রাজপথ ছাড়ছে না সেনাবিরোধীরা, আরও চাপে মিয়ানমার জান্তা

মার্চ ২১, ২০২১

মিয়ানমারের জান্তাবিরোধীরা শনিবারও রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ চলাকালে গত কয়েকদিন ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার পরও রাজপথ ছাড়ছেন তা গণতন্ত্রের সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধের জন্য সামরিক জান্তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশই বাড়ছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে পশ্চিমাদের পাশাপাশি এবার সোচ্চার হয়েছে আসিয়ান প্রতিবেশীরাও। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।

শনিবারও বিক্ষোভে একজন নিহত হয়েছে। প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়। এর ফলে ১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৮ জনে। তবে এই রক্তপাতও সামরিক শাসন ফিরে আসার ক্ষোভ দমাতে পারেনি। যদিও কয়েকজন অ্যাক্টিভিস্ট মনে করেন, বিক্ষোভকারীদের কৌশল পাল্টানো উচিত।

ডাওয়েই এলাকার ক্যাম্পেইনার কিয়াও মিন তিকে বলেন, যেখানে পুলিশ বা সেনাবাহিনী নেই সেখানে বিক্ষোভ করছি। পরে যখন শুনি তারা আসছে তখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিপ্লব না হওয়া পর্যন্ত যে কোনও উপায়ে আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব।

কয়েকটি গোষ্ঠী মোমবাতি ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাতে সমাবেশিত হচ্ছে। ছবি তোলার পর তারা অন্ধকারে হারিয়ে যায়। অজ্ঞাত বিক্ষোভও আয়োজন করছেন দেশটির নাগরিকরা। এ বিক্ষোভে তারা প্ল্যাকার্ড সারিবদ্ধভাবে রাস্তায় রাখছেন। এসব প্ল্যাকার্ডে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের পক্ষে স্লোগান লেখা থাকে।

শনিবার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে কয়েক জন বিক্ষোভকারী জড়ো হন। এসময় একটি গাড়ি তাদের উপর চালিয়ে দেওয়া হলে কয়েকজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পুলিশও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়েছে। তবে গাড়িটি কেন বিক্ষোভকারীদের আঘাত হেনেছে তা স্পষ্ট নয়।

মিয়ানমারের অন্যান্য শহরে ছোট আকারে বিক্ষোভ হয়েছে। মনিওয়া শহরে কয়েকশ’ মানুষ মিছিল করেন এবং ২০০৮ সালের সংবিধান পুড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এই বিষয়ে মিয়ানমার জান্তার এক মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেনি রয়টার্স। তবে এর আগে সামরিক সরকার জানিয়েছিল, যখন প্রয়োজন হয়েছে তখন শক্তি ব্যবহার করেছে নিরাপত্তাবাহিনী।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থোনিও গুতেরেজ শুক্রবার মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সমালোচনা করেছেন। বিক্ষোভে নিহতের ঘটনাটিকে নৃশংস সহিংসতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানান।

জাতিসংঘের র‍্যাপোটিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ জনগণের ওপর নির্মম হামলার জন্য সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, বিশ্বের উচিত অর্থ ও অস্ত্র প্রাপ্তি বন্ধ করে জবাব দেওয়া।

পশ্চিমা দেশগুলো বারংবার সামরিক অভ্যুত্থান ও সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে আসছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে একে অন্যের সমালোচনা করা থেকে বিরত আসিয়ান জোটের সদস্যরাও মুখ খুলতে শুরু করেছে।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো আঞ্চলিক নেতা হিসেবে সবচেয়ে কঠোর মন্তব্য করেছেন। শুক্রবার তিনি বলেছেন, সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। আসিয়ান সভাপতিকে জরুরি বৈঠক আহ্বান জানাবেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন জানিয়েছেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারে তিনি মর্মাহত। সিঙ্গাপুরও তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছে।

তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী পিছু হটার কোনও ইঙ্গিত দিচ্ছে না এখন পর্যন্ত। তারা এখনও ক্ষমতা দখলের পক্ষে সাফাই গাইছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের সেনা সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাং শনিবার কোকো আইল্যান্ড পরিদর্শন করেছেন। সেখানে সামরিক কর্মকর্তা ও নার্সদের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন কেন তাকে ক্ষমতা দখল করতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান শুরু থেকেই দেশটির জনগণের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। ব্যাপক দমন-পীড়ন ও নিরাপত্তা বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ উপেক্ষা করে রাস্তায় নামছে মানুষ। প্রতিদিন বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ২৩৮ জন নিহত হয়েছে।