অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমি নিয়ে বিতর্ক, রাস্তায় বিশিষ্টজনেরা

ডিসেম্বর ২৭, ২০২০

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সীমানায় বিশ্বভারতীর জমিও ঢুকে গিয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অমর্ত্য সেন এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। অমর্ত্যের পক্ষে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে রবিবার রাস্তায় নামছেন বিশিষ্টজনেরা। কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিশ্বভারতীর দাবি, গত শতকের চল্লিশের দশকে অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেনকে ১২৫ ডেসিমেল জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। এই জমিতেই গড়ে উঠেছে অমর্ত্যবাবুদের পারিবারিক বাড়ি ‘প্রতীচী’। ২০০৬ সালে অমর্ত্য সেনের আবেদনের ভিত্তিতে জমির লিজ তার নামে হস্তান্তর করা হয়। তবে জমির মাপ করে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি লিজ দেওয়া জমির মধ্যবর্তী বিশ্বভারতীর নিজস্ব ১৩ ডেসিমেল জমিও ঢুকে রয়েছে ‘প্রতীচী’র সীমানার ভিতরে। অর্থাৎ, ‘প্রতীচী’র জমির পরিমাণ এখন ১৩৮ ডেসিমেল। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, রজতকান্ত রায় যখন উপাচার্য ছিলেন, তখন অমর্ত্যবাবুকে বিষয়টি একাধিকবার মৌখিকভাবে জানানো হলেও তিনি উচ্চবাচ্য করেননি।

তবে অমর্ত্য সেন বলছেন, ‘বিশ্বভারতীর যে জমিতে আমাদের বাড়ি, সেটি পুরোপুরি দীর্ঘমেয়াদি লিজ নেওয়া আছে, এবং সেই লিজের মেয়াদ ফুরোতে এখনও বহু দেরি আছে। আমার বাবা নিজে আরও কিছু জমি কিনেছিলেন, সুরুল মৌজার সরকারি খতিয়ানে তার মালিকানার তথ্যও যথাবিধি নথিভুক্ত আছে।’

বৃহস্পতিবার নোবেলজয়ীর পক্ষে দাঁড়িয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তথা কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বলেই অমর্ত্য সেনের মতো মনীষীকে আক্রমণ করা হচ্ছে। বাংলার পক্ষ থেকে অমর্ত্য সেনের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার সরাসরি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে কিছু নব্য বহিরাগত আপনার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে আশ্চর্যজনক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন। এতে আমি বেদনাহত এবং দেশের সংখ্যাগুরুদের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যে লড়াই আপনি শুরু করেছেন, আমি তাকে পূর্ণ সমর্থন জানাই। এই লড়াই-ই আপনাকে এই সব অসত্য শক্তির শত্রুতে পরিণত করেছে।’’ অসহিষ্ণুতা ও সর্বগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে তাকে ‘বোন ও বন্ধু’ হিসেবে গণ্য করার জন্যও অমর্ত্য সেনকে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

শুক্রবার এই বিতর্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অমর্ত্য সেন সাফ জানান, ‘‘বিশ্বভারতী কোনও দিন আমাদের জমি নিয়ে কোনও অনিয়মের কথা জানায়নি।’’ এ ব্যাপারে যা করার, তা তিনি আইনের সাহায্যেই করবেন।

আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, বিজেপি তথা সংঘ পরিবারের মতাদর্শের বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেন দীর্ঘদিন ধরেই সরব। তার অভিযোগ, ভারতে বহু শতক ধরে চর্চিত বহুত্ববাদী ভাবধারাকে ধ্বংস করতে চায় কেন্দ্রের শাসক শক্তি। এ জন্য অতীতে বহু বারই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। বলা হচ্ছে, ‘প্রতীচী’র জমি ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ তোলাটা সেই আক্রমণেরই নতুন দিক।