দুর্দান্ত বোলিংয়ে আইরিশদের হারাল বাংলাদেশ

মার্চ ২৭, ২০২৩

সংক্ষিপ্ত স্কোর: আয়ারল্যান্ড: ৮ ওভারে ৮১/৫ (ক্যাম্ফার ১*, ডিলানি ২১*; টেক্টর ১৯, ডকরেল ০, স্টার্লিং ১৭, টাকার ২, অ্যাডায়ার ১৩; লক্ষ্য ৮ ওভারে ১০৪)

বাংলাদেশ ১৯.২ ওভারে ২০৭/৫ ( মিরাজ ৪*, সাকিব ২০*; শামীম হোসেন ৩০, লিটন ৪৭, রনি ৬৭)

ফল: বাংলাদেশ ২২ রানে জয়ী (ডি/এল মেথডে)

প্রথম ২ ওভারে ৩২ রান তোলার পর হাসান মাহমুদের তোপে ধাক্কা খায় আয়ারল্যান্ড। তৃতীয় ওভারে এই পেসার উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন রস অ্যাডায়ারকে ফিরিয়ে। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদ তিন উইকেট তুলে নেন। ৪ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৪ রান করার পর পরের দুই ওভারে ঝড় তোলেন ডিলানি ও টেক্টর। পঞ্চম ওভারে হাসানের বল থেকে ১৬ রান তুলে নেন তারা। ষষ্ঠ ও সপ্তম ওভারে সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৫ ও ৭ রান আসে। শেষ ওভারে ৩২ রান দরকার ছিল আইরিশদের। প্রথম বলেই তাসকিন ফেরান টেক্টরকে (১৯)। মেহেদী হাসান মিরাজ দুর্দান্ত ক্যাচ নেন। বাকি পাঁচ বলে ৯ রান আসে। বাংলাদেশে জেতে ২২ রানে। তাসকিন ২ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। ৫ উইকেটে ৮১ রানে থামে আইরিশরা।

৩৮ বলে ৬৭ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন বাংলাদেশের ওপেনার রনি তালুকদার। লিটন দাসের সঙ্গে তার ৪৩ বলে ৯১ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। তারপর শামীম ও সাকিবের ক্যামিওতে তারা টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেটে ২০৭ রানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ করে।

এক ওভারে তাসকিনের তিন উইকেট

চতুর্থ ওভারে বল হাতে নিয়েই সফল তাসকিন আহমেদ। প্রথম বলেই লোরকান টাকারকে ২ রানে বোল্ড করলেন ডানহাতি পেসার। ৩৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারালো আয়ারল্যান্ড। এর আগে ৩২ রানে প্রথম উইকেট তুলেছিল বাংলাদেশ। একই ওভারের চতুর্থ বলে পল স্টার্লিংকে বোল্ড করেন তিনি। পরের বলে নতুন ব্যাটার জর্জ ডকরেলকে ফেরান তাসকিন। ক্যাচ নেন শামীম হোসেন।

 

৮ ওভারে ১০৪ রানের লক্ষ্যে নেমে পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার ২ ওভারে ৩২ রান তুলে ফেলেন। তৃতীয় ওভারে বল হাতে নেন হাসান মাহমুদ। প্রথম তিন বল ডট দেওয়ার পর চতুর্থ বলে অ্যাডায়ারকে (১৩) বোল্ড করেন তিনি।

 

বৃষ্টির কারণে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৭ রান করে। বৃষ্টির কারণে বাকি ৪ বল আর খেলা হয়নি। দুই ঘণ্টা পর খেলা শুরু হয়। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৮ ওভারে আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১০৪ রান। মাঠে নেমেই ঝড় তুলেছে দুই ওপেনার পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার। ২ ওভারে ৩২ রান তুলেছেন তারা।

বৃষ্টিতে ২০৭ রানেই শেষ বাংলাদেশের ইনিংস

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও আগ্রাসী মন্ত্রে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বড় স্কোরের দেখা পেয়েছে। ১৯.২ ওভারে দলীয় ২০৭ রানের সময় বৃষ্টি নামলে পরে সেখানেই শেষ হয়েছে স্বাগতিকদের ইনিংস। বৃষ্টিতে আপাতত খেলা বন্ধ রয়েছে।

অবশ্য লিটন-রনি যেভাবে বিস্ফোরক গতিতে ব্যাট করছিলেন, তাদের জুটি টিকে থাকলে স্কোর আরও বেশি হতে পারতো। লিটন ৪৭ রানে আউট হওয়ার পর আরও বেশি ঝড় তুলে খেলেছেন রনি। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পাওয়া এই ব্যাটার আউট হতেই কিছুটা ছন্দ হারায় তারা। তার পরেও শামীম, হৃদয় ও সাকিবের ব্যাটিং স্কোর দুইশো ছাড়াতে ভূমিকা রাখে। যার মূল ভিতটাই গড়ে দিয়েছে লিটন-রনির ৯১ রানের বিস্ফোরক ওপেনিং জুটি।

আইরিশদের হয়ে ৪৫ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন ক্রেইগ ইয়াং। একটি করে নিয়েছেন হ্যারি টেক্টর, মার্ক অ্যাডায়ার, গ্রাহাম হিউম।

 

শামীমের বিদায়ের পর রানের গতি বাড়াতে চেষ্টা করছিলেন সাকিব-হৃদয় জুটি। হৃদয়ের ছক্কায় ১৯তম ওভারে স্কোর দুইশোও ছাড়িয়েছে। তবে একই ওভারে হৃদয়কে আর ঝড় তুলতে দেননি মার্ক অ্যাডায়ার। ৮ বলে ১ ছক্কায় ১৩ রান করা হৃদয় ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন।

