কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বললেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

ডিসেম্বর ৬, ২০২০

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

“কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাংচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এটি একটি দুর্ঘটনা বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এটি লক্ষ্য করছে এবং এটি দুঃখজনক।”

রবিবার (৬ই ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান এর সৌজন্য সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এরআগে শুক্রবার রাতে কোনো একসময় কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখ ও বাম হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলা হয়। এর প্রতিবাদে শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, মশাল মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বপ্নভ্রস্টা এবং মানুষের ভাগ্যন্নতির জন্য তিনি সব সময় লড়াই সংগ্রাম আন্দোলন করেছেন। ওনার দর্শন আজকে প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করছে বলে বাংলাদেশ আজ হতদরিদ্র দেশ নয়। আমাদের দেশের ৮০ ভাগ মানুষ দারিদ্র ছিলো। মানুষ বলতো “মাগো সারাদিন কিছু খাইনি আল্লাহর ওয়াস্তে চারটা ভাত দাও” আমি শুনতে শুনতে বড় হয়েছি।

“শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষ খেয়ে পড়ে ভালো আছে। সেটা বঙ্গবন্ধুর অবদানের কারণে, তার দর্শনের কারণে, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের কারণে। এখন আমরা যদি তার সম্মান রক্ষা না করতে পারি তাহলে সেটা খুবই দু:খজনক। বঙ্গবন্ধুকে অপমান করলে তার কিছু হবে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য। বঙ্গবন্ধুর হত্যার কারণে বঙ্গবন্ধু ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি আমরা। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এবং তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০০০ সালেই বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্র পরিণত হতো। ফলে বঙ্গবন্ধু ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা।”

হেফাজতকে আওয়ামীলীগই নিয়ে এসেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে কথা বলা যাবে। আমরা কে কোন দল করে না করে তার চেয়ে বড় পরিচয় সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সকল নাগরিককে সরকার যথাযথ মর্যাদা দেয়ার চেষ্টা করে। এই দর্শর্শন বঙ্গবন্ধুর দর্শন। সরকারণে এটাকে কেউ অপব্যবহার করলে আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের তার দর্শন থেকে সরে যাওয়া ঠিক হবে না।

এটি কি আসলেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি গত কয়েকদিনের প্রক্ষাপটে ভাস্কর্য ভাংচুর, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা ঘটনা যেহেতু ঘটেছে সেহেতু এটাকে আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনাই বলব। এখানে তো সমগ্র মানুষ অংশগ্রহন করে নায়। পুরো জাতির সেন্টিমেন্ট তো আপনারা দেখছেন, আমি দেখছি। গোটা জাতির সেন্টিমেন্ট হলো বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা রক্ষা করা, তাকে স্মরণে রাখা। এরকম ভাস্কর্য তো তুর্কি মুসলিম দেশ হওয়া সত্বেও তাদের আছে, সৌদি আরব, আরব আমিরাতে তাদের হিস্ট্রিকাল ভাস্কর্য আছে। সেগুলো সম্পর্কে আমি মন্তব্য করতে চাইনা।

“যেহেতু একটা বিচ্ছিন্ন জায়গায় কিছু সংখ্যক লোক বা ব্যক্তিবিশেষ ঘটনা ঘটায় সেটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনাই বলে। এখন বিচ্ছিন্ন ঘটনার ডেফিনেশন তো অবশ্যই বুঝাতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুকে আমি মনে করি পুরো জাতি সম্মান করে। তার সম্মানের বিষয়ে পুরো জাতিই ঐক্যবদ্ধ।”

কুষ্টিয়ার ঘটনার পর কি সরকার মনে করছে ধোলাইপারের ভাস্কর্য নির্মাণ থেকে সরে আসা উচিত, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সরকারের যে সিদ্ধান্ত তা দেশ জাতি মানুষের অভিষ্ঠ লক্ষ্যকে সামনে রেখে। এবং সেখানে সবসময়ই কমবেশি কিছু প্রতিকূলতা থাকে। সেই প্রতিকূলতা মোকাবেলায় সরকার সচেস্ট।
হেফাজতের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা গভীরে গিয়ে দেখার বিষয় নয়। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় এবং সম্মান আছে। আমার মনে হয় না এটাকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি সবারই ভালোবাসা আছে।