সেন্ট্রাল হাসপাতালের দাবি ডা. সংযুক্তা সাহার নির্দেশনা ছিল তার অনুপস্থিতিতে রোগী ভর্তির

জুলাই ২, ২০২৩

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক ব্যাখ্যা দিয়েছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে তারা বলছে, অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার ‘জোরপূর্বক’ নির্দেশনা ছিল তার অনুপস্থিতিতে তার নামে রোগী ভর্তি করতে হবে। এর আগেও তার অবর্তমানে তার নামে রোগী ভর্তি হয়েছে এবং তার মনোনীত কনসালটেন্টরা রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন।

রবিবার (২ জুলাই) সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. এম এবি সিদ্দিক ও ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এমএ কাশেম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তদন্তে তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে দুবাই যান। গত ১০ জুন অর্থাৎ তার বিদেশ যাওয়ার পরদিন সংযুক্তা সাহার রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয় এবং এর প্রমাণও আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।

সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ডা. সংযুক্তা সাহার দুটি প্রেস ব্রিফিংই অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্যে সেন্ট্রাল হাসপাতালের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। পাশাপাশি তিনি নিজের দায় হাসপাতালের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন।

সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তারা সংযুক্তা সাহাকে কোনও কমিশন দেয়নি এবং তার কাছ থেকে কমিশনও নেয়নি। হাসপাতালের বিল কত এবং ডাক্তারের বিল কত তা বিলে উল্লেখ থাকে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিল যাচাইয়ের জন্য তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে।

হাসপাতালটি বলছে, সেন্ট্রালের যে নিয়ম-কানুন নেই বলেছেন তাহলে সংযুক্তা সাহা ২০০৭ সাল থেকে কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেন? তাছাড়া বিভিন্ন ভিডিওর মাধ্যমে হসপিটালকে প্রমোট করলেন কেন?

ডা. সংযুক্তা সাহা একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে বেশি সময় দেন, তাই তিনি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের চেম্বার করা বন্ধ করেছেন। সেন্ট্রালের যদি নিয়মকানুন না থাকে তাহলে তিনি অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ছেড়ে এলেন কেন?

সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসকের সহকারী মো. জমিরের সঙ্গে রোগীর কথোপকথনের রেকর্ড, রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ওই রোগীর বিষয়ে অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার মোবাইলের কল লিস্ট এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের কথোপকথন ফরেনসিক করে রেকর্ড যাচাই করলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে বলেও দাবি করে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহজাদী জানান যে সংযুক্তা সাহার সঙ্গে ওই রোগীর বিষয়ে মোবাইলেও কথা হয়েছে। সংযুক্তা সাহার মোবাইলটি ফরেনসিক টেস্ট করলে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।

সেন্ট্রাল হাসপাতাল আরও দাবি করে, ডা. সংযুক্তা সাহা সেন্ট্রাল হাসপাতাল ছাড়া আরও হাসপাতালে চেম্বার করতেন। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, নরমাল ডেলিভারি এবং নিজের রোগীদের জন্য ডা. সংযুক্তা সাহার টিম ছিল। তার অন কল ডাক্তার ছিল। অন কল ডাক্তাররাই তার রোগী ডিল করতেন। সেন্ট্রালের ডাক্তাররা ডা. সংযুক্তা সাহা ও তার টিমের নির্দেশনা অনুসারে দায়িত্ব পালন করেন মাত্র। আঁখিকে ডা. সংযুক্তা সাহার আন্ডারে ভর্তির বিষয়ে প্রশাসন/ম্যানেজমেন্টের কোনও ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।

উল্লেখ্য, তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। এ সময় তার শারীরিক অবস্থা ‘স্বাভাবিক’ ছিল বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্তও করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।

প্রসব ব্যথা ওঠায় গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তার অধীনে মাহবুবাকে ভর্তি করানো হয়। ওই সময় ডা. সংযুক্তা সাহা দেশেই ছিলেন না, অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের জানায়, সংযুক্তা সাহা আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন। এরপর অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা ব্যর্থ হলে অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা বের করা হয়। কিন্তু পরদিন মারা যায় শিশুটি। আর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ জুন দুপুরে মারা যান মাহবুবুর রহমান আঁখি।

এদিকে সন্তানের মৃত্যুর পর ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা দায়ের করেন ইয়াকুব আলী। মামলায় ডা. শাহজাদী, ডা. মুনা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।