নামিদামি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন করছে: শিক্ষা উপমন্ত্রী

মে ২২, ২০২৩

‘নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৃজনশীল কাজে নেই। ভালো ফলাফলের শিক্ষার্থীদের তারা মানসিক নির্যাতন করছে। অভিভাবক, শিক্ষক সবাই মিলে বলা যায় এক প্রকার মানসিক নির্যাতন করছে।’ মঙ্গলবার (২৩ মে) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় দিবসে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ কথা বলেন।

উপমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো সৃজনশীল কাজে নেই। বিদ্যালয়গুলোয় অভিভাবক, শিক্ষক সবাই মিলে বলা যায় এক প্রকার মানসিক নির্যাতন করছে। কারণ, পড়াশোনার বাইরে তাদের কিছু করতে দিচ্ছি না, দেই না। অভিভাবকরাও এখানে বেশি দায়ী। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চাপ দেওয়া হয় ফলাফলটা খুব ভালো করতে হবে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে অথবা সরকারি কর্মকর্তা হতে হবে। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে। এই প্রেসারে শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন করে দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু এই শহরগুলোর বাইরে আমরা যাচ্ছি, সেখানে কিন্তু শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত চিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছে। তারা অনেক সৃষ্টিশীল কাজ করছে। দেখা যাবে এই শিক্ষার্থীরাই দেশের ভবিষ্যৎ উন্নত করবে। আর যাদের মানসিক নির্যাতন করে শুধু ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে, তাদের বেশি সংখ্যক একসময় দেশ থেকে পালিয়েই যাবে। বিদেশে পড়তে গেলেও তারা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাবে। আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে সমাজের উপকার করার সক্ষমতা তাদের কমে যাবে। কারণ, সমাজ থেকে তাকে কিছু দেওয়া হয়নি, শুধু ফলাফল চাওয়া হয়েছে। এই ফলাফল নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আমাদের সন্তানরা সব কাজে এগিয়ে যাবে, এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।’

পৃথিবীর কোনও দেশে ১৩ বছর, ১৪ বছর ১৫ বছরে কাউকে মেধাবী শিক্ষার্থী বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীকে বলা হয় আমার ছেলেটা খুব মেধাবী, তাই তাকে এই স্কুলে (নামিদামি) ভর্তি করানো উচিত, তাই সরকারি মাধ্যমিকে আসবে না। যখন শিক্ষা অর্জনের সময় মেধা অর্জনের সময় তখন তাকে মেধাবীর তকমা দিয়ে নির্যাতনের মধ্যে ফেলছি। শিক্ষা নেওয়া এবং মূল্যবোধ শেখার কোনও সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি না। তাদের সৃজনশীল কোনও কাজ করতে দিচ্ছি না।’

এই পরিস্থিতি উত্তোরণে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান শিক্ষা উপমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের কাছে সহযোগিতা চাই-মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ক্রেইজ থেকে বেরিয়ে আসতে আপনাদের সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন। ফলাফল নয়, সত্যিকারের শিক্ষার পেতে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছে।’

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার আহ্বান

শিক্ষকদের আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘গতানুগতিক শিক্ষার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আটকে না রেখে তাদের উন্মুক্ত চিন্তা করার সুযোগ করে দেওয়া, জীবনমুখী করার জন্য তাদের সৃজনশীল করা, সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতে যাতে সেটা হয় সেটায় সচেষ্ট থাকতে হবে। আমাদের মাদ্রাসাগুলোতেও ইসলামি সংস্কৃতি ও বাংলাদেশি এবং সব পর্যায়ের সংস্কৃতি চর্চা প্রয়োজন। সৃজনশীল কাজে তাদের সম্পৃক্ততা অবশ্যই প্রয়োজন।’