‘ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে হবে’

মে ২৩, ২০২৩

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেটের বিশাল জগতে শিশুদের নিরাপদ রাখতে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রযুক্তি সম্পর্কে অন্ধকারে না রেখে ছোটবেলা থেকে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রযুক্তির ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সোমবার (২২ মে) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সম্মেলন কক্ষে শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত সংক্রান্ত এক কর্মশালায় এমন মন্তব্য করেন বক্তারা। বিটিআরসির সহায়তায় সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ তথা সিসিমপুর আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।

অনুষ্ঠানে ইন্টারনেটে বাংলাদেশে শিশুদের সার্বিক অবস্থা নিয়ে একটি গবেষণা তথ্য তুলে ধরা হয়। সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের উদ্যোগে গবেষণাটি করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়।

গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেটে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের কনটেন্ট নেই বললেই চলে, ফলে শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানহীন, ঝুঁকিপূর্ণ এবং তাদের জন্য উপযুক্ত নয় এমন কনটেন্ট দেখে। শিশুদের ইন্টারনেটে নিরাপদ রাখতে তাদের জন্য উপযোগী শিক্ষণীয় ও মানসম্পন্ন কনটেন্ট বাড়ানোর বিষয়টি জোর দেওয়া হয় গবেষণায়।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রি. জে. মো. নাসিম পারভেজ বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ খাতে লাইসেন্স প্রদানের পাশাপাশি নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতেও কাজ করছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে বিটিআরসি যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে এবং প্রতি তিনমাস পর পর ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সভা আহ্বানের মাধ্যমে সাইবার জগতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২৩ প্রতিবেদন অনুযায়ী সাইবার অপরাধের বেশি শিকার নারী ও শিশুরা এবং ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বিটিআরসিতে সাইবার সিকিউরিটি সেল চালু করা হয়েছে। সেলের মাধ্যমে বিভিন্ন সাইবার অপরাধে শিকার ভুক্তভোগীদের সহায়তা করা হয়।

ভুক্তভোগী অধিকাংশ নারী-শিশু লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইএসপি অপারেটররা বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সময় অভিভাবকদের প্যারেন্টাল গাইডলাইনস প্রদান করলে সচেতনতা বাড়বে।

অনুষ্ঠানে লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন বলেন, শিশুদের মানসিক উন্নয়ন ও সচেতন করতে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা জরুরি। শিশুরা ক্রমশ ইন্টারনেট জগতে আসক্ত হয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে বিটিআরসি ওটিটি গাইডলাইনস প্রণয়নে কাজ করছে। শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার দায় আমাদের সবার।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশে প্রণীত গাইডলাইন অনুসরণের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়োজিত আইএসপি, মোবাইল অপারেটরসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

কমিশনের অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী বলেন, প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সাইবার জগতে অপরাধের ধরনও বদলেছে। শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে গবেষণার মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বাস্তব পরিস্থিতি তুলে আনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সাইবার জগত নিরাপদ রাখতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সাইবার জগতের বিশাল পরিসরে শিশুদের নিরাপদ রাখতে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। সেফ ইন্টারনেট ফর আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে সিসিমপুর সেই কাজটি করছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামীদিন সারা পৃথিবী প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই শিশু-কিশোরদের সাইবার জগত সর্ম্পকে জানার পথকে অবরুদ্ধ না রেখে প্রযুক্তিজ্ঞান অর্জনের পথ খোলা রাখতে হবে।