সুদানে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়লেও থামছে না লড়াই

মে ১, ২০২৩

সুদানের প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক বাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে নতুন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চলমান লড়াই শেষ পর্যন্ত সর্বাত্মক সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

১৫ এপ্রিল সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধা-সামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলা ক্ষমতার লড়াই প্রকাশ্যে চলে আসে। দুই বাহিনীর দ্বন্দ্বে এ পর্যন্ত শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

দুই পক্ষই বলছে, আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি যা রবিবার মধ্যরাতে শেষ হওয়ার কথা ছিল তা আরও ৭২ ঘণ্টার জন্য বাড়ানো হবে।

আরএসএফ বলেছিল আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় আহ্বানে তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে। সেনাবাহিনী বলছে, ‘বিদ্রোহীরা’ যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে এমনটাই তারা প্রত্যাশা করে। তবে তাদের বিশ্বাস, ‘বিদ্রোহীরা’ তা মানবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এর আগে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, দুই পক্ষই তা অমান্য করে লড়াই চালিয়ে যায়।

আল জাজিরার প্রতিবেদক হিবা মরগান খার্তুম থেকে বলেছেন, সেখানকার মানুষ যুদ্ধবিরতির সময় বাড়ানোর ঘোষণায় খুব একটা প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

তিনি বলেন, ‘ খার্তুমের বাসিন্দারা দেখেছে আগের যুদ্ধবিরতি কীভাবে কার্যকর হয়েছে। তারা সেনাবাহিনীর একের পর এক বিমান হামলা ও র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের আর্টিলারি স্ট্রাইক দেখেছে। এ কারণে তাদের অনেকেই বলছেন এই যুদ্ধবিরতিও আগের যুদ্ধবিরতির মতোই শেষ হতে পারে’।

রাজধানী খার্তুমের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেনাবাহিনী আবাসিক এলাকায় আটকে থাকা আরএসএফ বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই করছে। রবিবার সকালে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকলেও রয়টার্সের এক সাংবাদিক বলেছেন, শনিবার সন্ধ্যায় শহরের কেন্দ্রের কাছে ভারী সংঘর্ষের কথা শোনা গেছে।

সেনাবাহিনী রবিবার জানায়, তারা পশ্চিম দিক থেকে খার্তুমের দিকে যাওয়া আরএসএফ-এর বহরগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আরএসএফ বলছে, খার্তুম প্রদেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের অবস্থানে হামলার জন্য আর্টিলারি এবং যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে সেনাবাহিনী।

রয়টার্স স্বাধীনভাবে এ দাবিগুলো যাচাই করতে পারেনি।

 

‘সরাসরি কোনও আলোচনা নয়’

খার্তুমে এখন পর্যন্ত লড়াইয়ে আরএসএফ বাহিনীকে দেখা গেছে। কারণ সেনাবাহিনী ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান থেকে তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

সংঘাতের মুখে হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেড়িয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে পালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সুদানের সরকার ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে যেতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর সুদান ভেঙে পড়লে তার প্রভাবে গোটা অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

সুদানের সাংবাদিক মোহাম্মদ আলামিন আহমেদ খার্তুম থেকে আল জাজিরাকে জানান, সেখানকার লোকদের পালিয়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘গোলাবর্ষণ বা বিমান হামলার কারণে যে বেসামরিক লোকজন পালাচ্ছে তা কিন্তু না। বেসামরিক লোকদের রাস্তায় এমনকি তাদের ঘরের ভেতরেও নির্যাতন করা হচ্ছে। এ কারণেই সাধারণ মানুষ বেশি ভয় পাচ্ছে’।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মার্কিন সরকার এবং বহুজাতিক অংশীদাররা সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় এক হাজার আমেরিকানকে সুদান ছেড়ে যেতে সহায়তা করেছে।

যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে, তারা সোমবার পূর্ব লোহিত সাগর উপকূলের পোর্ট সুদান থেকে একটি অতিরিক্ত উদ্ধার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। অন্যদিকে কানাডা বলছে, বিপজ্জনক অবস্থার কারণে তাদের উদ্ধার ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

 

নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ছবি: রয়টার্স
নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ছবি: রয়টার্স

সুদানে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ভলকার পার্থেস পোর্ট সুদানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনও সরাসরি আলোচনা হয়নি। তবে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। এ জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেতারা কাজ করছেন।

সেনাবাহিনীর নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেছেন, তিনি আরএসএফ প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর সঙ্গে কখনই আলোচনায় বসবেন না। আর আরএসএফ প্রধান বলেছেন, সেনাবাহিনী সংঘাত বন্ধ করার পরই তিনি তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

 

দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপট

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে জেনারেলদের একটি কাউন্সিল সুদান পরিচালনা করছে। মূলত কাউন্সিলের শীর্ষ দুই সামরিক নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালোর মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। জেনারেল আল-বুরহান সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। সে কারণে তিনিই দেশটির প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে দেশটির উপ-নেতা জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো আধা-সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফের কমান্ডার।

কিছুদিন আগেও তাদের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতা থেকে সরাতে তারা দুজন এক হয়ে কাজ করেছেন। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সামনের দিনগুলোয় কীভাবে দেশ পরিচালিত হবে তা নিয়েই এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। সুদানের ভবিষ্যৎ এবং দেশটির বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবনা নিয়ে তারা ভিন্নমত পোষন করেন।

এ লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫২৮ জন নিহত এবং ৪ হাজার ৫৯৯ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সুদানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা