একটি দ্বীপপুঞ্জকে ঘিরে যত জাতীয়তাবাদের উত্থান

এপ্রিল ১৮, ২০১৩

UT_2311230bঢাকা জার্নাল: একটি দ্বীপপুঞ্জকে নিয়ে জাপান ও চীনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে৷ জাপানে সেনকাকু ও চীনে ডিয়াওউ বলা হয় এটিকে৷ তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ এই জায়গাটির দাবিদার দুটি দেশই৷ কেউ ছাড় দিতে রাজি নয়৷

এশিয়ার দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপান ও চীনের মধ্যে এই বিবাদবিসংবাদ শুধু মাত্র জ্বালানি পদার্থের স্বত্বাধিকার নিয়েই নয়৷ জাতীয়তাবাদী এক তীব্র অনুভূতিও এর সঙ্গে যুক্ত৷ কেননা চীনের ইতিহাসে জাপান বিরোধী মনোভাব আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত৷

ইন্টারনেশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের স্টেফানি ক্লাইনে আলব্রান্ট এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কয়েক দশক ধরে চীন সরকার তথাকথিত স্বদেশ প্রেমের প্রচারণা চালাচ্ছে৷ চীনের গণমাধ্যমগুলিতে প্রায়ই দখলদারি শক্তি জাপানের নিষ্ঠুরতা ঢাকঢোল পিটিয়ে চিত্রিত করা হয়৷ জাপানের বিরুদ্ধে চীনের ঐতিহাসিক বিজয়কে ফলাও করে প্রচার করা হয়৷ আর এক্ষেত্রে চীনের কম্যুনিস্ট সরকারের জয়গানেও সোচ্চার প্রচার মাধ্যমগুলি৷”

ভাবমূর্তির পুনরুদ্ধার

বিদেশি শক্তি কর্তৃক শতবর্ষের নির্যাতন ও অবমাননার বিরুদ্ধে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে পেরেছে৷ এটাই আজ বড় করে দেখানো হচ্ছে৷

কমিউনিস্ট পার্টির ভাবমূর্তি দেশে বিদেশে বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার বিষয়টিকে সামনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান শি চিনপিং ‘চীনের স্বপ্ন’ ও ‘জাতীয় শক্তির পুনরুদ্ধার’-এর ব্যাপারে সোচ্চার এখন৷ চীন বিশেষজ্ঞ গ্যুন্টার শুবার্ট দ্বীপ নিয়ে ঝগড়াঝাঁটির ব্যাপারটিকে একটি রাজনৈতিক ইস্যু বলে মনে করেন৷ দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্বচ্ছতা পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য দিয়ে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷

জনসাধারণের ওপর সেরকম ভাবে আর প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না চীনের নেতৃত্ব৷ সেন্সরের কড়াকড়ি সত্ত্বেও আজ প্রযুক্তির জয়যাত্রাকে ঠেকানো যাচ্ছে না৷ ইন্টারনেট, এসএমএস, টুইটার ইত্যাদির দৌলতে মানুষের চোখকে বন্ধ করে রাখা যাচ্ছেনা৷

প্রযুক্তির মহিমা

চীন বিশেষজ্ঞ স্টেফানি ক্লাইনে আলব্রান্ট বিষয়টিকে এই ভাবে দেখছেন: ‘‘চীন সরকার জনসাধারণকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছে, বিশেষ করে যাদের কন্ঠস্বর ক্রমেই জোরালো ও সমালোচনামুখর হচ্ছে৷ চীনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা উপকূলরক্ষা বাহিনীর জাহাজগুলিকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে লক্ষ্য করছেন৷ সরকারকে সমালোচনা করে তারা বলছেন, ‘‘দ্বীপটির কাছাকাছি যাওয়াও তোমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি৷” প্রযুক্তির এই মাধ্যম জাতীয়তাবোধকে এক রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর করেছে৷ যার ফলে সরকারের বৈধতাই এখন হুমকির মুখে পড়ছে৷”

জাপানও পিছিয়ে নেই

বলা যায়, অতীতের দুর্বলতা ও অবমাননার অনুভূতি থেকে উত্থান ঘটেছে চীনে জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণার৷ অন্যদিকে, জাপানের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারে উল্টো৷ এ দেশটিতে জাতীয়তাবোধ জেগে উঠেছে অতীতের শক্তি হারানোর বেদনা থেকে৷ বার্লিনের ইতিহাসবিদ সেবাস্টিয়ান কনরাড বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘ঞ্চলিক প্রভাব ও প্রতিপত্তি হারানোর ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেবার জন্যই জাতীয়তাবোধকে আবার চাঙা করা হচ্ছে৷”

৯০-এর দশকেও জাপানে জাতীয়তাবাদী শক্তির তেমন উচ্চবাচ্য ছিল না৷ তখন দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল রমরমা৷ পূর্ব এশিয়ায় চীনের খুব বেশি আধিপত্য ছিল না৷ শক্তিশালী দেশ হিসাবে জাপান তখন তার উদারতাও দেখিয়েছিল৷ যুদ্ধের সময় ও দখলদারি শক্তি হিসাবে চীনে ঘটানো অপরাধের জন্য ক্ষমাও চেয়েছিল প্রতিবেশী দেশটির কাছে৷ কিন্তু জাপানের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ায় ও চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় চিত্রটা পাল্টে যায়৷ জাপানে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠ সরব হতে শুরু করে৷ সংখ্যার দিক দিয়ে খুব বেশি না হলেও বহু তর্ক বিতর্কের জন্ম দেবে তারা৷

সূত্র: ওয়েবসাইট

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.