কোরআন পোড়ানো নিয়ে শেখ হাসিনার নিন্দা

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩

গত কয়েক মাসে সুইডেনে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন মাজিদের কপি পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ভাষণে ন্যক্কারজনক এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতরে শুরু হয় ৭৮তম সাধারণ অধিবেশন। ওই দিন আলাদা ভাষণে কোরআন পোড়ানোর প্রসঙ্গে টেনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান, কাতারের আমির শেখ তামিম এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি।

শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অস্থিরতা, বিদ্বেষমূলক এবং উগ্রপন্থি বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানোর মতো জঘন্য অপরাধ আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের জঘন্য অপরাধ শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকেই আঘাত করে না, এটি অস্থিরতাকে উসকে দেয় এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এ সময় ফিলিস্তিনের পাশে থাকার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ বছর ফিলিস্তিনের ওপর বিপর্যয় নিয়ে আসা- ‘নাকবা’-এর ৭৫ বছর পূর্ণ হলো। ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকার অর্জনের পথ এখনও আশার মুখ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে।

মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। গত মাসে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আমাদের জন্য সত্যিই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা মৌলবাদকে ইন্ধন দিতে পারে হুঁশিয়ার করে সরকারপ্রধান বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতি সম্ভাব্য মৌলবাদকে ইন্ধন দিতে পারে। এই অবস্থা চলমান থাকলে এটি আমাদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে আগ্রহী। আসুন আমরা এই নিঃস্ব মানুষদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি।, আহ্বান করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী নানা সংকট মোকাবিলায় সব রাষ্ট্রকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে সুইডেন ও ডেনমার্কে ধারাবাহিকভাবে ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন পোড়ানো প্রকাশ্যে ঘটেছে। কিন্তু এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দেশ দুটির সরকার কোনও ব্যবস্থা না নিলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে। মুসলিম দেশগুলোর নেতারা বলছেন, কোরআন পোড়ানো মত প্রকাশের কোনও মাধ্যম হতে পারে না।