প্রিপারেটরির ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্য: শাস্তিযোগ্য বলছেন আইনজীবীরা

অক্টোবর ২৮, ২০২১

শারীরিক ও মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জের শিকার শিশুদের জীবন সহজ করতে বারবার নানামুখী নির্দেশনা নেওয়া হয়। কিন্তু সেসবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজধানীর প্রিপারেটরি স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, ‘ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।’ এক্ষেত্রে খুদে শিক্ষার্থীর ওজনও বেঁধে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাবিদ ও আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন ২০১৩-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং শিশুদের এ ধরনের বৈষম্যের মধ্যে ঠেলে দেওয়া অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২০২২ সালে প্লে গ্রুপে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও নিয়মাবলি বেঁধে দিয়েছে। ‘শিক্ষার্থীর যোগ্যতা’ অংশে বয়স, উচ্চতার পাশাপাশি ওজন কত হতে হবে, দুধদাঁত থাকতে হবে, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা সংক্রান্ত নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। স্কুলটির ওয়েবসাইটে ২০২২ সালে প্লে গ্রুপে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর যোগ্যতা ও নিয়মাবলির বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া আছে।

তাতে উচ্চতার শর্তে বলা হয়েছে, তিন ফুট থেকে তিন ফুট আট ইঞ্চির মধ্যে হতে হবে। ওজনের শর্তে লেখা আছে, ১৩ থেকে ২১ কেজির মধ্যে হতে হবে। ওজনের অংশে তিনটি উপ-শর্ত দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো—শিক্ষার্থীর সব দুধদাঁত (২০টি) অটুট থাকতে হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। ছোঁয়াচে রোগ থাকলে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে না।


এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. বেলায়েত হুসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই নিয়মগুলো চলে আসছে। এতদিন কেউ আপত্তি তোলেনি। তবে সামনে আমাদের মিটিং আছে। তাতে কিছু পরিবর্তন আনা হবে।

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শর্তগুলো গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একজন মানুষের শারীরিক অক্ষমতা থাকতে পারে, তাতে সে তার মৌলিক অধিকার-বঞ্চিত হবে, এটা খুব আপত্তিকর। এটি মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন। তারা যদি বলে থাকে ১৯৭৬ সাল থেকে এই টার্মস-কন্ডিশনে স্কুল চালাচ্ছে, তবে তদন্ত হওয়া দরকার যে তারা এতদিন এসব শর্ত কীভাবে বহাল রেখেছিল।’

ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বলেন, ‘দাঁতের বিষয়টি ছাড়া সবগুলো বৈষম্যমূলক, আপত্তিকর ও আইনের লঙ্ঘন। যা কিছু আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তা নিয়ে আপনাকে বৈষম্যের শিকার হতে যেন না হয়। যদি সেসব ক্ষেত্রে দোষারোপ করা হয়, সেটা মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে এটা কোনও বিজ্ঞপ্তিতে লেখার সুযোগ নেই। মানসিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্তকে বঞ্চিত করা যাবে না। এটি প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন ২০১৩-এর লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

তিনি আরও বলেন, যখন কেউ নিজেদের অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করতে শুরু করেন তখন তাদের এমন ‘ক্লাসিস্ট কলোনিয়াল মাইন্ড সেটআপ’-এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তখন তারা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবা শুরু করেন।’