লাশ নয় তিন পায়ের পোস্ট মর্টেম

জানুয়ারি ১৪, ২০১৩

মানুষের লাশ! তাছাড়া আর পুলিশ এমন হন্তদন্ত হয়ে ছুটবে কেন। পুলিশ বলছে পাওয়া গেছে। কিন্তু কী পাওয়া গেছে? গুম হওয়া কারোর লাশ? নাকি লঞ্চডুবিতে মরেছে এমন কাউকে পাওয়া গেছে? দীনেশ দাশের মতো সড়ক দুর্ঘটনায় আবার কোনো সাংবাদিক মারা যায়নিতো? নাকি পা হারানো সাংবাদিক নিখিলের মতো কাউকে রাস্তায় পাওয়া গেছে? তাও নয়। মানুষের লাশও নয়, তাহলে পুলিশ কী পেলো?

সত্যি পাওয়া গেছে; একটি নয়, দু’টি নয় মানুষের তিন তিনটে পা। তাও আবার যেখানে সেখানে নয়, রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক কল্যাণপুরের ফুট ওভারব্রিজের নিচে। কেমন করে পা এলো রাজপথে। পা দিয়ে মানুষ হাঁটে। কিন্তু মানুষ ছাড়া তিনটি পা কিভাবে এলো কল্যাণপুর?

সকাল থেকেই পা নিয়ে নিয়ে পথচারীদের ভিড়ের অন্ত নেই। মানুষের পা বলে কথা। তবে উটকো ঝামেলার ভয়ে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে জানাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর মধ্যে বিষয়টি নজরে আসে মানিক নামের এক পথচারীর। তার পরিচিত এক সাংবাদিককে সঙ্গে সঙ্গেই সেল ফোনে জানায় মানুষের তিনটি পা রাজপথে পড়ে আছে।

গত ১৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টা। ফোন পেয়েই সাংবাদিকের দৌড়-ঝাপ শুরু। মোবাইল টিপেই দারুস সালাম থানায় ঘটনাটি জানতে চান তিনি। থানার ডিউটি অফিসার বিষয়টি নিয়ে কিছু জানেন বলে সাংবাদিককে জানালে শুরু হয় আরো রহস্য।

সাংবাদিকের কানে গেছে একটি নয়, দুটি নয় মানুষের তিন তিনটি পা রাজপথে! যে কোনোভাবেই হোক জানতে হবে পা এলো কোত্থেকে। আর পুলিশই বা জানে না কেনো। এমনিতেই মানুষ গুম হচ্ছে। গুমের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। যদিও বেশ কয়েক বছর থেকে রাজধানীতে মানুষের টুকরো লাশ দেখা যায়নি। হঠাৎ করে কী এমন ঘটলো যে দিনে-দুপুরে মানুষের টুকরো পা রাজপথে। একের পর এক সাংবাদিকদের কাছে খবর ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশও বসে নেই। শুরু হয়েছে পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা। খবর পেয়েই পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। উদ্ধার করেন মানুষের কেটে ফেলা তিনটে পা। এ সময়ের মধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলেও খরব ছড়িয়ে পড়ে। খোঁজ-খবর নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে বড় কর্তারা জানতে পারেন বিচলিত হবার কিছু নেই। অসুস্থ মানুষের কেটে ফেলা পা। হাসপাতাল থেকে রাস্তায় এসেছে।

এ ঘটনা জানাজানির পর পুলিশের বড় কর্তারা রেহাই পেলেও পা উদ্ধারকর্তা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পা ফেলে আর ফিরতে পারছেন না। কারণ হাসপাতাল থেকে ফেলে যাওয়া পা-ই হোক আর বর্জ্যের গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়া পা-ই হোক, মানুষের পা বলে কথা। হাসপাতাল থেকে কেটে ফেলা পা দেখলে যতই বোঝা যাক, পুলিশ কিভাবে তার সার্টিফিকেট দেবে। তার সে সার্টিফিকেট দেয়ার এখতিয়ার নেই। কারণ কেটেছে ডাক্তার। ডাক্তারকেই বলতে হবে, এটি কেটে ফেলা পা নাকি কোনো সন্ত্রাসী মানুষের পা কেটে ফেলে রেখে গেছে? তার সার্টিফিকেট দেবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তা ছাড়া রক্ষা নেই পুলিশের। পা তিনটি’র পোস্টমর্টেম ছাড়াতো পুলিশ যেতে পারেন না।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় নিরীক্ষা করে শেষ পর্যন্ত পুলিশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক অ্যান্ড টকসিকোলজি বিভাগে পাঠালেন পা তিনটি। পোস্টমর্টেমও হলো। আপাতত পুলিশের সাময়িক টেনশন দূর হলেও নতুন করে শুরু হলো ভোগান্তি। তিনদিনেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিপোর্ট দেননি। পা কিভাবে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হলো। তা ছাড়া সত্যিই যদি হাসপাতাল থেকে পা তিনটে রাজপথে চলে আসে, তাহলে কোন হাসপাতাল থেকে তা রাজপথে এলো তা জানা দরকার। কারো কোনো মাথা ব্যথা না থাকলেও দায় যখন পুলিশের ঘাড়ে। তখন পুলিশকেই খুঁজে বের করতে হবে, কোত্থেকে এ পা আমদানি হলো।

পা যদি হাসপাতাল থেকেই আসে, তাহলে এমন দায়িত্বহীন কাজ করা হলো কেনো। মানুষের পা কেনো এভাবে পড়ে থাকবে রাস্তায়। অসুস্থ রোগীর পা হলেতো আরেক বিপত্তি। এমনিতেই তো সারা দুনিয়াতে নানা জটিল রোগের ছড়াছড়ি। এরপরে অসুস্থ রোগীর পা। ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ফেলার তো নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাতে গুরুত্ব দিল না কেনো?

পুলিশের বড় কর্তার নির্দেশ, কোনো হাসপাতাল এমন দায়িত্বহীন কাজ করলে তা খুঁজে বের করো। দায়িত্ব দেয়া হলো দারুস সালাম থানার সাব ইন্সপেক্টর আবু বককর সিদ্দিককে। চারদিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও জানা গেলো না কোন হাসপাতাল এমন কাণ্ড করলো। তবে পুলিশ হাল ছাড়েনি। ফরেনসিক বিভাগ থেকে রিপোর্ট পাওয়া না গেলেও দফায় দফায় খোঁজ-খবর লাগিয়ে বের করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম জানালেন তিন পায়ের পাঁচালি এখনো শেষ হয়নি। ফরেনসিক রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ পাঁচালির শেষ হবে না। আর তাছাড়া এমন দায়িত্বহীন হাসপাতালকে তো খুঁজে বের করতেই হবে। তবে তো রক্ষা।

এস এম আববাস, ২০ শে জানুয়ারি, ২০১২।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.