রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পোয়াবারো সৌদি-আমিরাতের

এপ্রিল ১৮, ২০২৩

ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে রুশ জ্বালানি পণ্য থেকে ইউরোপ মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার পর হন্য হয়ে নতুন বাজার খুঁজছিল মস্কো। অনুসন্ধানে এক অপ্রত্যাশিত বাজার পেয়ে যায় তারা। সেটি হলো তেলসমৃদ্ধ পারস্য উপসাগরীয় কয়েকটি দেশ।

ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় নিয়মিত ক্রেতাদের অনেকাংশকে হারায় রাশিয়া। নতুন ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে রাশিয়া সস্তায় তেল বিক্রি শুরু করে। সুযোগ পেয়ে তা হাতছাড়া করেনি মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। তেল কোম্পানির কর্মকর্তা ও এই খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশ দুটি সস্তায় তেল পাওয়ার সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগায়।

মার্কিন আপত্তির পরও উপসাগরীয় দেশগুলো ছাড়মূল্যে পাওয়া রুশ জ্বালানি পণ্য কিনে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে কাজে লাগাচ্ছে। এই ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে নিজেদের প্রয়োজন ও শোধন কাজ। আর নিজেদের উৎপাদিত তেলজাত পণ্য রফতানি করছে বিভিন্ন দেশে। এতে তাদের মুনাফা বাড়ছে।

যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে খুব সহজে জ্বালানি পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না রাশিয়া। এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। রুশ জ্বালানি পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষণস্থল ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দেশটি।

এই বিপরীত ধারা, যে ধারায় বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো আরও বেশি কিনতে আগ্রহী, এতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার একটি অপ্রত্যাশিত পরিণতি উঠে আসছে। একই সঙ্গে এতে আরও উঠে আসছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ম্লান হচ্ছে।

কেপলার-এর তথ্য অনুসারে, গত বছরের তুলনায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে রুশ তেলের রফতানি তিনগুণ বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ব্যারেল। একই সময়ে এশিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র সিঙ্গাপুরে রুশ তেলের রফতানি মাত্র ১৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ ব্যারেল।

বাজারের উপাত্ত সরবরাহকারী আর্গাস মিডিয়া’র তথ্য অনুসারে, আমিরাতের প্রধান তেল মজুত কেন্দ্রে প্রতি দশটি ব্যারেল গ্যাস-তেলের একটি হলো রাশিয়ার।

কেপলার বলছে, প্রতিদিন সৌদি আরবে ১ লাখ ব্যারেল তেল পাঠাচ্ছে রাশিয়া। যুদ্ধের আগের সময়ে রুশ তেল-গ্যাস সৌদি আরবে আসতো না বললেই চলে। এই হিসাবে বছরে ৩ কোটি ৬০ লাখ ব্যারেল রুশ তেল আসছে সৌদিতে।

সৌদি ও আমিরাতিদের রুশ তেল ও জ্বালানি পণ্য কেনার বিষয়টি মার্কিন কর্মকর্তাদের নজরে এসেছে। তারা বলছেন, এর ফলে ক্রেমলিনের যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের পথ বন্ধে পশ্চিমা উদ্যোগ খর্ব হবে।

মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ব্রায়ান নেলসন ফেব্রুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্ক যাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে তা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন।

এই বিষয়ে সৌদি আরবের রাজদরবার ও মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। আমিরাতের এক কর্মকর্তা বলেছেন, দেশটি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে। আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে উন্মুক্ত ও সততার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিশ্লেষকরা বলছেন, রুশ তেল কেনা বন্ধ করেছে উপসাগরীয় দেশগুলো, এমন কোনও ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল