দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৬৪ শতাংশ কিশোরী যৌন নিপীড়নের শিকার

অক্টোবর ২৮, ২০২২

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ কিশোরী এবং ৫৬ শতাংশ কিশোর যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। শহরের শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা গ্রামীণ শিশুদের চেয়ে দেড় গুণেরও বেশি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষণায় এ তথ্য ওঠে আসে।

বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের ডা. মারিয়াম সালওয়া তার বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের মধ্যে অনলাইন যৌন নির্যাতন শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সমকালীন মিশ্র পদ্ধতির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ কিশোরী এবং ৫৬ শতাংশ কিশোর যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। শহরের শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা গ্রামীণ শিশুদের চেয়ে দেড়গুণেরও বেশি। আবার যেসব শিশু ইলেকট্রনিকস ডিভাইস বেশি ব্যবহার করে এবং যারা ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং চ্যাটরুমের মতো যোগাযোগ মাধ্যম বেশি ব্যবহার করে তাদের অনলাইন যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের ৫০ শতাংশের বেশি সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে জানে না। ইন্টারনেটের অপর্যাপ্ত ব্যবহারিক জ্ঞানকে অনলাইন শিশু যৌন নির্যাতনের মূল কারণ।

তিনি বলেন, গবেষণাকালে শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনটি বিষয় প্রতীয়মাণ হয়েছে। প্রথমত, ইন্টারনেটের ব্যবহার নিয়ে বাবা-মায়ের জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের অভাব। দ্বিতীয়ত, যৌন নির্যাতন সম্পর্কিত ঘটনাগুলো চিহ্নিত করা এবং পরিণতি সম্পর্কে ধারণার অভাব এবং তৃতীয়ত, যৌন নির্যাতনের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।

বৈজ্ঞানিক সেমিনারে পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক এম আতিকুল হক বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা সংক্রান্ত গবেষণা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার প্রাদুর্ভাব ছিল ৪৮ শতাংশ এবং মনস্তাত্ত্বিক সহিংসতা ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এই সমীক্ষাটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার উচ্চ প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার যথাযথ তদন্ত করা এবং ভবিষ্যতে এ ঘটনা হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ গবেষণা দিবস পালন অনুষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, গবেষণা পোস্টারিং, বৈজ্ঞানিক অধিবেশন, মিট দ্য প্রেস ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এমপি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ তার বাংলাদেশের শহরে ও গ্রামীণ জনসংখ্যার মধ্যে করোনারি হার্টের রোগের ব্যাপকতা এবং ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে তুলনা সংক্রান্ত গবেষণা উপস্থাপন করেন।

তিনি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, করোনারি আর্টারি ডিজিজের প্রাদুর্ভাব শহুরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি। গ্রামীণ এলাকায় শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং শহুরে এলাকায় ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গ্রামীণ এবং শহরের জনসংখ্যার মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজের ব্যাপকতার উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ছিল। সিস্টোলিক রক্তচাপের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক গ্লুকোজ প্রোফাইল, কোমর-নিতম্বের ঘেরের অনুপাত এবং এলডিএল কোলেস্টেরল এবং শহরে জনসংখ্যার কায়িক পরিশ্রমহীন জীবনধারার কারণ গবেষণায় ওঠে আসে।