১৫ শতাংশ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোবাকো

জানুয়ারি ১৪, ২০১৩

ঢাকা: সারা দেশের এক কোটির বেশি ধূমপায়ীর কাছ থেকে প্রতারণা করে প্রায় ১৫ শতাংশ অর্থ অতিরিক্ত আদায় করছে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোবাকো। এর একটি অংশ নিচ্ছে কোম্পানি আর বাকিটা নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘোষিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের সমপরিমাণ দাম কোম্পানিই রেখে দিচ্ছে। সে কারণে নির্ধারিত দামের দেয়ে বেশি নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অন্য পণ্যের মতো ব্রিটিশ-আমেরিকান টোবাকোর পণ্যেও যদি প্যাকেটে লেখা দামের চেয়ে কম নেওয়া হতো, তাহলে অতিরিক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হতো না।

ধূমপায়ীদের অভিযোগ, গোল্ডলিফ সিগারেটের একটি স্টিকে এক টাকারও বেশি নিচ্ছেন দোকানিরা। প্রতিটি স্টিকের দাম সর্বোচ্চ চার টাকার কম হলেও নেওয়া হচ্ছে পাঁচ টাকা। একইভাবে অন্য সিগারেটেও প্রায় কাছাকাছি বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে ধূমপায়ীদের।

সিগারেট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে, এক প্যাকেট গোল্ডলিফ সিগারেটের সরকারের কাছে কোম্পানির ঘোষিত সর্বোচ্চ খুচরো মূল্য ৭৯.৫০ টাকা। কোম্পানি থেকে হোলসেলার ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছে এক কার্টুন (১০ প্যাকেট) সিগারেট বিক্রি করা হয় ৭৮৯.৫০ টাকায়। এই হিসেবে প্রতি প্যাকেটের দাম পড়ে ৭৮.৯৫ টাকা। অর্থাৎ ৫৫ পয়সা লাভে প্রতি প্যাকেট সিগারেট বিক্রি করার কথা দোকানদারদের।

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ৭৮.৯৫ টাকা বিনিয়োগ করে মাত্র ৫৫ পয়সা লাভে কোনো ব্যবসায়ী এ ধরনের পণ্য বিক্রি করবেন না। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা অন্যান্য কোম্পানির পণ্যের লভ্যাংশের কাছাকাছি থেকে ঘোষিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করেন। তাই সর্বোচ্চ খুচরো মূল্য ৭৯.৫০ টাকা হলেও দাম রাখা হয় ৯০ টাকা থেকে ৯৫ টাকা পর্যন্ত। আর এক প্যাকেটের নিচে নিলে প্রতিটি স্টিক ৫ টাকা করে ১০০ টাকা বিক্রি করা হয়।

আদাবর এলাকার বাসিন্দা ধূমপায়ী তাইমুর রহমান জানান, প্রতি প্যাকেট গোল্ডলিফে সিগারেটে ঘোষিত মূল্যের চেয়ে ১০.৫০ টাকা থেকে ১৫.৫০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতি প্যাকেটে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১৩ দশমিক ১৪ থেকে ১৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি আদায় করা হচ্ছে।

বেনসন সিগারেটের ক্ষেত্রে হোলসেলার ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোম্পানি ১০ প্যকেটের দাম রাখে ১৪১৫ টাকা। এই হিসেবে প্রতি প্যাকেট বেনসন সিগারেটের দাম পড়ে ১৪১.৫০ টাকা। আর ঘোষিত খুচরা মূল্যও ১৪১.৫০ টাকা। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে বিক্রি করলে ব্যবসায়ীর কোন লাভই থাকবে না। সে কারণে ঘোষিত মূল্যের চেয়ে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা ধূমপায়ী রফিকুল ইসলাম পিন্টু জানান, প্রতি প্যাকেট বেনসন সিগারেট কিনতে হচ্ছে ১৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি প্যাকেটে ধূমপায়ীকে বেশি দিতে হচ্ছে ১৩.৫০ টাকা থেকে ১৮.৫০ টাকা। অর্থাৎ ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়া হচ্ছে ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।

ধূমপায়ীরা বলছেন, স্টারসহ অন্যান্য সিগারেটেও একইভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোবাকো। সবগুলো সিগারেট মিলিয়ে তারা ১৫ শতাংশেরও বেশি আদায় করছে।

মোহাম্মদপুরের সিগারেট দোকানদার মো. জাকির হোসেন জানান, ‘‘নতুন স্টার লাইট সিগারেট না নিলে গোল্ডলিফ ও বেনসন সিগারেট দেয় না। বাধ্য হয়েই যে দামে ক্রেতারা কিনবেন, সেই দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করি।’’

ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এক কার্টুনের কম নিলে সর্বোচ্চ খুচরা দামের চেয়েও বেশি নেয়। আবার বেশিও দেয় না গাড়ি থেকে। বাইরের দোকান থেকে কিনলে গোল্ডলিফ ৮২ থেকে ৮৫ টাকায় কিনে এনে একটা স্টিক ৫ টাকায় বিক্রি করি।’’

মোহাম্মদী হাউজিং লিমিটেডের ব্যবসায়ী শাহীন জানান, সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা দামে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোবাকোর সিগারেট কেউ বিক্রি করতে পারবেন না। কারণ, প্যাকেটের গায়ে লেখা দামের প্রায় সমান দামেই কিনতে হয়। বেশি দামে বিক্রি না করে কেউ ব্যবসা করতে পারবেন না।

বিভিন্ন বাজারের সিগারেট ব্যবসায়ীরা জানান, পালমল সিগারেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৭২ টাকা। বড় দোকান থেকে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় কিনে বিক্রি করতে হয়।

তাছাড়া কোম্পানির গাড়ি থেকেও প্যাকেটর গায়ে লেখা খুচরা মূল্যের সমান দাম রাখা হয়। সে কারণে কম দিতে পারেন না দোকানদারা।

সিগারেট ব্যবসায়ী ও ধুমপায়ীরা বলেন, দেশের ২ কোটি ১৯ লাখ ধূমপায়ীর মধ্যে প্রায় এক কোটি ক্রেতা ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর। এসব ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায় করা অর্থ কৌশলে আদায় করছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো।

ব্যবসায়ীদের কমিশন বা লভ্যাংশ কোম্পানিই তুলে নিয়ে জনগণের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের পথ সৃষ্টি করছে তারা। এতে একই বিনিয়োগে রাজস্ব না দিয়েই মোট ব্যবসার ১৫ শতাংশের বেশি অতিরিক্ত অর্থ প্রতারণা করে আদায় করছে। সারা দেশে প্রকাশ্যেই এই প্রতারণা চলছে, যেন দেখার কেউ নেই।

রাজধানী বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এবং সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে একই চিত্র পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোবাকোর এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন ম্যানেজার আনোয়ারুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ই-মেইলের মাধ্যমে এ বিষয়ে জানাতে চান। তার পরামর্শ মত গত ২২ অক্টোবর মেইল পাঠানো হলে তিনি লিখিত উত্তর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এর পর তিন দিনেও তার কোনো উত্তর পাওয়া না গেলে গত ২৫ অক্টোবর আবার মেইল করা তাকে। তার কোনো জবাব না পাওয়ায় শুক্রবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান অফিস এখন ছুটি। অফিস খুললে আগামী সপ্তাহে তিনি উত্তর দেবেন।

লেখক : এস এম আব্বাস, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.