বিদেশ থেকে গবেষণার জন্য আনা উন্নত জাতের ৩৮টি মোরগ চুরি

জুলাই ১১, ২০২৩

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনিস্টিটিউটের (বিএলআরআই) ভেতর গবেষণার জন্য বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ৩৮টি মোরগ আনা হয়েছিল যেগুলো চুরি হয় ঈদুল আজহার আগের রাতে। এমন চুরির ঘটনা তদন্তে কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে।

এতে যারা আছেন, তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
জানা গেছে, মোরগ চুরির বিষয়ে বিএলআরআই মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছেন না। লুকোচুরি করছেন তার অধীনস্থরাও। কেন, কী কারণে তারা কোনো তথ্য দিচ্ছেন না, সেটিও জানা যাচ্ছে না।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকাল থেকে বিকেলে তিনটা পর্যন্ত মোরগ চুরির বিষয়ে কথা বলতে বিএলআরআই’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কেউই এ ব্যাপারে কথা বলেননি। পরে সংস্থাটির কার্যালয়ে গবেষণা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কক্ষে গিয়ে আলাপের চেষ্টা করে বাংলানিউজ, কিন্তু তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। কয়েকজনকে ফোনও করা হয়, তারা রিসিভ করেননি।

বিদেশ থেকে আনা মোরগগুলোর গবেষণার দায়িত্বে ছিলেন পোল্ট্রি রিচার্স সেন্টারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুন নাহার মনিরা। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। নিজে কিছু বলতে পারবেন না, সে কথাও জানান।

বিএলআরআই মহাপরিচালকের লিখিত নিয়ে এলে সবাই কথা বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন পোল্ট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. শাকিলা ফারুক। এ ছাড়া তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।

বিএলআরআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তাদের কার্যালয়ের পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতাভুক্ত। সরেজমিনে নিরাপত্তা প্রধানের কক্ষে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। যে মনিটরগুলো আছে, তাতে দেখা যায় বহু ক্যামেরা অচল হয়ে আছে। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তার দায়িত্বে নাকি ৩২ আনসার সদস্য কাজ করেন। তারপরও গবেষণার কাজে আনা মোরগ চুরি হলো কেন?

জানতে চাইলে বিএলআরআই’র নিরাপত্তা প্রধান আহসান হাবিব  বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান, কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্তের পর জানানো যাবে।

কমিটিতে কে কে আছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। বিষয়টি নিয়ে ‘কোনো কথা নয়’ বলে সাফ জানিয়ে দেন।

বিএলআরআই তথ্য কর্মকর্তা দেবজ্যোতি ঘোষ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে রাজি নন। পাওয়া যায়নি বিএলআরআই মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে। তার মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

গত ২৮ জুন রাতে গবেষণা শেডের ৫ নম্বর পিওরলাইন মেল শেড থেকে বিদেশি মোরগগুলো চুরি হয়। গত ৫ জুলাই এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু পুরো বিষয়টি চেপে যেতে যায় বিএলআরআই। এ অবস্থায় সোমবার (১০ জুন) একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

মনিরুল ইসলাম নামে মোরগগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি জানান, ঈদের আগের দিন রাতে কোনো এক সময় শেড থেকে ৩৮ টি মোর চুরি হয়। তাদের এই শেডে ৩০০ মোরগ ছিল। চুরি হওয়া মোরগগুলো আরআইআর ও হোয়াইট লেঘুন জাতের। তারা দায়িত্ব পালন করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। এরপর নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন।

বিএলআরআই’র পোল্ট্রি ও উৎপাদন গবেষণা বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে এই মোরগগুলো নিয়ে গবেষণা করে আসছিল। ১৯৯৯ সালের দিকে চারটি মোরগের জাত উপহার পেয়েছিল সংস্থাটি। এসব জাত গবেষণা করেই বিভিন্ন সময় স্বর্ণা, সুবর্ণ, শুভ্রার মতো বিভিন্ন উন্নত জাত উদ্ভাবন করে বিএলআরআই। তার মধ্যে দুটি জাত ছিল চুরি যাওয়াগুলো।