সীমান্তে হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি মহাপরিচালকদের

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা ও মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আবারও সম্মত হয়েছে বিজিবি ও বিএসএফ। এজন্য ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় যৌথ টহল বাড়ানো, জনসচেতনতা মূলক কর্মসূচি জোরদার করাসহ প্রয়োজন অনুযায়ী আর্থসামাজিক উন্নয়নে কর্মসূচি গ্রহণ করে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতর পিলখানায় ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক রাকেশ আস্তানা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে যৌথ টহল পরিচালনাসহ সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সীমান্তে আক্রমণ ও হামলার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনের লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এতে উভয় বাহিনী উপকৃত হবে এবং তাৎক্ষণিক ও দরকারি তথ্য বিশেষ করে অধিকতর তদন্তের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র, চোরাকারবারীদের ডিজিটাল ফটোগ্রাফ উভয় বাহিনী বিনিময় করতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই সীমান্ত অপরাধ দমনে এবং আন্তর্জাতিক সীমানার অলঙ্ঘনীয় তা বজায় রাখতে সীমান্তে অতিরিক্ত সর্তকতা অবলম্বন করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

মানবপাচার ও অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে বিজিবি ও বিএসএফ সম্মত হয়েছে। যার যার দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মানবপাচারে ক্ষতিগ্রস্তদের যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার ও পুনর্বাসনের সুবিধা পেতে সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই আন্তর্জাতিক সীমানার কাঁটাতারের বেড়া কেটে অপসারণ করা ও বেড়ার ক্ষয়ক্ষতি রোধে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং নিয়মিত যৌথ টহল চালিয়ে যাবে।

মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের জাতীয়তা যাচাই করতে এবং একে অপরের সহযোগিতায় তাদের হস্তান্তর ও গ্রহণ ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছে। উভয়পক্ষই পূর্ব অনুমোদন ছাড়া ১৫০ গজের মধ্যে কোনও ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এছাড়া বন্ধ থাকা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ গুলো যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

যৌথ নদী কমিশনের অনুমোদন অনুযায়ী সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণে সহায়তা প্রদান এবং অনুনোমোদিতভাবে অভিন্ন সীমান্ত নদী তীর সংরক্ষণ কাজ না করতে উভয়পক্ষ সম্মতও হয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ করে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট ও রিট্রিট সেরিমনি উপলক্ষে দর্শক গ্যালারি নির্মাণে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন।

বিএসএফ মহাপরিচালক সন্দেহভাজন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজিবি ও বাংলাদেশের অন্যান্য বাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশ ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান ধ্বংস করতে বিজিবি অব্যাহত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। বিজিবি মহাপরিচালকের থেকে আশ্বস্ত করে বলা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কোন ক্যাম্প বা আস্তানা নেই। বাংলাদেশ কখনও তার ভূমি কোনও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা অন্য কোনও রাষ্ট্রের বিশেষ করে ভারতের কোনও শত্রুপক্ষকে ব্যবহারের সুযোগ দেয়নি। ভবিষ্যতেও দেবে না।

তিনি আরও জানান, নতুন ডিজাইনের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ না করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিজিবি এয়ার উইংয়ের দু’টি হেলিকপ্টারের অধিকতর ও ট্রেনিং অপারেশনাল ফ্লাইটের বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালককে অবহিত করেন বিজিবি মহাপরিচালক। যেকোনও ধরনের বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে তাকে তার বাহিনীর প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত অবহিত করার অনুরোধ জানান।

সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালকরা ও বিজিবি সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট স্টাফ অফিসারগণ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেন।

সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্তানার নেতৃত্বে ৬ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন। আজই তারা আগরতলা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাবেন।