অতিমারিতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বেড়েছে: দীপু মনি

মে ১৭, ২০২৩

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, অতিমারির সময় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির ব্যবহার শিখেছে। নিজে নিজে শেখার ক্ষমতা বেড়েছে। ক্ষতির পাশাপাশি আমাদের অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘লার্নিং লস’ নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় সম্পন্ন করা হয় এই গবেষণা কাজ। গবেষণা কাজে ১৮ হাজার ৮৩৮ জন প্রাথমিক শিক্ষার্থীর ওপর অভীক্ষা পরিচালিত হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর মতামত দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বৈশ্বিক অতিমারিতে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদেরও হয়েছে। শিক্ষায় এর প্রভাব পড়েছে। তবে লার্নিং লস বা গ্যাপ পূরণে সময় লাগবে। একটি বা দুটি শিক্ষাবর্ষে তা পূরণ হবে তেমন নয়। আমরা তা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। করোনাকালে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে আমরা ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থীকে লেখাপড়ায় যুক্ত করতে পরেছি। অতিমারির কারণে শিক্ষার্থীদের নিজে নিজে শেখার ক্ষমতা বেড়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার শিখেছে। করোনায় ক্ষতির পাশাপাশি প্রাপ্তিও আছে। অনেক শিক্ষার্থী নতুন নতুন জিনিস শিখেছে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, অতিমারির সময়ে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বেড়েছে। আমাদের হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। বিপরীতে আশাবাদী হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পথে আমরা স্মার্ট শিক্ষার ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’

শিক্ষা ও মানবসম্পদ মিলিয়ে বাজেট তিন ভাগের কাছাকাছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটাকে বাড়াতে হবে। টাকার অঙ্কে হলে ২০০৭ সালে বিএনপি-জামায়াত আমলের শেষ বছরে আমাদের সারা দেশের বাজেট ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। এখন আমাদের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বাজেট প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। সেই অর্থে বিনিয়োগ অনেক বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগ টাকার অঙ্কে কত হচ্ছে তার চেয়েও বড় বিষয় হলো খাদ্য, পুষ্টি, বিদ্যুৎ, আইসিটি ও যোগাযোগে যে বিনিয়োগ হচ্ছে, এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিভিন্ন রকম প্রভাব শিক্ষার ওপর আছে। তাছাড়া শুধু বাজেট বরাদ্দ নয়, টাকা নয়, আমার অনেক টাকা আছে, কারিকুলাম ভালো না– আউটকাম কি ভালো হবে? অনেক টাকা আছে, শিক্ষক ভালো না– তাহলে আউটকাম পাবো না। টাকা আছে টেকনোলজি ব্যবহার করতে পারছি না। আবার টাকাও আছে, সবকিছু আছে, সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না– তাহলেও হবে না।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এখন ভালো একটি শিক্ষাক্রম হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। আমরা এখন যেসব কাজ করছি সেগুলো শেষ হলে বাজেট বাড়বে। শিক্ষা একটি মেগা প্রজেক্ট হবে।’

দীপু মনি বলেন, ‘আমরা এখন চাচ্ছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক বেশি ক্লাব গঠন করতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্লাব বেজ হবে। দাবা ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, ডিবিটিং ক্লাব, অন্যান্য আরও ক্লাব হবে না কেন? খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হবে। এখন রোবোটিক ক্লাব হচ্ছে, বিভিন্ন কিছু হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো করছে, তাদের আর একটু এগিয়ে দিতে হবে। শিক্ষকদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা যত ভালো করতে পারবো, আমরা তত এগিয়ে যাবো।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (প্রাথমিক) ড. একেএম রেজাউল হাসান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন– প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর চার্লিস হোয়াইটলি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোলেমান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।