শুক্রবার সকালে শেষ হচ্ছে নির্বাচনি প্রচারণা

জানুয়ারি ৪, ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায়। সেই হিসাবে আজই প্রচারণার শেষ দিন। ফলে শেষ দিনের প্রচারণায় ব্যস্ত রাজনৈতিক দল প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। প্রার্থীরাও তাদের নির্বাচনি এলাকায় বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৮টায় প্রচার প্রচারণা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনও প্রার্থী জনসভা, পথসভা, মিছিল বা শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারবেন না।

এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনি প্রচারণার শেষ দিনে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) শেষ নির্বাচনি জনসভায় অংশ নেবেন। ঢাকার অদূরে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রচার প্রচারণা শেষ হওয়ার এক দিন বাদে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নওগাঁ-২ আসনে একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় ওই আসনের ভোট বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)-এর ৭৮ ধারায় নির্বাচনে প্রচারের সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা এবং ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচনি এলাকায় কোনও জনসভা আহ্বান এবং অন্য কেউ জনসভার আয়োজন করলে সেখানে অংশ নেওয়া যাবে না। এমনকি মিছিল, শোভাযাত্রা বা এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন বা অংশগ্রহণ কোনোটিই করা যাবে না।

এদিকে ভোটের মাঠের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয় নিয়ে বুধবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে বাহিনীগুলোর প্রধানরা মাঠের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুরোটাই ইসিকে অবহিত করেছেন। ইসির পক্ষ থেকেও তাদের সর্বশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছাবে। অবশ্য চার হাজারের বেশি দুর্গম ভোটকেন্দ্রে বৃহস্পতিবার ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। যাতায়াত পথ বিবেচনায় এসব কেন্দ্রে আগের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে।

মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী
গতকাল বুধবার নির্বাচনি মাঠের নিরাপত্তায় মাঠে নেমেছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর মাঠে নামেন পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডের সদস্যরা। তারা নির্বাচনি মাঠে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছেন। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আনসার সদস্যরা আগামীকাল শুক্রবার মাঠে নামবেন।

সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দেবেন। এ ছাড়া কিছু এলাকায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবেন তারা। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দেবেন। তারা জেলা, উপজেলা, মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে থাকবেন।

এর মধ্যে সেনাবাহিনী ৬২টি জেলায় নিয়োজিত থাকছে। সমতলে সীমান্তবর্তী ৪৫টি উপজেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজিবিকে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী সীমান্তবর্তী ৪৭টি উপজেলায় বিজিবির সঙ্গে এবং উপকূলীয় চার উপজেলায় কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে।

অন্যদিকে উপকূলীয় ছয় জেলার ১১টি আসনে নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আসনগুলো হলো, ভোলা ১, ২, ৩ ও ৪, কক্সবাজার ২ ও ৪, চট্টগ্রাম ৩, নোয়াখালী ৬; বরগুনা ১ ও ২ এবং বাগেরহাট-৩। ছয়টি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে নৌবাহিনীর তিন হাজারের বেশি সদস্য ১৯টি উপজেলায় আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

উপজেলাগুলো হলো— ভোলা সদর, বোরহান উদ্দিন, দৌলতখান, তজুমুদ্দিন, লালমোহন, চর ফ্যাশন ও মনপুরা; চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ; নোয়াখালীর হাতিয়া; কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালী; বরগুনার সদর, আমতলী, তালতলী, বামনা, বেতাগী ও পাথরঘাটা এবং বাগেরহাটের মোংলা।

নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুসারে নৌবাহিনী উপকূলীয় অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

বিমানবাহিনী দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় হেলিকপ্টার সহায়তা দেবে। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে নির্বাচনি সহায়তা প্রদানে বিমানবাহিনীর প্রয়োজনীয়সংখ্যক হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।