মালদ্বীপকে হারিয়ে সেমির আশা টিকিয়ে রাখল বাংলাদেশ

জুন ২৫, ২০২৩

লড়াইটা বাঁচা-মরার, তাই খেলায় আগ্রাসন থাকা ছিল জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে মালদ্বীপ বেশ শক্তিশালী এক দল।

সাফের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা। সেই দলের বিপক্ষে শুরুতে দাপুটে ফুটবল খেলেও পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচে কেবল একবারই ধাক্কা খেয়েছে তারা। এরপর দৃঢ় মানসিকতা দেখিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে। তাই জয় হাতে এসে ধরা দেয় খুব সহজেই।
বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফে সেমিফাইনাল খেলার আশা টিকিয়ে রাখল বাংলাদেশ। দলের হয়ে গোল তিনটি করেছেন রাকিব হোসেন, তারিক কাজী ও শেখ মোরসালিন। এই জয়ে দুই ম্যাচ শেষে তিন পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে আছে হাভিয়ের কাবরেরার দল। শেষ চারে উঠতে হলে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই। তবে একইসঙ্গে তাকিয়ে থাকতে হবে লেবানন-মালদ্বীপের ম্যাচেও।

লেবাননের বিপক্ষে ২-০ গোলে হারের পর আত্মবিশ্বাসে খুব একটা চিড় ধরেনি বলে জানিয়েছিলেন ফুটবলাররা। অনুশীলনে ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। মালদ্বীপের বিপক্ষে গত বছর প্রীতি ম্যাচে অবশ্য বাংলাদেশ হেরেছিল ২-০ গোলে। তবে এবার খুব বেশি পাত্তা পায়নি মালদ্বীপ।

প্রথমার্ধের পুরোটা সময় আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের ১৩ মিনিটে তিনটি কর্নার আদায় করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। মালদ্বীপের রক্ষনের কঠিন পরীক্ষাই নিচ্ছিলেন লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তবে ম্যাচের ১৭ তম মিনটে খেলার ধারার বিপরীতে কাউন্টার অ্যাটাকে হামজা মোহাম্মদের গোলে এগিয়ে যায় মালদ্বীপ। বক্সের বাইরে থেকে আলী ফাসিরের পাস থেকে জোরালো শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন এই ফরোয়ার্ড।

গোল হজম করে সমতায় ফেরার চেষ্টা করতে থাকে বাংলাদেশ। ২৫ মিনিটে জামালের কর্নারে তপুর হেড ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে যায়। ৩৩ মিনিটে সোহেল রানার কর্নারে তপুর হেড গোললাইন থেকে সেভ করেছেন হুসেন নিহান। ফিরতি বল হাতে লাগে মালদ্বীপের আহমেদ নুমানের। বাংলাদেশ তাতে পেনাল্টির আবেদন করলেও রেফারি তাতে সাড়া দেননি।

৪২ মিনিটে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। লম্বা থ্রো ইনে খেলার কৌশলে পরিবর্তন এনে ছোট থ্রো ইন করেন বিশ্বনাথ। সেখান থেকে লম্বা করে বক্সে বল বাড়ান সোহেল রানা। তপু সেটা হেডেই পাস দেন রাকিবকে। রাকিবও দারুণ এক হেডে বল জালে জড়ান (১-১)। ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। বিরতির পর ছন্দ ধরে রাখে লাল সবুজ জার্সিধারীরা। চাপ অব্যাহত রাখে মালদ্বীপের ওপর।

ম্যাচের ৬০ মিনিটে তিনটি পরিবর্তন করেন কোচ কাবরেরা। এরপরই খেলার মোড় ঘুড়ে যায়। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলার তারিক কাজী। জটলার মাঝে কর্নার থেকে পাওয়া বলে হেড করেন তিনি। গোললাইন থেকে বল ফিরিয়ে দিলে দ্বিতীয় চেষ্টায় বল জালে জড়ান ফিনল্যান্ড প্রবাসী এই ফুটবলার।

দলের হয়ে শেষ গোলটি করেন বদলি নামা বসুন্ধরা কিংসের আরেক ফুটবলার মোরসালিন। তরুণ এই ফুটবলার ইতোমধ্যেই নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে সকলের নজর কেড়েছেন। আজ সাফে গোল করে আরও একবার নিজের প্রতিভার জানান দিলেন মোরসালিন। ৯০ মিনিটে বিশ্বনাথের বানিয়ে দেওয়া বল বক্সের ডানপাশে পেয়ে একজনকে কাটিয়ে চোখ ধাঁধানো এক গোল করেন মোরসালিন। এর আগে ৬৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মোরসালিনের দুর্দান্ত শট কোনোমতে বাইরে বের করে দিয়ে মালদ্বীপকে বাঁচান গোলরক্ষক। ৮১ মিনিটে তারিক কাজী ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন। এর কিছুক্ষণ পর বল নিয়ে সময় নষ্ট করে হলুদ কার্ড দেখেন ইসা ফয়সাল।

শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। ২০ বছর পর সাফে মালদ্বীপক হারাল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এর আগে ২০০৩ সালে সাফে মালদ্বীপকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই আসরে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল। এখন ভুটান বাধা পার করতে পারলেই ২০০৯ সালের পর সাফে সেমিফাইনালে খেলার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।