টাঙ্গাইলে নৌকায় ভোট দেওয়ায় ৯ পরিবার সমাজচ্যুত

জানুয়ারি ৪, ২০২২

নৌকায় ভোট দেওয়ায় টাঙ্গাইলে সদর উপজেলার হুগড়া গ্রামের ৯ পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে জানা গেছে, গত চারদিন ধরে সমাজের কারো সঙ্গে চলাফেরা বা কথা বলতে পারছেন না ওই পরিবারের সদস্যরা।

বিষয়টি স্থানীয় মাতবরকে জানালেও কোনও কাজ হয়নি।  এ ঘটনার সমাধান চেয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। একটি টিচিং হোম বন্ধ করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে সেখানে।

সমাজচ্যুত হওয়া ব্যক্তিরা হচ্ছেন— রাজু আহমেদ, সোনা চাকলাদার, ফজল হক, আসরাক আলী, নজরুল ইসলাম, মো. ঠাণ্ডু মিয়া, আরজান আলী, ছকের আলী ও মোতালেব হোসেন ও তাদের পারিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, গত ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থধাপে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে হুগড়া এলাকা থেকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নুর এ আলম তুহিন নির্বাচনে অংশ নেন।  নির্বাচনের শুরু থেকে সমাজচ্যুত ওই ৯ পরিবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন করেন।  ওই ৯ পরিবারের ভোটাররা নৌকায় ভোট দেন।  ভোট গণনা শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর এ আলম তুহিনকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এরপর পর হুগড়া সমাজের সভাপতি তুহিনের চাচা মোর্শেদ আলম দুলাল ৯ পরিবারের সঙ্গে সমাজের সবাইকে কথা বলতে মানা করেন।  পরে ১ জানুয়ারি সমাজের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমাজচ্যুত করা হয়।

ওই ৯ পরিবারের সঙ্গে কেউ কথা বললে তাকেও শাস্তির আওতায় আনার হুমকি দেন সমাজের সভাপতি মোর্শেদ আলম দুলাল ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম সুজাব।  এই ঘটনার পর থেকে তাদের সঙ্গে সমাজের কেউ কথা বলেন না। এছাড়া চর হুগড়া গ্রামের তাসলিম টিচিং হোম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সমাজচ্যুত কয়েকজন জানান, হুগড়া ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে একই এলাকা থেকে দুই প্রার্থী অংশ নেন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর নবাগত চেয়ারম্যানের চাচা তাদের ৯ পরিবারকে সমাজচ্যুত করবে এটা তাদের জানা ছিলো না।  পাশাপাশি অনেক থাকলেও কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলে না।  এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

তাসলিম টিচিং হোমের আব্বাস আলী জানান, নৌকার নির্বাচন ও নৌকার ভোট দেওয়ায় তার টিচিং হোমের সাইন বোর্ড নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার ওই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণির ৩০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করত। ওই প্রতিষ্ঠানে কাউকে পড়তে দেওয়া হচ্ছে না।

হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা গণমাধ্যমকে জানান, এই সমাজচ্যুত প্রথাটি অনেক আগে ছিল।  বর্তমানে তা আর নেই। নির্বাচনে কে কার জন্য কাজ করবে সেটি একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।  কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েই তারই এলাকার ৯ পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। এটি বর্ববরতা।

এ বিষয়ে হুগড়া সমাজের সভাপতি মোর্শেদ আলম দুলাল বলেন, ‘আমরা কাউকে সমাজচ্যুত করিনি।  একটি কুচক্রী মহল আমাদের নামে কুৎসা রটনা করছে।