কওমি ছাত্রদের শিক্ষার মূল স্রোতে আনার আহ্বান

জুন ১০, ২০২৩

কওমি শিক্ষাব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি করে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, জনশক্তি তৈরি করার জন্য শিক্ষার মূলস্রোতে তাদের নিয়ে আসতে হবে।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘সকল মাদ্রাসা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ পড়ে শোনান মাওলানা হাসান রফিক। আরও বক্তব্য রাখেন জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা এয়াকুব বাদশা।

অনুষ্ঠানে ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা: একজন ভুক্তভোগীর জবানবন্দী’ শীর্ষক নিবন্ধ উপস্থাপন করেন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন ফাহাদ।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা শুধু একটি লেখাপড়া নয়, লাইফসিস্টেম, এই লাইফসিস্টেমে যা দেওয়া হয়, সেটি তাদের মানতে হয়। আমার মনে হয় ১৬ বছর পর আমরা বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করবো— সে এই লাইফসিস্টেমে পড়াশোনা করতে চায় কিনা, যদি রাজি থাকে যাও পড়ো। কিন্তু তার আগে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া অমানবিক।’

সকল মাদ্রাসা শিক্ষা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন উল্লেখ করে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘যখন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হচ্ছিল, তখন আমরা মাদ্রাসার কমিটিকে নিয়ে এসেছিলাম, আমাদের শিক্ষানীতির মধ্যে আনার জন্য তারা রাজি হননি। তারা বলেছিলেন— আমাদের জন্য কিছু করতে হবে না, সরকার থেকে কোনও টাকা নেবো না। কিন্তু আমার মনে হয় একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অবশ্যই সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে, সরকারকে জানতে হবে। এটি বাইরের কোনও বিষয় নয়। তারা কী পড়াচ্ছে, সেটা যেন আমরা জানি।

কওমি শিক্ষার্থীর একটি চিঠির বিষয় তুলে ধরে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমরা জানতে পারলাম মাদ্রাসার (কওমি) ছাত্রের ইংরেজি পড়া নিষিদ্ধ। ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে পারবে না। বাংলাটা আগে পড়ানো হতো না, এখন কোনোভাবে পড়ানো হচ্ছে। মাদ্রাসার ছাত্র হলেই সে জঙ্গি হবে আমি বিশ্বাসী করি না। আমি এসব ছেলেদের জন্য গভীর ভালোবাসা অনুভব করি। আমার মনে হয় তাদের জীবনটাকে আনন্দময় করা প্রয়োজন। যারা এখান থেকে পাস করে বেরুচ্ছে তারা কিন্তু ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) হিসেবে বেরুচ্ছে না। তাদের ম্যানপাওয়ার করার জন্য মেইনস্ট্রিম লেখাপড়ায় নিয়ে আসতে হবে। যেহেতু দরিদ্র বাচ্চা, বেশিরভাগ বাবা-মা বিনা পয়সায় পড়াতে পারবে সে জন্য দেয়। কাজেই আমি মনে করি শিক্ষা পরিবার থেকে তাদের জন্য রেসিডেনশিয়াল স্কুল তৈরি করে দেওয়া দরকার। তাছাড়া এটি আসলে একটি ডে-কেয়ার সেন্টার। যেখানে যেখানে অনেক বড় বড় গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি আছে, যেখানে মায়েরা কাজ করে, সেখানে কওমি মাদ্রাসা তৈরি হয়েছে, মায়েরা তাদের বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য সেই কওমি মাদ্রাসায় দেয়। এটির সঙ্গে ইকোনমিক ব্যাপার জড়িত আছে। আমি বলবো— এসব ব্যাপার পর্যালোচনা করে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। কারণ বিশাল একটি ম্যানপাওয়ারকে যেন আমাদের দেশের মূল ম্যানপাওয়ারে নিয়ে আসতে পারি।