আফগানিস্তানে নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি

এপ্রিল ২৪, ২০১৩

Women-in-Islamic-dress-we-001ঢাকা জার্নাল: আফগানিস্তানের মানুষরা কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হলে প্রাণভরে আনন্দ করেন৷ খানিকক্ষণের জন্য হলেও ভুলে যান তাদের দুঃখ দুর্দশা, যুদ্ধ বিগ্রহ৷ সারা রাত ধরে চলতে থাকে নাচ, গান, হৈ হুল্লোড়৷

আপনজন ও পরিবার পরিজন ছেড়ে যেতে হবে বলে নববধূর মুখটা থাকে মলিন৷ চোখে থাকে অশ্রু৷ এটা কিন্তু সবসময় লোক দেখানো নয়৷ বাস্তবিকই অনেক মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, তাই তাদের মুখে হাসি থাকে না৷ কিশোরী নাদিয়ার ভাগ্যেও ঘটেছে এই রকমটি৷ জোর করে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়৷ কিন্তু বরকে সে মেনে নিতে পারেনি৷ তাই চেষ্টা করে আত্নহত্যার৷ তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়৷ এখন সে অসুখী এক গৃহবধূ৷

জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ৮০ শতাংশ বিয়ে জোর করে দেওয়া৷ প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই নববধূর বয়স ১৬ বছরের নীচে৷ জীবনের সুন্দর দিনটিকে ভয়াবহ বলে হয় অনেকের কাছে৷ আত্মহত্যাই মুক্তির একমাত্র পথ বলে মনে করে তারা৷ আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি এক লাখে পাঁচ জন মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়৷

শহরের মেয়েরা বেশি হতাশাগ্রস্ত

স্ত্রীরোগ বিশারদ ডা. মনিকা হাউসার ২০ বছর আগে জার্মান নারী রক্ষা সংস্থা ‘মেডিকা মোনডিয়ালে’ গড়ে তোলেন৷ বছর নয়েক ধরে আফগানিস্তানে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি৷ ডা. হাউসার আফগানিস্তানে মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বিশেষ করে শহরের মেয়েদের মধ্যে এটা দেখা যাচ্ছে৷ কারণ তাঁরাই জোর করে দেওয়া বিয়েকে মেনে নিতে পারে না৷”

শহরের মেয়েরা তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত৷ গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের কারণে তাঁরা অনেক কিছুই জানেন৷ তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ে হলে তাঁরাই হতাশায় ভোগেন বেশি৷

সমীক্ষায় জানা গেছে, আফগানিস্তানে ১.৮ মিলিয়নের বেশি নারী ডিপ্রেশনে ভুগছেন৷ চিকিত্সক ও মনস্তত্ত্ববিদ ডা. মোহাম্মদ আশরাফ রাওয়ান জানান, ‘‘খুব অল্পবয়সে বিয়ে হলে মেয়েরা তাদের ওপর চাপানো দায়িত্ব পালন করতে পারেন না৷ বিশেষ করে জোর করে বিয়ে দেওয়া হলে প্রায়ই দাম্পত্য সমস্যা ও বিবাহ বিচ্ছেদ দেখা দেয়৷ নানা রকম মানসিক সমস্যা ও ডিপ্রেশন ভোগেন মেয়েরা৷ যা আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়৷”

সনাতন প্রথা

ইসলামি আইন অনুযায়ী, বিয়েতে পাত্র-পাত্রী দুজনেরই সম্মতি প্রয়োজন৷ কিন্তু আফগানিস্তানে হাজার হাজার বছর ধরে চলা সনাতন প্রথাই জয়ী হচ্ছে৷ মা-বাবা তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেন বিশেষ করে কন্যা সন্তানের ওপর৷ ছেলেরা অনেকটা স্বাধীনতা ভোগ করেন৷ মা-বাবার পছন্দের পাত্রীকে তারা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন অথবা গ্রহণও করতে পারেন৷ অনেক ছেলে নিজেরাও জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে পারেন৷

আফগানিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র ফৌজিয়া নাওয়াবি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে, এমন বহু মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি আমি৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রচেষ্টার কারণটা হল জোর করে বিয়ে দেওয়া৷”

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের চারটি প্রদেশের দায়িত্বে রয়েছেন ফৌজিয়া৷ তিনি জানান, ‘‘২০১২ সালে এই প্রদেশগুলিতে ৩৬টি আত্মহত্যার চেষ্টা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১০ জন বেঁচে গেছেন৷ তবে তালিকার বাইরে থাকা সংখ্যাটা আরো বেশি হবে৷ কেননা অনেক পরিবারই বিষয়টি গোপন রাখতে চেষ্টা করেন৷”

আইনগত সহায়তা

ডা. মোনিকা হাউসার জানান, মেডিকা প্রতিষ্ঠানটি ভূক্তভোগী মেয়েদের শুধু মনস্তাত্ত্বিক সহায়তাই দেয় না, আইনগত সাহায্য সহযোগিতাও দিয়ে থাকে৷ মেয়েরা যাতে নির্ভয়ে তাদের সমস্যাগুলি তুলে ধরতে পারে, সে ব্যবস্থাও করে থাকে সংস্থাটি৷ আইনের চোখে নারী ও পুরুষ সমান হলেও তা শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ৷ নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে তিন বছর আগে একটি আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছিল৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সংসদ কর্তৃক পাশ করা হয়নি৷ আইনের এই খসড়ায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর করার প্রস্তাব রয়েছে৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.