‘এখন নারীদের পোশাকের দৈর্ঘ্য নির্ধারণের সময় নয়’

আগস্ট ২৯, ২০২২

নারীদের পোশাক নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে মৌলবাদী তৎপরতার তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘এখন আধুনিক যুগ, রোবটিক্সের যুগ, এখন নারীদের পোশাকের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করার সময় নয়। যারা নারীদের পোশাক নিয়ে তৎপর হয়েছেন তারা বাংলাদেশের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কপালে টিপ আছে কিনা, এখন সেটা কোন প্রশ্ন হতে পারে না। ‘

সোমবার (২৯ আগস্ট) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশের (ইবার) সঙ্গে মতবিনিয়ম সভায় শিক্ষামন্ত্রী এমন কথা বলেন।

 

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘কোনও কোনও প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগে একবার টিপ নিয়ে এক ধরনের কথা হলো। এখন আবার নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কথা হচ্ছে। এগুলো বাংলাদেশে মিমাংসীত বিষয় ছিল। কোন স্বার্থে, কার স্বার্থে এবং কারা এগুলো নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপন করছে, অমিমাংসীত করছে?’

হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্মের মানুষ এসেছে, তাদের সংখ্যা বেড়েছে। ইসলাম ধর্ম এসেছে, এখানে প্রসারিত হয়েছে। এই ভূখণ্ডে সব ধরনের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ১৭টি ভাষাভাষীর মানুষ এখানে ছিল। সেই ভূখণ্ডে একটি ভাষাকে ভিত্তি করে বিশাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একজি জাতি, রাষ্টের জন্ম হলো। সেখানে এতা রক্ত দিয়ে অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে, ধর্ম নিরপেক্ষতার পক্ষে, আমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করলাম সেটি মিমাংসীত বিষয়।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যারা ১৯৭৫ সালে এই অর্জনকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, আজ খুঁজে দেখেন সব জায়গায় তাদের পেতাত্মারা নতুন করে এই প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। আমি আগে বাঙালি নাকি আগে মুসলমান— এটি কোনও প্রশ্নের বিষয় না। আমি বাঙালিও, আমি মুসলমানও। সমস্যাটা কী?’

মধ্যপ্রচ্যে মুসলমানরাও উলুধ্বনি দেয় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই ভূখণ্ডে সনাতন ধর্মের মানুষরা উলুধ্বনি দেয়, এগুলো সাংস্কৃতি অনুসঙ্গ। এখানে বিয়েতে, গায়ে হলুদে যা হয়, এটা কি মুসলিম বিয়ের কোনও অংশ, বলেন? কবুল পড়া, সাক্ষ্য দেওয়া ও দোয়া পড়া ছাড়া মুসলিম রীতিতে বিয়ের অংশে আরতো কিছু নেই। যারা ইসলাম-ইসলাম করে পাগল করে ফেলছেন, এইটার দৈর্ঘ্য এত হতে হবে, এইটার প্রস্থ এত হতে হবে— এটা নিয়ে যারা বলেন, আমরাতো দেখি তাদের ছেলে-মেয়ের বিয়েতে গায়ে গলুদ থেকে সবই হচ্ছে।’

এসব সংস্কৃতির অংশ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সংস্কৃতি মানবো, কিন্তু টিপ পরা, ছেলে-মেয়েদের গান শেখা, কবিতা আবৃত্তি করা মানবো না— এটা তো দ্বিচারিতা। সমাজে এই দ্বিচারিতাকে কারা প্রমোট করছে, সেটি আমরা সবাই জানি। আমরা মুখ ফুটে বলি না। আমি যদি আমার সমাজে অসাম্প্রদায়িকতা চাই, আমি যদি সবার অধিকার চাই, সবার কথা বলার অধিকার চাই, সবার স্বাধীনভাবে চলার অধিকার চাই; তাহলে এটার সঙ্গে ওই কূপমন্ডুকতা, কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদতা একসঙ্গে যায় না।’

এ সময় ইরাব সভাপতি অভিজিৎ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় অংশ নেন ইরাবের উপদেষ্টা রাকিব উদ্দিন, সাবেক সভাপতি মুসতাক আহমেদ, সহ সভাপতি নুরুজ্জামান মামুন, যুগ্ম সম্পাদক নাজিউর রহমান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ হুসাইন, কোষাধ্যক্ষ এলতেফাত হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক সেলিম আহমেদ, প্রচার সম্পাদক রাহুল শর্মা, প্রকাশনা সম্পাদক তুহিন সাইফুল, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক রুম্মান তূর্য, ক্রীড়া ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মুরাদ মজুমদার, আইসিটি সম্পাদক এনামুল হক প্রিন্স, কার্যনির্বাহী সদস্য বিভাষ বাড়ৈ, আবদুল হাই তুহিনসহ অন্যরা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টাস ফোরামের সভাপতি মোস্তফা মল্লিক ও সাধারন সম্পাদক এস এম আব্বাসসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।