ফেসবুকে ঠগী সম্প্রদায়ের ডিএনএ-র এক্সরে রিপোর্ট

মে ২৪, ২০২২

মাসকাওয়াথ আহসানঃ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ছিলো বাংলাদেশের মানুষের পছন্দের একটি দল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের সেই পছন্দের প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি।

১৯৪৭-এর স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়া মুসলিম লীগ আর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ দল দুটিই রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই দেশজ উপনিবেশের নতুন রাবণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যে কারণে মুসলিম লীগ সমর্থক পরিবারের ছেলেরা দলটির রাবণ হয়ে ওঠায় বিদ্রোহ করেছিলো; একই কারণে এখন আওয়ামী লীগের সমর্থক পরিবারে দলটি রাবণ হয়ে ওঠায় বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে।

কিন্তু থাগস অফ বেঙ্গল কিংবা ঠগীরা সবসময় সরকারের সঙ্গে থেকেছে। ঠগীদের ডিএনএ সরকার দলের কর্মী হবার মতো করে মিউটেশান ঘটায়। ঠগীরা বৃটিশের সঙ্গে ছিলো, পাকিস্তান উপনিবেশের সঙ্গে ছিলো, বাংলাদেশকালে বাংলাদেশে যে দলই সরকারে এসেছে; তাদের সঙ্গেই থেকেছে।

সুতরাং এখন আওয়ামী লীগের মিছিলে, চাঁদাপথের যুদ্ধে, ফেসবুকের তেলাঞ্জলির আসরে যাদের দেখছেন; এরা ঠগী সম্প্রদায়ের ডিএনএবাহিত; শৌর্যবীর্য।

একাত্তরের রাজাকার, ৭২-৭৫ পর্বের রক্ষীবাহিনী, ৭৫-৮২ পর্বের ও ৮২-৯০ পর্বের জলপাইবাহিনী; এদের প্রত্যেকের নৃশংসতায় ঠগী রক্তপ্রবাহের সিগনেচার স্পষ্ট।এই যে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের যে নৃশংসতার ইতিহাস; একটা ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়েসের তরুণের হিংস্রতা ও রক্তের নেশা; এটা ঠিকই তাদের প্রপিতামহের রুমালের ফাঁস দিয়ে মানুষ হত্যার রিরংসার উত্তরাধিকার।

এই যে বাম ছাত্র সংগঠন থেকে ক্ষমতাসীন সরকার সমর্থক হয়ে যে তেলাঞ্জলি আর বিভাজনের শীতকার; সেখানেও ঠগী রক্তের প্রণোদনা।

ব্লগার হত্যায় চাপাতি দিয়ে ভিন্নমত মুন্ডু নেবার যে নেশা তা ঐ ঠগীরই নেশা। ক্ষমতায় যে থাকুক; হাওয়া ভবন ও কান্দাকাটি ভবন পালা করে দখল নেয় তেলাঞ্জলি আর রক্তের নেশায় মাতোয়ারা ঠগী ডিএনএ। ঠগীরাই চট করে জয় হো বৃটিশ রাজ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ, জয় বাংলা, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগানে কন্ঠ মেলাতে পারে। ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে হঠাত রুমাল দুলিয়ে “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” বলতে পারে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে রুমাল দুলিয়ে জয় বাংলা বলতে পারে।

রেজাকার শব্দটির ইতিবাচক অর্থ রয়েছে ইসলাম ধর্মে। কিন্তু ধর্মকে হাইজ্যাক করতে ওস্তাদ ঠগীরা। ফলে পাকিস্তানের খুনে সেনাদের দেশজ ঠগী সহযোগীরা নিজেদের নাম নিয়ে নেয় রাজাকার। বাংলাদেশে আমলে ঠগীরা আবার “তুই রাজাকার” বলে জয় বাংলার মিছিলে মিশে যেতে পেরেছে। একই ডিএনএ ঘুরে ফিরে চরে খাচ্ছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ কালের সরকার সহযোগীদের “রাজাকার” বললে ঠগীর ছেলে ফোঁস করে ওঠে। তাই উহাদের নাম দিলাম, রাজবদর।

