‘মামলা নেওয়ায় বিধিনিষেধ বিচার প্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত করবে’

নভেম্বর ১২, ২০২১

৭২ ঘন্টা অতিক্রান্ত হলে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা না নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে আদালতের পরামর্শের বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বিবৃতিতে বলেছে ‘মামলা রুজু করার জন্য বিধিনিষেধ বিচার প্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত করবে যা মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী।

মহিলা পরিষদ বিবৃতিতে আরও জানায়, বিচারিক আদালত যদি এ ধরনের বিধিনিষেধ তৈরি মন্তব্য প্রদান করে, তাহলে ভবিষ্যতে ধর্ষণের ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।

রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় আদালতের এজলাসে উল্লেখিত পর্যবেক্ষণ বিষয়ে শুক্রবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই  বিবৃতি দেয়।

বিবৃতিতে মহিলা পরিষদ জানায়, গত ১১ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলায় দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক রায় ঘোষণা করেছেন। বিচারক অভিযুক্ত পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি উল্লেখ করে আদালত বলেছেন, মেডিক্যাল রিপোর্ট ডিএনএ পরীক্ষা ধর্ষণের আলামত থেকে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই ধর্ষণের অভিযোগ আনা হলেও এটিকে ধর্ষণ বলা যাবে না। তাছাড়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন। এজন্য তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ভৎসনা করেছেন।

মহিলা পরিষদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম— ৭২ ঘন্টা অতিক্রান্ত হলে মামলা না নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মামলা রুজু করার জন্য বিধিনিষেধ বিচার প্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত করবে যা মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। তাছাড়া মেডিকেল রিপোর্টই ধর্ষণ মামলার একমাত্র এভিডেন্স না। আরও অনেকগুলো পারিপার্শ্বিক এভিডেন্স থাকে সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে মামলার বিচার এগিয়ে চলে। বিচারিক আদালত যদি এ ধরণের বিধিনিষেধ তৈরি মন্তব্য প্রদান করে, ভবিষ্যতে ধর্ষণের ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা জানি, প্রচলিত আইন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে রিভিউ করার ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী কেবল মাননীয় সুপ্রিমকোর্টের আছে। দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য সাধারণ জনগণ এবং ভুক্তভোগীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেইসঙ্গে প্রচলিত ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারায় নির্যাতনের শিকার নারী ও কন্যার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকায় নির্যাতনের শিকার নারী ও কন্যার মৌলিক মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ ধরনের আইন বাতিল করে সমতাপূর্ণ, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন আইন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে মহিলা পরিষদ।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবং সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।