্ষাপটে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

দুটি বেসরকারি সংস্থা ও নিহত একজনের ভাইয়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (৪ মার্চ) রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন ও অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ।

রুলে অগ্নিনির্বাপণ আইন ও বিল্ডিং কোড প্রতিপালনে বিবাদী নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক অনুমোদেন কীভাবে দেওয়া হয় এবং বেইলি রোডে আগুনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র, ফায়ার সার্ভিস, রাজউক, গ্রিন কোজি কটেজের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।