অবৈধ শিক্ষকের বেতন চালু, বৈধ শিক্ষককে হয়রানি!

অক্টোবর ৩, ২০২২

নিয়োগ বাতিল হওয়া শিক্ষকের বেতন চালু রেখে বৈধ শিক্ষককে দীর্ঘদিন বেতন না দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদারের বিরুদ্ধে। হয়রানির প্রতিকার ও দ্রুত বেতন-ভাতা চালুর দাবিতে এই বিতর্কিত কর্মকর্তার সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ করেছেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর মহিলা কলেজের ইতিহাসের প্রভাষক আবিদা সুলতানা।

অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উপরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদারের কাছে কোনও প্রতিকার না পেয়ে মহাপচিালকের কাছে আটকে থাকা বেতন চালুর দাবি করেছেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বালাতৈড় ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক মো. এরশাদ আলী।

প্রভাষক মো. এরশাদ আলী বলেন, ‘অধ্যক্ষ টেম্পারিং করা কাজ পাঠিয়েছেন অধিদফতরে। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলেও অধিদফতরে ঘুরাঘুরি করেও কোনও প্রতিকার পাইনি। তদন্ত প্রতিবেদন অধিদফতরে জমা হলে আমি অনেকবার উপরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদারের সঙ্গে দেখা করেছি। কিন্তু তিনি শুধু বলেন— কাজ হচ্ছে। কিন্তু গত তিন মাসে কোনও অগ্রগতি হয়নি। তাই প্রতিকারের আশায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’

এদিকে, নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামানের বেতন চালু করেনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। উল্টো জাল সনদধারী তিন জন শিক্ষকের বেতন চালু করা হয়। পরে সনদ জাল প্রমাণিত হলে তাদের বেতন স্থগিত করা হয়। জালিয়াত শিক্ষকদের বেতন কোড কর্তন করায় প্রভাষক মো. মনিরুজ্জামানের বেতন চালু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় উপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান।

মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জাল সনদধারীদের এমপিও কোড বাতিলে কোনও উদ্যোগ নেয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। উপরিচালকের (কলেজ-২) কাছে বার বার বিভিন্ন মাধ্যমে সহযোগিতা চাইলেও সমস্যা সমাধানের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে উপরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ওটা আসছিল। কালকে ফিজিক্যালি আসলে কথা বলতে পারবো। কাল আসেন সব বলবো। দয়া করে আসেন, বসেন চা খান, সব বলবো।’

প্রসঙ্গত, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর মডেল কলেজের শিক্ষকদের বকেয়া বেতনভাতা দিতে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি  প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এনামুল হক হাওলাদারের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসে।

হয়রানির অভিযোগ আবিদা সুলতানার

টাঙ্গাইলের নাগরপুর মহিলা কলেজের ইতিহাসের প্রভাষক আবিদা সুলতানার অভিযোগে জানা গেছে, বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া এবং দুই দফা এমপিও বৈঠকে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তাকে এমপিওভুক্ত করা হয়নি। অপরদিকে তদন্তে নিয়োগ বাতিল হওয়া একই পদের অন্য শিক্ষককের বেতন ভাতা চালু রেখেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। শুধু তাই নয়, অধিদফতরের উপরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দেখা করেও কোনও ফল হয়নি। উল্টো উপপরিচালকের (কলেজ-২) কাছে হয়রানির শিকার হয়েছেন প্রভাষক আবিদা সুলতানা।

তার লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, প্রভাষক আবিদা সুলতানাকে ইতিহাসের প্রভাষক টাঙ্গাইলের নাগরপুর মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ শূন্যপদের বিপরীতে ২০০২ সালের ২৯ অক্টোবর নিয়োগ করা হয়। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর কলেজে যোগদানের পর গত ২০ বছর ধরে তাকে এমপিওভুক্ত করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু বারবার নানা ওজুহাতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর আবিদাকে এমপিওভুক্ত করেনি। শেষ পর্যন্ত প্রভাষক আবিদা সুলতানা এমপিওভুক্তির জন্য মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করলে বিষয়টি সরেজমিন তদন্তের জন্য তিন বার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় অধিদফতর। তিন দফায় তদন্ত কমিটি আবিদা সুলতানার নিয়োগ বৈধ হিসেবে মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে নিয়োগ বৈধ হওয়ায় এমপিওভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে।

হয়রানির বিষয়টি উল্লেখ করে আবিদা সুলতানা অভিযোগ করেন যে, আইনি কোনও বাধা না থাকা সত্ত্বেও আমাকে এমপিওভুক্ত না করে দুই বার মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। মিটিংয়েও আমাকে এমপিওভুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরও প্রায় ছয় মাস পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এমপিওভুক্তির কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং একই পদে নিয়োগ বাতিল করা প্রভাষক মো. বজলুর রশিদকে নিয়মিত বেতন ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে উপ-পরিচালক (কলেজ-২) -এর সঙ্গে বারবার দেখা করলেও তিনি এর কোনও প্রতিকার না করে আমাকে হয়রানি করে যাচ্ছেন।