এতিম শিশুদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে চায় আলিয়া ধারার মাদ্রাসা

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪

দেশের এতিম শিশুদের শিক্ষিত ও দক্ষ জনসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে গ্রহণ করে দেশের বেসরকারি আলিয়া ধারার মাদ্রাসাগুলো এতিম শিশুদের ভরণ-পোষণ ও শিক্ষার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশের প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে আলিয়া-কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানে লিল্লাহ বোর্ডিং (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অতিথিশালা তৈরি বা আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ) চালু করে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

সম্প্রতি বেসরকারি আলিয়া মাদ্রাসাগুলোর অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অন্যদিকে এতিম শিশুদের জন্য লিল্লাহ বোর্ডিং করে বেসরকারি আলিয়া মাদ্রাসাগুলোর এই দায়িত্ব পালন করার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সরকারি মাদ্রাসাও।

সরকারি মাদ্রাসা ই আলিয়া এর অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রশিদ বলেন, বেসরকারি কোনও মাদ্রাসা লিল্লাহ বোর্ডিং করে এতিমদের জন্য একটি ফান্ড করে জাকাত, ফিতরা ও দানের অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। তবে ওই অর্থ এতিমদের জন্যই ব্যয় করতে হবে। এটি ইসলামসম্মত, এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ।

স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দেশের এতিম শিশুদের জন্য শিক্ষিত ও দক্ষ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতিম শিশুদের দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আন্তরিকতা রয়েছে এতিম শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনার। যারা অবহেলিত শিশু তারা সমাজের বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এসব শিশুদের নিয়ে সমাজের সবারই ভাবা উচিত। মাদ্রাসার একটি রুমকেও লিল্লাহ বোর্ডিং করে শুরু করা যেতে পারে। তাছাড়া ভবনের সমস্যা নেই। দেশের ৬৪ জেলায় আমাদের সংগঠন রয়েছে, অন্তত দেশের ৬৪ জেলায় একটি করে প্রতিষ্ঠানে শুরু করতে পারি।’

সরকারসহ সমাজের সচেতন মানুষকে এই কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, ‘সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে আলিয়া ধারার মাদ্রাসাগুলো যাকাত, ফিতরা ও দানের অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে এতিম শিশুদের সহায়তায় ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা শিগগিরই উদ্যোগ নেবো। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব যারা রয়েছেন তারাও অবহেলিত এতিম শিশুদের জন্য তারা ভূমিকা রাখতে পারেন।’

বৈঠকে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক। তিনি বলেছেন, দ্বীনি শিক্ষা প্রসারে জাতির পিতার পর সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটা সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে হোক অথবা মাদ্রাসার মাধ্যমে হোক। সমাজের সবাইকেই এটা বলতে (স্বীকার করতে) হবে।

মন্ত্রী স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, আমরা কেন মানুষের কাছে প্রচার করতে পারছি না যে যাকাতের অর্থ আলেয়া মাদ্রাসায় আপনারা অবশ্যই দিতে পারেন। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, হাসপাতালে অবশ্যই দিতে পারেন। আমাদের কামিল পর্যন্ত, ফাজিল পর্যন্ত, দাখিল পর্যন্ত যদি এতিমখানা খুলতে চান তাহলে খুলতে পারেন। আমাকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন— আলিয়া মাদ্রাসা যেনও এতিমদের দায়িত্ব বেশি করে নেয়। আমরা যদি বেশি নিতে পারি তাহলে আমাদের এতিম সন্তানদের সমাজের মূল ধরায় নিয়ে আসতে পারছি। আর সমাজের যে দান, প্রবাসীরাও যে দান করছেন, এই টাকা যাতে নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলো পায়। তাহলে যেসব শিশুর বাবা-মা নেই, তারা উপকৃত হবে, সমাজ উপকৃত হবে। এই শিশুরা প্রকৃত শিক্ষা পাবে, দক্ষ ও কর্মমূখী হবে। এখন এসব শিশুরা কোনও কাজে-কর্মে যেতে পারছে না।

আলিয়া ধারার মাদ্রাসার অধ্যক্ষদের আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আলিয়া মাদ্রাসার সম্মানিত অধ্যক্ষদের প্রতি এটার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করবো। মানুষের হাতে টাকা আছে। ট্যাক্স কম আদায় হয়, কিন্তু দানের অংক বিশাল। সেই দানের অর্থ যেনও আমাদের মাদ্রাসার এতিমদের জন্য আসে। এটা যেনও আমরা সাবাই খেয়াল রাখি।

সরকার আলিয়া মাদ্রাসার এই উদ্যোগের সঙ্গে থাকবে উল্লেখ করে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দ্বীনি শিক্ষা প্রসারে বঙ্গবন্ধু কন্যার যে অবদান, তা আপনারা তুলে ধরবেন। আমরা প্রায়ই বলি ১৮শ’ মাদ্রাসা ভবন ছয় হাজার কোটি টাকা দিয়ে করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শতশত কোটি টাকা ব্যয়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন। আপনারা সমাজের এতিম শিশুদের জন্য এই উদ্যোগ নিতে পারেন।