নিরুদ্দেশ ৪ তরুণসহ গ্রেফতার ৭, নেপথ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠন

অক্টোবর ৬, ২০২২

সম্প্রতি কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া তিন তরুণসহ জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতারের পর নতুন এক জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে তথ্য পেয়েছে র‍্যাব। নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন থেকে কিছু সদস্যকে নতুনভাবে একীভূত করে ২০১৭ সালে এই নব্য জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০১৯ সালে সংগঠনটি “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) হিসেবে নামকরণ করা হয়।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

র‍্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর অভিযানে বুধবার (৫ অক্টোবর) মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে হোসাইন আহম্মদ (৩৩), মো. নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের (৩৪), বণি আমিন (২৭) এবং চার নিরুদ্দেশ তরুণ ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯), মো. হাসিবুল ইসলাম (২০), রোমান শিকদার (২৪), মো. সাবিত (১৯)-কে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এসময় নতুন জঙ্গি সংগঠনটির তিন ধরণের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা, নব্য জঙ্গি সংগঠনের কর্মপদ্ধতির উগ্রবাদী বই ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এই সংগঠনটির আঞ্চলিক নেতা গ্রেফতারকৃত হোসাইন আহম্মদ পটুয়াখালীর একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন, বিশেষত জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হুজি’র বিভিন্ন পর্যায়ের কতিপয় নেতা ও কর্মীরা একত্রিত হয়ে এই উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। গ্রেফতার হোসাইন সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও তিনি সদস্যদের বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সদস্যদের সশস্ত্র হামলার বিষয়ে প্রস্তুত করে তুলতেন। তিনি ২০১৪-১৫ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে সিরাজ নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উৎসাহিত হন। এখন পর্যন্ত ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে বলে জানায়।

গ্রেফতার নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের ভোলায় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। ২০১৯ এর পূর্বে উগ্রবাদী কার্যক্রমে যুক্ত হন। তিনি হিজরতকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও সদস্যদের বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সদস্যদের সশস্ত্র হামলার বিষয়ে প্রস্তুত করে তুলতেন। ৯-১০ জন সদস্যের তত্ত্বাবধান ও প্রশিক্ষণের সাথে যুক্ত ছিলেন।

এছাড়া, গ্রেফতার বণি আমিন উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে পটুয়াখালী এলাকায় কম্পিউটার সেলস অ্যান্ড সার্ভিসের ব্যবসা করে। সে সদস্যদের আশ্রয় প্রদান ও তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ছিল। সে ২০২০ সালে হোসাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। অদ্যাবধি ২২-২৫ জন সদস্যকে আশ্রয় প্রদান ও তত্ত্বাবধানে জড়িত ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেফতার রিফাত কুমিল্লাতে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত ছিল। গ্রেফতার হাসিব উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এবং একটি অনলাইন ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিল। তারা হাবিবুল্লাহর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে দীক্ষিত হতে গত ২৩ আগস্ট বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। গ্রেফতার রোমান পুরপ্রকৌশল বিষয়ে ডিপ্লোমা করে গোপালগঞ্জে ইলেকট্রিক্যাল ও স্যানিটারি বিষয়ক কাজ করতো। সে অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনটি সম্পর্কে ধারণা পায়। পরে সে প্রায় এক মাস আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়।

গ্রেফতার সাবিত উত্তরা এলাকায় প্রায় ১ মাস আগে একটি ছাপখানায় স্টোর কিপারের কাজ করতো। সে তার একজন আত্মীয় ও অনলাইনে ভিডিও দেখার মাধ্যমে উগ্রবাদে উৎসাহিত হয়। সে গত জুন মাসে ঢাকায় সিরাজের সাথে দেখা হওয়ার পর প্রায় ২ মাস আগে নিখোঁজ হয় বলে জানায় র‍্যাব।