চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করবে যন্ত্র

এপ্রিল ২৮, ২০১৩

robot-benders1ঢাকা জার্নাল: আর ঢালাও পণ্য নয়, ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী আলাদা রঙের, আলাদা ধরণের পণ্য তৈরি করে দেবে রোবোট৷ ভবিষ্যতের এই উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে জার্মানিতে চলছে গবেষণা৷

উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নতুন দিশা

ভবিষ্যতের উৎপাদন প্রক্রিয়ার একটা ঝলক পাওয়া যাচ্ছে আজই৷ চিপ-এর সাহায্যে বোতলই উৎপাদন প্রক্রিয়া চালাচ্ছে৷ বোতলই ঠিক করছে, তার মধ্যে কোন ডিটারজেন্ট ঢালা হবে, কোন ছিপি লাগানো হবে৷ ভবিষ্যতে এভাবেই উৎপাদন হবে৷ জার্মানির কাইজার্সলাউটার্ন শহরে এক গবেষণা কেন্দ্রে আজ সেই পরীক্ষা চলছে৷ যেমন একটি বোতল হলুদ ডিটারজেন্ট ও কালো ছিপি চেয়েছিল৷ ক্রেতা যা চায়, ঠিক তাই করছে সেটি৷

ক্রেতারা আজকাল বেশ খুঁতখুঁতে হয়ে পড়ছেন৷ তারা কম সময়ে একই পণ্যের নানা বৈচিত্র চাইছেন৷ অর্থাৎ দ্রুত উৎপাদন করতে হবে, পণ্য বেশি টেকসই করারও দরকার নেই৷ এটা শিল্পজগতের জন্য এক চ্যালেঞ্জ৷ তাদের এমন সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা আগের তুলনায় অনেক সহজে কাজের ধরন বদলে ফেলতে পারে৷

যন্ত্রের সাথে যন্ত্রের সংলাপ

মিউনিখে আউগুস্ট ভিলহেল্ম শেয়ার আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন৷ তিনি ছোট আকারে এমন এক উৎপাদন প্রক্রিয়া সাজিয়েছেন, যার অংশগুলি একে অপরের সঙ্গে কথা বলে৷ আধুনিক সফটওয়্যারের সাহায্যে যন্ত্র সত্যিই অন্য যন্ত্রের সঙ্গে কথা বলে৷ এই সফটওয়্যার একেবারে নতুন এক জগতের দরজা খুলে দিয়েছে৷ তিনি জানালেন, এখানে সবকিছু একে অপরের সাথে যুক্ত৷ মেশিন মেশিনের সঙ্গে কথা বলে, মেশিন পণ্যের সঙ্গে কথা বলে৷ পণ্যও অন্য পণ্যের সঙ্গে কথা বলে৷ সাপ্লায়ার তাদের সাপ্লায়ারের সঙ্গে কথা বলে৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবাই যুক্ত রয়েছে৷

গবেষণা কেন্দ্রে রোবোটকেও আরও সহজ করে তোলার চেষ্টা চলছে৷ কারণ ভবিষ্যতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে মানুষ ও যন্ত্রকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে৷ ফলে তারা নিজেদের মধ্যে সহজে কথাবার্তা বলতে না পারলে চলবে না৷ আউগুস্ট ভিলহেল্ম শেয়ার এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘পরিষেবা ক্ষেত্রে, বিশেষ করে লজিস্টিক্স-এ রোবটের ব্যবহার বাড়ছে৷ ভবিষ্যতে গাড়িতে মাল তোলার কাজের মতো প্রক্রিয়ায় মানুষ ও রোবোটের মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়বে বলে আমরা মনে করি৷”

‘মানুষের প্রয়োজন ফুরাবে না’

কাইজার্সলাউটার্ন-এও মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে গবেষণা চলছে৷ তবে মানুষের প্রয়োজন একেবারে ফুরিয়ে যাবে না৷ কী করতে হবে, সফটওয়্যার তা দেখিয়ে দেবে৷ অনেক কাজ খুব সাবধানে করতে হয়, তাতে বোধশক্তির দরকার হয়৷ সেখানে মানুষ ছাড়া চলবে না৷ সেখানকার বিজ্ঞানী কাটারিনা মুরা বললেন, ‘‘আমাদের ধারণা, কিছু পণ্য আর বড় আকারে উৎপাদন করা হবে না৷ উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রক্রিয়াগুলি ছোট বা মাঝারি আকারে ভাগ হয়ে যাবে৷ অটোম্যাটিক পদ্ধতিতে তা সম্ভব নয়৷ মানুষকেই হাতে করে সেই কাজ করতে হবে৷”

বড় আকারে উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে খুব পারদর্শী কর্মীর দরকার হবে৷ সফটওয়্যার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না থাকলে চলবেই না৷ নতুন নতুন পেশা তৈরি হবে৷ তবে মানুষ ছাড়া একেবারে খালি কারখানা কখনোই চলবে না৷ আউগুস্ট ভিলহেল্ম শেয়ার মনে করেন, ‘‘মানুষের জন্য অনেক কাজ বাকি থাকবে৷ তবে সেগুলি হবে উঁচু দরের কাজ৷ কম্পিউটার তো আর নিজে থেকে চলে না, মেশিনও নয়৷ কাজের পরিকল্পনা চাই, মেশিন তৈরি করা চাই৷ আমরা শিল্পক্ষেত্রের মধ্যেও আরও বেশি করে পরিষেবার দিকে ঝুঁকবো৷ যন্ত্রপাতি চালানোর কাজ ছেড়ে গবেষণা, উন্নতির মতো উঁচু দরের কাজ করবো৷”

নতুন এই সিস্টেমে ক্রেতারা একই পণ্য বলতে গেলে নিজেদের পছন্দমতো গড়ে নিতে পারবেন৷ খুঁটিনাটি পরিবর্তন চাইতে পারবেন৷ পরিমাণে কম চাইলেও তা উৎপাদন করা যাবে৷ এভাবে প্রতিযোগিতার বাজারে জার্মানি আগামী দশকগুলিতেও ভালোভাবে টিকে থাকবে৷

এসবি/ডিজি

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.