আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রচারণায় পরিবর্তনের প্রস্তাব

অক্টোবর ১৭, ২০২৩

আগামী সংসদ নির্বাচনকে পরিবেশবান্ধব নির্বাচন হিসেবে দেখতে চায় সংসদীয় কমিটি। এ লক্ষ্যে সহনীয় মাত্রায় শব্দযন্ত্রসহ পরিবেশবান্ধব নির্বাচনসামগ্রী ব্যবহারের নিশ্চয়তা চেয়েছে তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করতে আয়োজক সংস্থা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রস্তাবনা পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছে কমিটি।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়টি তোলা হলে মন্ত্রণালয় তার সঙ্গে একমত পোষণ করে। পরে কমিটির পক্ষ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের আগামী সংসদ নির্বাচনকে ‘গ্রিন ইলেকশন’ হিসেবে দাঁড় করানোর চিন্তাভাবনা আছে। আমাদের প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে। এটা সম্ভব হলে পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে ভালো সুযোগ হবে।

নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান আইন ও বিধিতে এ বিষয়ে কিছুটা থাকলেও, তা পুরোপুরি কার্যকর হয় না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য বলেন, নির্বাচনের সময় মাইক ব্যবহার করে প্রচারণা চালানো হয়। এতে শব্দদূষণ হয়। কাজেই মাইক কয়টা থেকে কয়টা থেকে বাজাতে পারবে, মাইক ব্যবহারে শব্দ সর্বোচ্চ কত মাত্রায় হতে পারে, কয়টা মাইক ব্যবহার করা যাবে, মাইকের সাউন্ড ডেসিমেল কত হবে, সেটা যদি ঠিক করে দেওয়া যায়; এটা বিধিতে স্পষ্ট করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে প্লাস্টিক পণ্য দিয়ে তৈরি ব্যানার ব্যবহার করা হয়, পলিথিন নিয়ে পোস্টার তৈরি হয়। প্রচারণার এসব উপকরণ প্লাস্টিক বা অপচনযোগ্য। এটা পচনশীল হতে হবে। পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।

তিনি জানান, সব মিলিয়ে অন্যান্য দেশে এই কাজগুলো যেভাবে হয়, সেভাবে পর্যালোচনা করে একটি প্রস্তাব পরবর্তী বৈঠকে আসবে। এটা কমিটি গ্রহণ করলে পরে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে কথা বলবো। নির্বাচনটা কনডাক্ট করে। এটা আচরণবিধির মধ্যে নিয়ে এলে সব দল ও প্রার্থীদের তা মানতে হবে।

বাংলাদেশে প্রথমবার এই চিন্তা হচ্ছে উল্লেখ করে সাবের হোসেন বলেন, চলমান বিধির আলোকে এই বিষয়টি সাজানো হবে। এর কিছু বর্তমান বিধিতেই আছে, সেটার মধ্যে আরও কিছু যুক্ত করে প্রার্থীদের মানতে বাধ্য করা যেতে পারে। সংসদ নির্বাচনে এটি সম্ভব হলে পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও তা যুক্ত করা যাবে। পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গঠনে ভালো একটি সুযোগ হবে।

সংসদীয় কমিটি পরবর্তী বৈঠকের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবে। চূড়ান্ত হলে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তা ইসিতে পাঠাবে বলে জানান তিনি।

দেশে বিদ্যমান দুটি সাফারি পার্ক বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হলেও, বন অধিদফতর মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলায় নতুন পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। তৃতীয় এই সাফারি পার্ক তৈরিতে এক হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ ধরেছে বন অধিদফতর।

এদিকে বন কেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদিনের নির্বাচনি এলাকায় সাফারি পার্ক তৈরির পরিকল্পনায় সমালোচনা উঠেছে বিভিন্ন পর্যায়ে। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে কতটি সাফারি পার্ক হতে পারে, এ নিয়ে একটা নীতিমালা করার জন্য মন্ত্রণালয়কে কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তৃতীয় সাফারি পার্ক থেকে সরকারের আয়-ব্যয় কী হতে পারে, তার প্রাক্কলন ব্যয় তৈরি করে কমিটিকে আগামী বৈঠকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যান ছাড়াও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরির সুপারিশ করে কমিটি।

এ বিষয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, নতুন সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হলে এটা বাণিজ্যিকভাবে কতটুকু লাভবান হবে, সেটা যাচাই-বাছাই করা উচিত। কেননা আমাদের যে দুটি সাফারি পার্ক রয়েছে। তা থেকে ব্রেক ইভেন্ট পয়েন্টে পৌঁছাতে পারিনি।

রাজেন্দ্রপুরে বনের গাছ কেটে রিসোর্টের রাস্তা তৈরি করতে গাজীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সহযোগিতার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনা জানতে ওই সংসদ সদস্যকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন বৈঠকে অংশ নেন।