লাল তালিকাভুক্ত ২৩টি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের পক্ষে মিথ্যা প্রচারণা

ডিসেম্বর ৯, ২০২১

 

প্রশিক্ষণ ছাড়া সনদ বিক্রির অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লাল তালিকাভুক্ত ৩৭টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) ২৩টি কলেজে নিজেদের বৈধতার দাবিতে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বাতিল করা একটি অফিস আদেশের নির্দেশনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তির কারাতে এই কার্যযক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি গোপন করে দু-একটি গণমাধ্যমে তথ্য অধিদফতরের বাতিল আদেশ সরবরাহ করে খবর প্রচার করিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে।

এই মিথ্যা প্রচারণার প্রতিবাদ জানিয়েছে টিচার্স টেনিং কলেজ সমিতি।

মিথ্য প্রচারণা চালিয়ে লাল তালিকাভুক্ত ও শিক্ষা কার্যক্রম অনুমতি না থাকা এই কলেজেগুলোর পক্ষে বলা হচ্ছে—২৩ কলেজের বাইরে আর কোনও কলেজের অর্জিত সদনের বিপরীতে বিএড স্কেল পাবে না।

তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত যেসব সব কলেজগুলোয় প্রশিক্ষার্থী ভর্তি হবে তার তালিকা দেওয়া আছে।  কালো তালিকাভুক্ত কলেজগুলোরও তালিকা দেওয়া আছে। সেই বিবেচনায় প্রশিক্ষার্থীরা বিএড হবেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১৪টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের পাশাপাশি বেসরকারি টিচার ট্রেনিং কলেজ রয়েছে ১০৭টি। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে ৭১টির। এই ৭১টির মধ্যে মানহীন বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ৩৭টি  টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে।  কালো তালিকাভুক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ ও করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপের পরও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠলে ২০১৫ সালে কালো তালিকার ৩৭টি কলেজের তথ্য প্রচারের জন্য প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকাভুক্তির আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে ৩৭টি কলেজের মধ্য থেকে ২৩টি কলেজের পক্ষে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয় ২০০৮ সালে।  রিট আবেদনে ২৩ টিচার ট্রেনিং কলেজের পাস করা শিক্ষার্থীদের সনদে বিএড স্কেল দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। ওই রিট আবদনে আদেশে ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মামলা চলাকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৩টি কলেজ থেকে যারা পাস করেছেন তাদের অর্জিত সনদ বৈধ ঘোষণা করা হয়। তবে এই আদেশে কলেজগুলো বৈধ হওয়া কিংবা ভবিষ্যতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি করাতে পারবে তার কোনও নির্দেশনা দেননি আদালত।

আদালতের এই আদেশ ভুলভাবে উপস্থাপন করলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর ২০১৯ সালের ১৪ মে পক্ষপাতমূলক বিতর্কিত একটি অফিস আদেশ জারি করে। অফিস আদেশে ২৩ কলেজের বিএড সনদ অর্জনকারীদের বিএড স্কেল প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ২৩ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে অর্জিত সনদের বাইরে অন্য কোনও কলেজ থেকে অর্জিত সদনের বিএড স্কেল প্রদান না করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার সকল আঞ্চলিক উপপরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আদেশের পর দেশের অন্য সব বেসরকারি ট্রেনিং কলেজ বিতর্কিত নির্দেশনার বিরোধিতা করে।  দেশের সকল কলেজের বিরোধিতার পর ২০১৯ সালের ১৪ মে জারি করা আদেশ ৭ দিনের মাথায় ২০১৯ সালের ২২ মে বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।

কিন্তু ২০১৯ সালের বিতর্কিত বাতিল আদেশটি নিয়ে নিজেদের বৈধতার প্রচার চালাতে থাকে ২৩ কলেজের পক্ষে। কলেজেগুলোর পক্ষে প্রচার চালিয়ে বলা হয়— বৈধতা পেল ২৩ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। ফলে আসন্ন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তিতে শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হতে পারেন বলে জানান টিচার্স টেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম খান।

অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বাতিল নির্দেশনাটি নিয়ে ২৩ কলেজ প্রচার চালাচ্ছে যে, তারা ছাড়া অন্য কোনও কলেজের সনদধারী বিএড স্কেল পাবে না। ফলে একটি বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন কালো তালিকভুক্ত কলেজগুলো বৈধতা পেয়ে গেছে।  আর এতে দেশের সব মানসম্পন্ন কলেজগুলোর সম্মানও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।’

সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল বাবুল হোসেন বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ভুলের কারণে এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মানসম্পন্ন কলেজগুলো এতে ক্ষতির মুখে পড়বে। আর কালো তালিকাভুক্ত কলেজগুলোয় প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি হয়ে তারাও ক্ষতিগস্ত হবেন।’

সংগঠানের সহসভাপতি অধ্যাপক রমজান আলী বলেন, ‘বাতিল আদেশের নির্দেশনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া এবং ওই আদেশটি গণমাধ্যমের কাছে দিয়ে ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।  এই ২৩টি কলেজসহ ৩৭টি কলেজ এখনও কালো তালিকাভুক্ত।