শীতের কারণে রাজশাহীতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা

জানুয়ারি ২২, ২০২৪

তীব্র শীতের কারণে রাজশাহীতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ থাকবে। শনিবার (২০ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে পৃথকভাবে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় রবিবার (২১ জানুয়ারি) ও সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাজশাহীর মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

আদেশে তিনি উল্লেখ করেছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনা মোতাবেক ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক আগামী ২১ ও ২২ জানুয়ারি রাজশাহী জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকবে। ফলে এ দুইদিন রাজশাহী জেলার সকল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এদিকে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, শুধু রবিবার (২১ জানুয়ারি) প্রাথমিক স্কুল বন্ধ থাকবে। তাপমাত্রা যদি এমন থাকে তবে সোমবার (২২ জানুয়ারি) আবার নতুন করে ঘোষণা দেওয়া হবে।

অন্যদিকে সপ্তাহখানেক থেকে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিরাজমান। হাঁড়কাপা শীত জেঁকে বসেছে এই অঞ্চলে। শীতের কারণে জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমের চিত্র মহানগর ও গ্রামের সর্বত্রই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তীব্র শীতের কারণে সন্তানের অসুস্থতা এড়াতে স্কুলে পাঠাতে চাচ্ছেন না অভিভাবকরা। এমন সত্যতা মিলেছে অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কথায়। শিক্ষকরা বলছেন, স্কুলগুলোতে পুরোদমে ক্লাস শুরু হলেও পুরোদমে আসছে না শিক্ষার্থীরা। শীত কমলে পুরোদমে আসবে শিক্ষার্থীরা এমন প্রত্যাশা তাদের।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। এই স্কুলের প্রথম শ্রেণির কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। এই ক্লাসের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০ জন। কিন্তু ক্লাসে উপস্থিত ছিল মাত্র ১৭ জন। এছাড়া একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ৮০ জন হলেও ক্লাসে উপস্থিত ছিল মাত্র ২৬ জন। এছাড়া নামো ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই অবস্থা। এই স্কুলটিতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। স্কুলটির কয়েকটি ক্লাস রুমের মধ্যে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ৩৯ জন। কিন্তু ক্লাসে উপস্থিত ছিল ২৩ জন।

ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সুলতানা সাবানা বলেন, শীতের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। কয়েকদিন আগে প্রথম শ্রেণির এক শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে এসে বমি করে। পরে তাদের ছুটি দেওয়া হয়। এছাড়া শীতের কারণে কোনও কোনও শিক্ষার্থী ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে অভিভাবকরা জানান। তবে শীত কমলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।

রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (হেলেনাবাদ) প্রধান শিক্ষক ইসাবেলা সাত্তার বলেন, শীতের কারণে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসে ছাত্রীদের উপস্থিতি কম। শীত কমলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়ে যাবে।

ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে দুর্গাপুরে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। উপজেলার ৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে ৮১টি বিদ্যালয় ঠান্ডাজনিত কারণে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত কম হচ্ছে। দুর্গাপুর উপজেলা সদরে সিংগা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাক্তিবুল জানান, স্কুলে উপস্থিতি হার অনেকটাই কমেছে।

দুর্গাপুর উপজেলা দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনির বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা কম আসছে। শীতে শিক্ষকরা যথাসময়ে উপস্থিতি থাকলেও শিক্ষার্থীরা একটু কম আসে। তাই শীতে ক্লাস কিছুটা দেরিতে শুরু করতে হয়। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি মোটামুটি।

দুর্গাপুর উপজেলা আমগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল বলেন, বাইরে অনেক ঠান্ডা। ক্লাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের। তার পরেও স্কুলে আসছি।

দুর্গাপুর উপজেলা দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোকাররমের বাবা মমিন জানান, প্রচুর ঠান্ডা। সকাল বেলা আসতে অনেক কষ্ট হয়। যেসব শিশুদের ঠান্ডা জনিত সর্দি-কাশি-জ্বর আছে। তাদের ঠান্ডা লাগলে অসুখ বেড়ে যায়।

দুর্গাপুর উপজেলা বেলঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান মোহাম্মদ আলী শিক্ষক জানান, শীতে উপস্থিতির হার প্রায় ৩০ ভাগ কমেছে। আগে ৯০-৯৫ ভাগ উপস্থিতি থাকলেও এখন শতকরা ৬০-৬৫ ভাগ শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে গেলে অভিভাবকেরা বলছেন, ঠান্ডা লেগে অসুস্থতায় ভুগছে শিশু।

দুর্গাপুর উপজেলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামীম আহম্মেদ জানান, উপজেলায় ৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২০টি কিন্ডারগার্টেনে ১৭ হাজার ৮৫১ জন শিক্ষার্থী। শীতের প্রকোপে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমেছে।

বাগমারা উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তীব্র শীতের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমেছে। উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি ও ভোকেশনাল, মাদ্রাসা ও কলেজ পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। সকালে সালেহা-ইমারত ডিগ্রি কলেজ, হামিরকুৎসা দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। শিক্ষকরা জানান, তীব্র শীতের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম।

বাগমারা আলোকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আয়েন উদ্দিন জানান, স্কুলে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে শীতের কারণে শিশু-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। আশা করা যাচ্ছে শীত কমলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ হঠাৎ করেই শনিবার ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নেমে গেছে।