রাজাকার বলুন আর রাজবদর বলুন, সে টুপি পরুক কিংবা টিশার্ট পরুক; ডিএনএ পরে থাকে খুনের নেশার পোষাক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের খুনে ছাত্রশিবির হোক, ঢাকা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল-ছাত্রলীগের খুনে হোক; ইতিহাসের নানাসময়ের খুনীদের ছবি দেখলে; তাদের চোখের অভিব্যক্তি, চোয়ালে গঠন, মস্তিষ্কের আকার দেখলে ঠগী ডিএনএ-র মিলের জায়গাটি চোখে পড়বে। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে তাই ছাত্রলীগের ঠগী খুনেরা হেলমেট পরে তাদের চেহারা লুকিয়েছে। অল্পবয়েসীদের সঙ্গে পেটমোটা ঠগীদের আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের তরুণ তরুণী কিশোর কিশোরীর ওপর নৃশংস হামলা করতে।

ছাত্রলীগের ঠগীদের দানব চেহারা দেখে ভয় পেয়ে শেখ হাসিনা চেষ্টা করেছেন; বাইরে থেকে সুন্দর দেখায় এমন ছেলেদের দায়িত্বে আনতে। কিন্তু কিছুদিন পরেই সেই আপাত সুন্দর চেহারা ফুঁড়ে ঠগীর পিশাচ চেহারা বেরিয়ে আসে। মনের বিকৃতি চেহারায় ফুটে উঠতে যে বাধ্য। মাকাল ফল ফেটে ঠগী ফল ঝুলতে থাকে ছাত্রলীগের গাছে।

এই যে দেখবেন কিছু লোক হারমোনিয়াম ঘাড়ে করে শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সংস্কৃতি করে বেড়ায়; বইমেলায় আলোকিত মানুষ সেজে ঘুরাঘুরি করে, ফেসবুকে ফুল লতা পাতা আর পোগোতিচিলতার সিলেক্টিভ মায়াকান্না করে; তাদেরকে দেখবেন কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে, কিংবা আজকে ছাত্র দলের তরুণীদের ওপর ছাত্রলীগের কাপুরুষোচিত হামলায় মুখে কুলুপ এঁটে আছে।

এও একরকমের ঢিলাকুলুপ; এর ব্যবহার ভিন্ন। এরাই দেখবেন হজ্জ্বের সিজনে ঢিলাকুলুপ নিয়ে মক্কায় যায়; কিংবা তীর্থের সময় ঢিলাকুলুপ নিয়ে কলকাতা যায়।এইগুলি হচ্ছে ঠগীদের সাংস্কৃতিক ব্রিগেড। একটু কালচার টালচার করে ভদ্রলোক সেজেছে। বঙ্গবন্ধু এরকম লোকদের বলতেন, চাটার দল। শুধু নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যারা সহমতের লোলুপ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পার্টি ইন পাওয়ারের সোনার জুতোটি।

বয়সে পেকে ঝুনা নারকেল হয়ে গেছে; তবু কোন কিশোরী আক্রান্ত হলে দেখে নেয়, সে পার্টি ইন পাওয়ার; নাকি অন্য কোন পক্ষা!

বাংলাদেশের একজন কিশোর-কিশোরী-তরুণ-তরুণীর ওপর হামলা দেখে; যার হৃদয়ে মানবতার আলোড়ন ঘটেনা; সেই অন্ধ ঠগী; বাংলাদেশ অচল আজ এদের সুপরামর্শ ছাড়া। এরা নিজের ছেলেমেয়ে ছাড়া পৃথিবীর আর কোন ছেলেমেয়ের প্রতি মায়া অনুভব করে না। এমনই নিষ্ঠুর হচ্ছে ঠগীর ডিএনএ।

এইভাবে আমরা বুঝতে পারি ঠগী ও রাজাকারের নিত্যতাসূত্র; বাংলাদেশে এরা বিভিন্ন ক্ষমতাকালে কেবল রুপ বদলায়; কিন্তু এদের বিনাশ ঘটেনা।

মাসকাওয়াথ আহসান,

সম্পাদক, দ্য এডিটর থ্রি সিক্সটি ফাইভ

প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া