বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে স্থগিত মামলা সচলের উদ্যোগ

জুন ১৪, ২০২৩

বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে থাকা স্থগিত মামলা সচলের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা এসব মামলার আসামি। জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতাও এসব মামলার আসামি হিসেবে রয়েছেন। উচ্চ আদালতের বিভিন্ন আদেশে এসব মামলার কোনও কোনোটির বিচার কার্যক্রম বা তদন্ত স্থগিত রয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে এই মামলাগুলো সচল করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধানদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে যোগাযোগ বা চিঠি পাঠিয়ে এসব মামলা সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া এ রকম ২৫টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি এই মামলাগুলো সচল করতে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা ও তদন্ত তদারক কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাদের উচ্চ আদালতে আবেদন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি সদর দফতরের উপ-কমিশনার (ক্রাইম) শচীন চাকমার সই করা এ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে বলা হয়েছে—‘আপনার বিভাগের আওতাধীন ফৌজদারি মামলার বিচার/তদন্ত কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনায় আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা মামলাগুলো চালু করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলো।’

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, যেসব মামলা আদালতের আদেশে স্থগিত আছে, সেই মামলাগুলোর তদন্ত শুরুর জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে আমরা চিঠি লিখেছি। আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছেও চিঠি দিয়েছি। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪০টি মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মামলা আছে। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক বিষয় নয়, যে মামলাগুলো আদালতের আদেশে তদন্ত স্থগিত আছে, সেসব মামলার তদন্ত বা বিচার চালুর বিষয়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সচল করতে উদ্যোগ নেওয়া ডিএমপির ২৫টি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলাই দায়ের করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। বাকি ১০টি মামলা দায়ের করা হয় ২০১৫ সালে। তদন্ত শুরু করতে চাওয়া সর্বোচ্চ ৬টি মামলা রয়েছে পল্টন থানায়। মুগদা ও খিলগাঁও থানায় ৪টি করে মোট ৮টি এবং যাত্রাবাড়ী থানায় ৩টি মামলা রয়েছে। এছাড়া রমনা, মতিঝিল, ডেমরা ও সবুজবাগ থানায় দুটি করে মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে ছয়টি মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসামি হিসেবে রয়েছেন।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত থাকা এই মামলার আসামিরা হচ্ছেন—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, বরকত উল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান ও সালাহউদ্দিন আহম্মেদসহ ৩৮ জন। এছাড়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চাওয়া ২০১৩ সালে রমনা থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় দাঙ্গা, সরকারি কর্মকর্তার কাজে বাধাদানের উদ্দেশ্যে আহত করা, সরকারি কর্মকর্তার ওপর বলপ্রয়োগ ও বিস্ফোরক আইনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই মামলায় আসামি হিসেবে রয়েছেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকত উল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপির শীর্ষ ১৬ জন নেতা।

সূত্র জানায়, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করা ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি মতিঝিল থানায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের একটি মামলায় জামায়াত নেতা ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ও শামীম সাঈদীসহ ১১১ জন আসামি রয়েছেন। জানা গেছে, আসামি পক্ষের আইনজীবীরা মামলাটি স্থগিত রাখার জন্য আবেদন করেছেন।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের কানে এসেছে যে সাড়ে ১৩শ’ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। মামলাগুলো নির্বাচনের আগেই শুনানি শেষ করে সাজা দিয়ে দেওয়া হবে। সবগুলোই রাজনৈতিক মামলা এবং আসামি হচ্ছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা। অত্যন্ত চমৎকার উদ্দেশ্য। বিএনপি নেতাদের যদি মামলায় আটকে ফেলা যায়, সাজা দিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তাদের (আওয়ামী লীগের) কথা মতো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারবে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) সংবিধান তৈরি করেছে। সেই সংবিধান অনুযায়ী, তারা একা একা খেলবেন, গোল দিয়ে যাবেন। প্রতিপক্ষ কেউ থাকবেন না।’

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, মামলার তদন্ত, চার্জশিট এবং বিচার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এখানে রাজনৈতিক কোনও উদ্দেশ্য নেই। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া সব মামলাই রাজনৈতিক না। দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত থাকা মামলার তদন্ত শুরু করায় আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মামলার বিচার শেষে আসলে বলা যাবে অভিযুক্ত আসামিরা দোষী না নির্দোষ।