পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার অবদান।। সুমন দত্ত

ডিসেম্বর ১২, ২০২০

দক্ষিণের ২১টি জেলার অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে ১.২ পারসেন্ট জিডিপি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এ ধারণা ভুল প্রমাণ হতে পারে। এতদিন দক্ষিণের জেলাগুলোতে লোকজনের আগ্রহ ছিল কম। এখন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে গেলে এর গুরুত্ব বেড়ে যাবে। আর সেটা যাবেই। কারণ খুলনা অংশটি প্রতিবেশী ভারত লাগোয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ওই পথে বাড়বে।

বাংলাদেশ এই ডিসেম্বরে হানাদার মুক্ত হয়েছে। এটা বিজয়ের মাস। আর এ মাসেই দেশের শত্রুদের মুখে ছাই দিয়ে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শেষ হলো। আজ সরকার বিরোধীদের মুখে শুধু একটাই বুলি। সেতুর দাম বেশি। তারা কখনই ভাবে না এই সেতু শুধু সড়কই নয় । আছে রেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ। হয়েছে নকশার পরিবর্তন। এসব কিছুর কারণে পদ্মা সেতুর দাম বেশি। বাংলাদেশে অন্য সেতুগুলোর মতো এই সেতু নয়।

শত্রুরা চেয়েছিল এই সেতু যাতে না হয়। দেশ বিরোধীরা অনেক চক্রান্ত করেছে। যার ফলে বিশ্ব ব্যাংক এই সেতু অর্থায়নে প্রথমে রাজী হয়ে পরে পিছিয়ে আসে। এরপর অন্য সহযোগীরা পিছিয়ে যায়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি এই কাজ করবেনই। দেশের অর্থায়নে তিনি এই সেতুর কাজ করে দেখালেন।

দেশবাসীর আশা এভাবে তিনি সব বাধা পেরিয়ে দেশের যোগাযোগ খাতকে আরো উন্নত করবেন। গ্রামকে শহর করার পরিকল্পনা তিনি নিয়েছেন। সেটা আগামীতে বাস্তবায়ন হবে। আর সেটার সূত্র হবে দেশের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

পদ্মা সেতু শুধু দেশের দক্ষিণ অংশের ২১ জেলার জন্যই নয়। এটা বহুমুখী সেতু। এর গুরুত্ব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক। এই সেতুর ওপর ভিত্তি করেই সচল হবে মোংলা ও পায়রা বন্দর। আর এই দুই বন্দর ব্যবহার করবে নেপাল ও ভুটানের মতো দেশগুলো।

প্রতিবেশী ভারতের আসাম ও ত্রিপুরাও পাবে একই সুবিধা। এমনও হতে পারে এটা নেপাল হয়ে সুদূর চীন পর্যন্ত যেতে পারে। ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো হয়ে গেলে এই পথে চীনের যোগাযোগও বাড়তে পারে।

বর্তমান বিশ্বে সামরিক যুদ্ধের চাইতে অর্থনৈতিক যুদ্ধটা বেশি। তাই অর্থনীতির কারণে দেশ বিদেশে পলিসি পরিবর্তন হয়ে যায়।

পদ্মা সেতুর কারণে বাংলাদেশের সব অংশের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হলো। ঢাকা কেন্দ্রিক অর্থনীতি এখন বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। সড়ক ও রেল পথে পণ্য পরিবহন হবে। এতে চাপ কমবে নৌ পথের।

দক্ষিণের ২১টি জেলার অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে ১.২ পারসেন্ট জিডিপি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এ ধারণা ভুল প্রমাণ হতে পারে। এতদিন দক্ষিণের জেলাগুলোতে লোকজনের আগ্রহ ছিল কম। এখন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে গেলে এর গুরুত্ব বেড়ে যাবে। আর সেটা যাবেই। কারণ খুলনা অংশটি প্রতিবেশী ভারত লাগোয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ওই পথে বাড়বে।

এছাড়া পর্যটন খাতেও আসবে একটি বড় বিনিয়োগ। প্রতি বছর সুন্দরবন ঘুরতে যায় দেশি বিদেশি পর্যটক। অনেকে কুয়াকাটা ভ্রমণ করে। সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় সেখানে পর্যটকের ঢল নামবে। এতে ওই অঞ্চলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

শিক্ষার ক্ষেত্রে ঘটে যেতে পারে আমূল পরিবর্তন। নতুন নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠতে পারে সেখানে। সরকারিভাবে মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পদ্মা সেতু অনেক পরিবর্তনই আনবে।

পদ্মা সেতুর পর সরকার দক্ষিণের জেলারগুলোর সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। এসব পরিকল্পনার কোনো কোনোটি একনেকে পাশও হয়ে গেছে। আগামী ৪-৫ বছর এই পরিকল্পনা গুলো বাস্তব রূপ পাবে। তখন পদ্মা সেতুর গুরুত্ব আরো বড় করে দেখা হবে।

বর্তমান সরকার এদেশের মানুষের সেবা প্রাপ্তি অনেক সহজ করে দিয়েছে। প্রতিটি নাগরিক সেবা এখন আধুনিক ডিজিটাল সেবায় চলে যাচ্ছে। এতে নাগরিক ভোগান্তি কমে আসছে। এক সময় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার ফল জানতে স্কুলে কিংবা বোর্ডে যেত। এখন মোবাইলে ফল এসে যায়। ভর্তির জন্য লাইনে দাড়িয়ে ফরম জমা দিত। এখন মোবাইলেই সবকিছু জমা হয়ে যায়। এমনকি ‘ফি’টাও।

একই ব্যবস্থা প্রতিটি চাকরির ক্ষেত্রে। লাইনে দাড়িয়ে বিদ্যুৎ, পানির, গ্যাস বিল দেয়া লাগে না। এমনকি সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্সও এখন বাড়িতে বসেই দেয়া যায়।

জাতি আজ লোডশেডিং মুক্ত। সরকারি চাকরিতে বেতন বেড়েছে। শিক্ষকদের বেতন বেড়েছে। অবসরে যাওয়া বৃদ্ধ চাকরিজীবীরা আবার নতুন করে পেনশন পাচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ সুবিধা বাড়ছে। সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। রাজাকারদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে তিনি ৭১ এর অপরাধীদের বিচার করতে সহায়তা করেছেন। দেশবাসী আজীবন তার এই অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

শেখ হাসিনা জাতিকে কালা ছাগল ও খাম্বা মার্কা উন্নয়ন দেন না। তিনি জাতিকে সত্যিকারের উন্নয়ন দেন। শেখ হাসিনাই পারেন উদার মনে দেশকে কিছু দিতে। আর তিনি ছাড়া বাকীরা পারেন লুটে পুটে নিতে।

পরিশেষে বলতে চাই। পদ্মা সেতুর জন্য থ্যাংক কিউ প্রধানমন্ত্রী।

লেখক সাংবাদিক তারিখ: ১২-১২-২০২০