৮ শতাংশ তরুণ অনলাইন বুলিংয়ের শিকার

নভেম্বর ১, ২০২১

গ্রামীণফোন ও টেলিনর গ্রুপ এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে কোভিড-১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে তরুণদের মাঝে ইন্টারনেট ব্যবহার ও অনলাইন বুলিং- কী ধরনের প্রভাব ফেলছে।

চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে জরিপটি পরিচালিত হয়েছে বলে গ্রামীণফোনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এই জরিপে মোট ৩ হাজার ৯৩০ জন অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ১৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ছিলেন বাংলাদেশি তরুণ। জরিপ থেকে জানা যায়, এই তরুণদের মধ্যে ৮৫ শতাংশের মতে, অনলাইন বুলিং একটি মারাত্মক সমস্যা। দেশে বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের যে ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বিষয়টির দিকে নজর রাখা এবং সচেতনতা তৈরির গুরুত্বও এখন অনেক বেড়েছে।

জরিপে অংশ নেওয়া দেশের ২৯ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, কোভিড প্রাদুর্ভাবের আগেই তারা বুলিং-এর শিকার হয়েছেন, যেখানে ১৮ শতাংশ জানিয়েছেন বৈশ্বিক মহামারি শুরুর পর থেকে তারা আরও বেশি অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন।

বাংলাদেশের ৮ শতাংশ তরুণ সপ্তাহে অন্তত এক বা একাধিক বার অনলাইন বুলিং-এর ভিক্টিম হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপস এবং অনলাইন গেমিং ও ভিডিও গেম স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম – এ তিনটি মাধ্যমে সাধারণত তরুণরা সবচেয়ে বেশি অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

চারটি দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীরা অনলাইনে বুলিং থামাতে তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রয়েছে বুলিকারীকে উপেক্ষা করা, যার ফলে ওই ব্যক্তিকে থামানো সম্ভব হয়; সিকিউরিটি সেটিংস পরিবর্তন করা, যাতে উত্ত্যক্তকারী ব্যক্তি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে; মা-বাবা বা অভিভাবকের সঙ্গে এই সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা।

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান টেলিনর জরিপে উঠে আসা সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের দায়বদ্ধতা পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, এ সমস্যাগুলো দূর করার জন্য আমরা টেলিনর ও ইউনিসেফের মত পার্টনারদের সহযোগিতায় সচেতনতা বাড়াতে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনলাইনে নিরাপদ রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন এবং তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতে হবে। এজন্য তাদের অনলাইনে নিরাপদ রাখতে আমাদের আরও দৃঢ় সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব ও প্রতিশ্রুতি নিতে হবে। জরিপের ফল বলে দিচ্ছে এটি একটি গভীর সমস্যা আর এ সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে আরও বেশি কাজ করতে হবে। এটা অনেক আশাব্যঞ্জক যে, বাংলাদেশ সরকার সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় পাঠ্যক্রমে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার মতো সময় উপযোগী একটি পদক্ষেপ নিয়েছে।

এ সম্পর্কে সাস্টেইনেবিলিটি ফর টেলিনর ইন এশিয়ার ভিপি মনীষা দোগরা বলেন, বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন তরুণদের ইন্টারনেটে সময় কাটানোর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফলে অনলাইনে তাদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখার উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সচেতনতা, অনলাইন বুলিং সম্পর্কে প্রশিক্ষণ এবং ডিজিটাল রেজিলিয়েন্স তৈরি– এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সব অংশীজনদের কাজ করা প্রয়োজন। এটি শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, বরং অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সবার এ বিষয়ে সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, টেলিনরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে, তবে এক্ষেত্রে সরকার, সুশীল সমাজ এবং অ্যাকাডেমিয়াদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে সহযোগিতামূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে এর ফলাফল আরও ইতিবাচক করা যাবে।

জরিপে অনলাইনে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে তরুণরা আরও কী কী ধরনের নির্দেশিকা ও প্রশিক্ষণ চায় সে ব্যাপারেও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। জরিপের ফলাফলে দেখা যায় যে, তরুণরা অনলাইনে হয়রানি মোকাবিলায় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস (৫৬%), অনলাইনে তাদের গোপনীয়তা রক্ষা (৪৬%) এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতি (৪৩%) সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী। এছাড়াও, অংশগ্রহণকারীরা মেসেজিং অ্যাপে (৪০%) অনলাইন বুলিং থেকে সুরক্ষা পেতে এবং গেমিং ও স্ট্রিমিং ভিডিও গেমসের (৩৭%) সময় অনলাইন বুলিং প্রতিহত করতে আগ্রহী।

জরিপ থেকে এটিও জানা যায় যে, বাংলাদেশে চালানো জরিপের অধীনে ৮৬ শতাংশ তরুণ কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকে ইন্টারনেটে আরও বেশি সময় কাটাচ্ছে। সেইসঙ্গে, ৩৫ শতাংশ তরুণ জানিয়েছে তারা সারাক্ষণই ইন্টারনেট ব্যবহার করে, ১৫ শতাংশ প্রধানত সন্ধ্যায় ব্যবহার করে এবং কেবলমাত্র ২ শতাংশ শুধু স্কুল চলাকালীন ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে।

ইন্টারনেটে তরুণ ব্যবহারকারীদের অনলাইন কার্যক্রম সুরক্ষিত করা গ্রামীণফোনের দীর্ঘদিনের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি। শিশু ও তরুণদের অনলাইনে সুরক্ষিত রাখতে আমরা ২০১৬ সাল থেকে আমাদের পার্টনার ও কমিউনিটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ ডিজিটালি রেজিলিয়েন্ট ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত প্রজন্ম গড়ে তুলতে আমাদের জনসচেতনতামূলক উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ইন্টারনেটের দুনিয়ায় জানতে হবে, কোথায় আপনার থামতে হবে’, বি স্মার্ট ইউজ হার্ট’, ঠিক লাইনে অনলাইনে’; পাশাপাশি, অনলাইন টেইনিং কারিকুলাম ‘ডিজিওয়ার্ল্ড’ এবং ব্র্যাক ও ইউনিসেফের মতো সংস্থার সঙ্গে পরিচালিত স্কুল আউটরিচ প্রোগ্রাম।