নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করছে এনজিও

ডিসেম্বর ২৯, ২০২১

২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের কনটেন্ট অনুমোদন হয়নি। ‘যোগ্যতাভিত্তিক শিখনফল’ বাদ দিয়ে ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক’ জটিল একটি যোগ্যতার ছক (মেট্রিক্স) জুড়ে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাক্রমে। শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী কী মাত্রায় শিখবে বা পারদর্শী হবে তার মাপকাঠি নির্ধারিত হয়নি। মূল্যায়ন স্ট্যান্ডার্ড কী তাও অনির্ধারিত। এভাবেই গোজামিল দিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ফলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।  অন্যদিকে এনজিওর প্রেসক্রিপশন শিক্ষাক্রম  প্রভাববিস্তার করছে।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় নির্দেশনা যুক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তৈরি হয়নি হয়নি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাক্রম। রূপরেখা অনুযায়ী বইয়ের কনটেন্ট কাজও চূড়ান্ত হয়নি। ২০২৩ সাল থেকে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করার লক্ষ্যে ২০২২ সালে পাইলটিং করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং করার কথা থাকলেও শেষ সময়ে এসে মাত্র ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাইলটিংয়ের জন্য বই প্রস্তুত না করায় চার মাস পর পর লার্নিং মেটেরিয়াল দিয়ে ১২ মাস পাইলটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও পাইলটিং শুরু হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে।

শিক্ষাক্রম প্রণয়নের নেতৃত্ব থাকা এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় প্রধানমন্ত্রী যে অবজারভেশন দিয়েছেন সেগুলো অ্যাড্রেস করা হয়েছে। ছোটখাটো কিছু কারেকশন দিয়েছেন, নতুন করে অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারিকুলাম বাস্তবায়নে সমস্যা হতে পারে সে কারণেই পাইলটিং করছি। পাইলটিংয়ে যাওয়ার পর যা যা সমস্যা হবে তা আমরা ঠিক করবো।‘

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২৫ সাশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম বছর ২০২৩ সালে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন বই। এ লক্ষ্যে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে পাইলটিং হবে প্রাথমিক স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ট ও সপ্তম শ্রেণির।

২০১২ সালে প্রণীত ও ২০১৩ সালে বাস্তবায়ন করা শিক্ষাক্রম বর্তমানে চলছে। প্রাথমিক শিক্ষাক্রম  পরিমার্নজন করা হচ্ছে। আর মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম পুরোপুরি নবায়ন করা হচ্ছে।

শিক্ষাক্রমে এনজিওগুলোর প্রেসক্রিপশন

জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিশেষজ্ঞদের বাদ দিয়ে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) পেসক্রিপশনে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে। গোজামিল করে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা নিয়ে বিরোধও দেখা দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও নবায়ন কার্যক্রম ও জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির (সিডিআরসি) সঙ্গে সমন্বয় রক্ষায় গঠন করা ‘ওয়ার্কিং গ্রপ’ এর আহ্বায়ক এনটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান। অভিযোগ রয়েছে, ১৫ সদস্যসের ওই গ্রুপের ছয়জন সদস্যকে বাইপাস করে ইউনিসেফ, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে কারিকুলাম তৈরির কাজ করা হচ্ছে। এনজিও প্রতিনিধিরা যে পরামর্শ দিয়েছেন তাই করছেন অধ্যাপক মশিউজ্জামান।

তবে শিক্ষাক্রম প্রণয়নে এনজিওদের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। যদিও ১৫ সদস্যের ওয়ার্কি গ্রুপে এনজিও সংশ্লিষ্টদের নাম রয়েছে।

অভিজ্ঞদের রাখা হয়নি, রাখা যায়নি

বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণয়নের জন্য সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সরকার। শিক্ষাক্রম প্রণয়নে এসব কর্মকর্তাদের রাখা হয়নি এবং বাদ দেওয়া হয়েছে কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট উইং। অপরদিকে অখ্যাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও রাখা হয়েছে শিক্ষাক্রম প্রণয়নে। মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া শিক্ষকও রাখা হয়েছে। বিষয় বিশেষজ্ঞ নিয়োগে পছন্দের লোক বাছাই করা হয়েছে। এসব পরিস্থিতে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির প্রধান চালিকা শক্তি শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান নিজে থেকে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।

অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আলোচনা শুনে এবং যে মেটেরিয়ালস দেখে আমার যা মনে হয়েছে, মাঝপথে আমি ঢুকে সেটাকে সুগঠিত করা কঠিন হবে। তাছাড়া তারা যে আমার কথা শুনবে তাও না। কমিটিতে থেকে যদি মতামতের প্রতিফলন না ঘটে, শুধু নাম রাখার জন্য থাকি তাহলে সঠিক হবে না। তারপর আমি লিখিতভাবে অব্যাহতি নিয়েছি।

প্রাথমিকের সঙ্গে বিরোধ

নতুন শিক্ষাক্রম তৈরির জন্য ২০১৮ সালে উদ্যোগ নেয় সরকার। ওই সময় চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন হালনাগাদ করা হয়। প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন হালনাগাদের সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর অনুমোদন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কিন্তু হঠাৎ করে শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় যোগ্যতা ও শিখন ফল বাদ দিয়ে জটিল একটি যোগ্যতার ছক (মেট্রিক্স) ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক’ জুড়ে দিয়ে শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়। এটি প্রাথমিকের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়। প্রাথমিকের বক্তব্য—১৯৮৮ সাল থেকে চার বছর ধরে গবেষণার পর ১৯৯২ সালে এসে যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলাম বাংলাদেশের প্রথম প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে আরেকটি গবেষণার মাধ্যমে ‘বিদ্যালয় ও শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি ও টুলস’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া বিস্তৃত পাঠ পরিকল্পনা এবং ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট করার স্বার্থে বাস্তবতা অনুধাবন করে যোগ্যতা পরিমাপের জন্য শিখনফল নির্ধারণ করে বিস্তৃত শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হচ্ছে।

এই অবস্থায় নতুন ও জটিল শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব কতটা বাস্তব বাস্তবায়নযোগ্য করে তোলা যাবে তা স্পষ্ট নয়। প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ষষ্ট শ্রেণি থেকে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার প্রস্তাব দেওয়া হয় প্রাথমিক থেকে। এতে বিরোধ জোরদার হলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে প্রাথমিকের প্রস্তাব মেনে নেন অধ্যাপক মশিউজ্জামান।

শিক্ষাক্রমে গোজামিল

অভিযোগ উঠেছে, মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের ‘যোগ্যতাভিত্তিক’ (কম্পিটেন্সি বেইজ) শিক্ষাক্রম প্রণয়নের অভিজ্ঞতা নেই। ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিতা‘ শিক্ষাক্রম তৈরিরও কোনও অভিজ্ঞতা নেই। প্রেসক্রিপশন যারা দিচ্ছেন তারাও শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ নন। নতুন রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব সে বিষয়ে কোনও অভিজ্ঞতা ও কোনও গবেষণা নেই সংশ্লিষ্টদের।

অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, “অভিজ্ঞতা নেই তো কী হয়েছে? আমাদের অভিজ্ঞতা নেই, আমরা প্রথম করছি তাতে অসুবিধা কী? কারিকুলাম বাস্তবয়নে সমস্যা হতে কিনা সেটা দেখার জন্যই পাইলটিং করছি। ”

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে ‘শিখনফল’ অর্জন বাদ দিয়ে ‘পরদর্শীতা’ অর্জনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কত শতাংশ বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আর কত শতাংশ পাঠ্যবই থেকে শিখবে তার মাত্রা নির্ধারণ করা নেই। পারদর্শীতা মূল্যায়নে অনুমানযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট কোনও গাইডলাইন নেই। শিখনফল বাদ দিয়ে শুধু অভিজ্ঞতা দিয়ে মূল্যায়ণ করা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।

জটিল মেট্রিক্স জুড়ে দেওয়ায় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী বই চূড়ান্ত করতে হিমসিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। যাদের এই কারিকুলাম তৈরির যোগ্যতা রয়েছে তারাও উপেক্ষিত। শিক্ষাক্রমের রুপরেখা অনুযায়ী বই তৈরি করা জটিল হওয়ার কারণে কোনও রকমে একটি স্টুডেন্ট রিসোর্স বুক তৈরি করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই বই শিক্ষার্থীদের কাছেও জটিল হবে। ফলে শিক্ষার্থীরা নোট-গাইডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আর শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে এনজিওদের সহায়তা নিতে বাধ্য হতে হবে।

প্রসঙ্গত, বিদ্যমান শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবইকে টেক্সবুক বলা হলেও নতুন শিক্ষাক্রমে বলা হচ্ছে স্টুডেন্ট রিসোর্স বুক। আর শিক্ষক সহায়িকাকে বলা হচ্ছে টিচার রিসোর্ট বুক।