 

রনির বিদায়ের পর রানের গতি কমে গিয়েছিল। শামীম হোসেন অনেকক্ষণ ক্রিজে থাকলেও গতি বাড়াতে পারছিলেন না। মার্ক অ্যাডায়ারের ১৭তম ওভারে মারমুখী হতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তাতে ২০ বলে ৩০ রানে ফিরেছেন শামীম। তার ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ১ ছয়ের মার।

 

লিটনের আউটে বিস্ফোরক ওপেনিং জুটি ভাঙলেও নিজ লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন রনি। তার ব্যাটেই স্কোর দেড়শো ছাড়িয়েছে। তবে ইনিংসটাকে বেশি লম্বা করতে পারলেন না। ১৪তম ওভারে তাকে বোল্ড করেছেন হিউম। ফেরার আগে ৩৮ বলে ৬৭ রান করেছেন রনি। তার টর্নেডো ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ৩টি ছয়ের মার।

 

লিটনের বিদায়ের পর রনিকে খুব বেশি সঙ্গ দিতে পারেননি শান্ত। টেক্টরের বলে ১৪ রানে স্টাম্পড হয়ে ফিরেছেন তিনি। তার ১৩ বলের ইনিংসে ছিল একটি ছয়।

 

লিটন ব্যর্থ হলেও আরেক ওপেনার রনি তালুকদার ঠিকই ফিফটি তুলে নিয়েছেন ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। নবম ওভারে ২৪ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। একই ওভারে বাংলাদেশের স্কোরও ছাড়ায় একশ।

 

টস হেরে ব্যাট করতে নামলেও ব্যাটিংয়ে আইরিশদের ওপর শাসনই করেছে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার প্রভাব বিস্তারী ব্যাটিংয়ে ৬ ওভারেই যোগ করেছেন রেকর্ড ৮১ রান। সপ্তম ওভারেও তারা সেই আগ্রাসন বজায় রেখেছিলেন। অষ্টম ওভারে ৯১ রানের বিস্ফোরক জুটি ভাঙে লিটনের বিদায়ে। ইয়াংয়ের বলে ৪৭ রানে ব্যাট করতে থাকা লিটন মারতে গিয়ে স্টার্লিংয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। তাতে ৩ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। লিটনের ২৩ বলের বিস্ফোরক ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ৩টি ছয়।

 

শুরুতে অফস্পিনার হ্যারি টেক্টরকে দিয়ে বোলিংয়ের সূচনা করে আয়ারল্যান্ড। কিন্তু লিটন দাস আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে ছক্কা মেরে নিজেদের ইনটেন্ট সম্পর্কে প্রতিপক্ষকে জানিয়ে দেন শুরুর ওভারেই। পরের ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারকেও ছাড় দেননি রনি তালুকদার। ছক্কা মেরে আগ্রাসী সূচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। তার পর তো হাত খুলে মেরেছেন দুই ওপেনার। ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে আইরিশদের ওপর চেপে বসেন দুজনেই। অবস্থা এমন দাঁড়ায় ৫ ওভারে ৫ ভিন্ন বোলার আক্রমণে এনেও তারা রানের গতি কমাতে পারেনি। তাতে দুই ওপেনারের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। যোগ করে ৮১ রান। সর্বশেষ নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৪ রান এসেছিল।

 

১১ বছর পর দ্বিপাক্ষিক সিরিজে টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি আয়ার‌ল্যান্ড-বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে বোলিং নিয়েছে আইরিশরা। তাতে সিরিজে টানা চার ম্যাচে টস জয়ের ভাগ্য হয়েছে সফরকারীদের।

ওয়ানডে সিরিজ ২-০ তে নিশ্চিত করায় সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটেও যে স্বাগতিকদের আধিপত্য থাকবে সেটা নিশ্চিত। তাছাড়া সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও বাংলাদেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ডকে হারানোর আত্মবিশ্বাস থাকায় এই ফরম্যাটে ইতিবাচক কিছু করতে মুখিয়ে আয়ারল্যান্ড।

যদিও শক্তির বিচারে বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে। দুই দলের লড়াইয়েও এগিয়ে স্বাগতিক দল। এখন পর্যন্ত পাঁচ মুখোমুখিতে বাংলাদেশের জয় তিনটিতে। আয়ারল্যান্ডের একটি। ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জয়ের পর আইরিশরা এ ফরম্যাটে বাংলাদেশকে আর হারাতে পারেনি।

২০১২ সালে দুই দলের হওয়া সর্বশেষ সিরিজটিতেও জয় ছিল বাংলাদেশের। সেবার বাংলাদেশের কাছে আইরিশ দল ধবলধোলাই হয়েছিল।

তিন পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে নেমেছে বাংলাদেশ

সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের একাদশ থেকে একটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। বামহাতি তানভীর ইসলামের জায়গায় এসেছেন আরেক বামহতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।

বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, রনি তালুকদার, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদ।

আয়ারল্যান্ড একাদশ: পল স্টার্লিং (অধিনায়ক), রস অ্যাডয়ার, লরকান টাকার, হ্যারি টেক্টর, কার্টিস ক্যাম্ফার, জর্জ ডকরেল, গ্যারেথ ডেলানি, মার্ক অ্যাডায়ার, ক্রেইগ ইয়াং, গ্রাহাম হিউম ও বেন হোয়াইট।