পাঠ্যবই জাল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২

২০২২ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই জাল করে করে সরকার ও কার্যাদেশ পাওয়া মূদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কাজ কাজে জড়িত রয়েছে মূদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ‘সিন্ডিকেট’। এছাড়া এই তৎপরতায় সরকার বিরোধী একটি চক্রও জড়িত বলে অভিযোগ আছে।

অভিযোগে জানা গেছে, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ কাজ শেষ পর্যায়ে এসে একটি চক্র নিম্নমানের কাগজ দিয়ে প্রাথমিকের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কিছু বই ছাপায়। সেই বই বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) মান যাচাইয়ে জমা দেয়।  মান যাচাইয়ের জন্য বইগুলো জমা দেওয়া হয়েছে প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে।

বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার কাজ পাওয়া মূদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বইয়ের মান যাচাই করে এনসিটি বই ছাড় করার ব্যবস্থা নিয়েছে। বই বিতরণ শেষ হওয়ার পর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কিছু বই নিম্নমানের কাগজে ছেপে গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে রিপোর্ট করিয়ে অপ্রচার করলেই সব সত্যি হয়ে যায় না।  একটি সিন্ডিকেট দরপত্র জমা দিয়ে কাজ না পেয়ে যারা কাজ পেয়েছে তাদের এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ষড়যন্ত্র করছে।

বই ছাপা মূদ্রণ প্রতিষ্ঠান টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে সাব্বির খান বলেন, ‘তিন স্তরের পরিদর্শনের পর পাঠ্যবই ছাড় হয়েছে।  কোনও প্রেসের পক্ষের নিম্নমানের বই দেওয়ার সুযোগ নেই। নিম্নমানের বই ছাপার প্রমাণের চেষ্টা করছে কাজ না পাওয়া প্রতিষ্ঠাগুলো।  বাংলাদেশ মূদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা সিন্ডিকেট করেও কাজ না পেয়ে ক্ষুব্ধ।  জাল বই ছেপে সায়েন্স ল্যা‌বে টেস্ট করালে সেই বইয়ের মান তো নিম্মমানেরই হবে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ’

তবে বাংলাদেশ মূদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বই জাল করার অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন উপেজলা থেকে বই সংগ্রহ করে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে জমা দিয়ে রিপোর্ট নিয়েছি। এখনও আমাদের কাছে আছে ১০০ কপি আছে। আগামী রবিবার না হলেও সোমবারের সংবাদ সম্মেলন করবো। ‘ কোন উপজেলা থেকে বই সংগ্রহ করা হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ‘বিস্তারিত পরে জানতে পারবেন। ‘

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) রুটিন দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘বই নিম্নমানের বলে কেউ অভিযোগ করতেই পারে। তিন স্তরে পরিদর্শন করে বই ছাড়া করা হয়েছে। এরপর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মাঠ পর্যায় থেকে বই সংগ্রহ করে মান যাচাই করা হবে। মূদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০ শতাংশ অর্থ এই পরিদর্শনের পর ছাড় করা হয়ে থাকে। যদি সেই পদির্শনে কোনও বই নিম্নমানের পাওয়া যায় তাহলে মূদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  তবে যদি কেউ মিথ্যা অভিযোগ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের বই ছাপা কাজে ‘সিন্ডিকেট’বা জোটবদ্ধভাবে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে দরপত্র জমা দেয়।  কিন্তু এনসিটিবি এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পুনর্দরপত্র আহ্বান করে।

পুনর্দরপত্র আহ্বানের পর সিন্ডিকেট থেকে বেরিয়ে কয়েকটি মূদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলিত দরের কাছাকাছি বিভিন্ন দরে দরপত্র দাখিল করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস, কচুয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস, করতোয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস, বারোতোপা প্রিন্টিং প্রেস, সৃষ্টি প্রিন্টার্স, লেটার অ্যন্ড কালার প্রিন্টিং প্রেস, টাইমস মিডিয়া লিমিটেড, মোল্লা প্রিন্ট্রিং প্রেস, মা সিস্টেম, ফাইভ স্টার এবং সাগরিকা প্রিন্টার্স। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার সুপারিশ করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি।

এনসিটিবি জানায়, সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়ায় সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। প্রতি বছর সিন্ডিকেট করে সরকারর শতকোটি টাকার বেশি অর্থ নিয়ে যেতো সিন্ডিকেটটি। সিন্ডিকেট ভাঙতে পুনর্দপত্র আহ্বান করায় এবার বই ছাপতে দেরি হয়।  ‘সিন্ডিকেট’ থাকা মূদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বই ছাপার কাজ নিয়ে শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে। বই ছাপানোর কাজ না পেয়ে উচ্চ আদালতে মামলাও করা হয়। তবে মামলায় হেরে যায় জোটবদ্ধ মূদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বিরোধ সরকার ও কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সিন্ডিকেটের বিরোধ আরও জোরদার হয়। সর্বশেষ জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।