নতুন কারিকুলামে কনটেন্ট চূড়ান্ত না হওয়ায়র মধ্যে গত ২০ ডিসেম্বর সকাল থেকে প্রায় সারাদিন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এনসিটিতে কাটান। বইয়ের কনটেন্ট নিজে দেখেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে সন্তোষ্ট হলেও অনেক ক্ষেত্রে ডেভেলপ করার নির্দেশনা দেন।

ম্যানুয়াল ছাড়াই শিক্ষক প্রশিক্ষণ

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। তবে শিক্ষাক্রমের আউট লাইন ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের সময় শিক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাক্রমের রূপরেখা। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানোর যোগ্যতা অর্জন করবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। মডিউল, ম্যানুয়াল ছাড়া প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষকরা তা বাস্তবে কাজে লাগাতে পারবেন কিনা তাও নিশ্চিত করা হচ্ছে না।

বিশেজ্ঞদের অভিমত

অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এই কারিকুলামের ওপর বই লেখা দূরুহ। এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা হয়ে যাবে। এই কারিকুলামে যেসব টার্ম ব্যবহার করা হয়েছে, আমার বিশ্বাস এগুলো সম্পর্কে তাদের অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। এই কারিকুলাম তৈরি বই লেখা এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা সবচেয়ে কঠিন। তবে কারিকুলাম তৈরি ও বই লেখা সঠিক হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণ সহজ হবে। ’

অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘যারা নেতৃত্ব রয়েছেন তারা দাবি করছেন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করছে। ২০১২ সালের কারিকুলামে ধারাবাহিক মূল্যায়ন, সামষ্টিক মূল্যায়ন রয়েছে। অথচ তারা দাবি করছে সবই নতুন। শিক্ষক প্রস্তুত করতে না পারায় বিদ্যমান শিক্ষাক্রম ৯০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। অভিজ্ঞতা ভিত্তিক নতুন শিক্ষাক্রম করে ওয়েআউট কী হবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ এর অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কারিকুলামের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— কী চাচ্ছি, কীভাবে বাস্তবায়ন হবে এবং কী অর্জন হবে। কী চাচ্ছি বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল থাকা দরকার। আমরা সবাই টেকসই কিছু চাই। এই কারিকুলামে ভালো বেশ কিছু চিন্তা আছে। তবে কিছু আছে যা বিপদজনক হতে পারে। কোন টুলস দিয়ে মূল্যায়ন করছি। টুলসগুলো যথার্থ ও নির্ভরযোগ্য কিনা? ঠিকমত ব্যবহার করতে পারবে কিনা সেগুলো যথার্থভাবে দেখতে হবে। কারিকুলামে ইনটেনশন সেট করার সময় যদি বাস্তবতা নজরে না আনি তাহলে কারিকুলাম বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জর মুখে পড়তে হবে, শিক্ষা ব্যবস্থাও দুর্দশার মধ্যে পড়বে। যা চাচ্ছি তা যদি অর্জন হয়, তাহলে বলবো গুণগত শিক্ষা অর্জন হয়েছে। যখন চাওয়ার সঙ্গে পাওয়া মিলবে না, তখন অনেক কারণেই তা হতে পারে। হতে পারে শিক্ষার্থীর মনোযোগহীনতা, সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া। আবার হতে পারে ইনটেনশন সেট করার সময় বাস্তবতা চিন্তা না করা। বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়। ’

অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘যোগ্যতাভিত্তিক হোক বা অভিজ্ঞতাভিত্তিক হোক, দিন শেষে শিক্ষার্থীদের সেটা কী কাজে লাগবে সেটা দেখতে হবে। অনেক কনটেন্ট আমরা পড়ি কিন্তু সেগুলো কাজে লাগে না। তাহলে যা করতে হবে তা হলো শিক্ষার্থীদের স্কিল ডেভেপমেন্ট, আর তা করতে হবে কন্টেন্ট ডেভলপমেন্টের সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড করা। প্রস্তাবিত কারিকুলামের রূপরেখায় যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমেরই প্রয়াস চালানো হয়েছে। যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। আগের কারিকুলামেও এগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছিলো। এবার ফোকাস করা হচ্ছে। কিন্ত এটি বাস্তবায়নে থাকবে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে বুঝতে হবে, বিশ্লেষণ করতে হবে, নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ, না হলে অপূরণীয় ক্ষতি হবে পরবর্তী প্রজন্মের পাশাপাশি দেশ ও জাতির। হোচট খাবে সরকারের বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জন।