কম ব্যান্ডউইথে বেশি সেবা দেওয়ায় দেশে ইন্টারনেটের গতি কম!

আগস্ট ২১, ২০২০

দেশের ইন্টারনেটে মাঝে মাঝে ধীরগতি ভর করছে। সমস্যা হচ্ছে পিক আওয়ারে। অন্য সময়ে সমস্যা কম হচ্ছে। জানা গেছে, দেশে হঠাৎ ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বেড়ে গেছে কিন্তু সেই তুলনায় ব্যান্ডউইথ বাড়ানো হয়নি। ফলে ব্রডব্যান্ড ‍ও মোবাইল ইন্টারনেট- দুই মাধ্যমেই মাঝে মাঝে ধীরগতি ভর করছে। অন্তত ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ বাড়ানো হলে এই সমস্যা দূর হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। কিন্তু অফিস আদালত খুলে যাওয়ায় আগের চেয়ে বেশি ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হলেও বেশিরভাগ ইন্টারনেট সেবাদাতারা (মোবাইল অপারেটরসহ) তা আপগ্রেড না করায় ব্যান্ডউইথের ঘাটতি পড়েছে। ঘাটতি না মেটানো পর্যন্ত এই সমস্যা থাকবেই। ব্যান্ডউইথ আপগ্রেড করতে গেলে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই তা থেকে বিরত থাকছে।

প্রসঙ্গত, দেশের দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে পাওয়া ব্যান্ডউইথের সবটা ব্যবহার হয় না। ওদিকে ভারত থেকে একাধিক আইটিসির (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) মাধ্যমেও ব্যান্ডউইথ আনা হয়। ফলে দেশে কোনও ব্যান্ডউইথের ঘাটতি নেই। যা ব্যবহার হচ্ছে- সে চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকছে ব্যান্ডউইথ। দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতারা চাহিদার ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ কিনে সরবরাহ করলেই ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে বসে অভিমত ব্যক্ত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, প্রায় সব অফিস খুলে গেছে। অফিসে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। যা কিছু দিন আগ পর্যন্ত একেবারে শূন্য ছিল। অফিস চালু হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ একটা চাপ পড়েছে। ওদিকে বাসাবাড়িতে আগের মতোই ব্যবহার হচ্ছে ইন্টারনেট। অনলাইন স্কুল, বিভিন্ন মাধ্যমে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখা, ওয়ার্ক ফ্রম হোম কিছু কিছু চালু থাকার ফলে মোট চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বাড়লেও ব্যান্ডউইথের সরবরাহ না বাড়ায় ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান, প্রায় ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের ঘাটতি রয়েছে। এটা মোট ব্যান্ডউইথে যোগ করলে গতি আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আগের মতো স্বাভাবিকভাবে লোকজন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে।

আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক জানান, আপস্ট্রিমে ব্যান্ডউইথ রয়েছে। যাদের প্রয়োজন তারা কিনে তাদের সিস্টেম যোগ করলেই এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। যারা ভালো সার্ভিস দিতে চায় তারা অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ কিনে সেবা ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। তিনি মনে করেন, দেশের সব মার্কেট এখনও খোলেনি। আমাদের নারী ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই (৬০-৭০ শতাংশ) এখনও ঘরেই থাকছেন। ফলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটই ব্যবহার করছেন। এ কারণে ব্রডব্যান্ডের ওপর চাপ বেড়েছে। তারা বাইরে গেলে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন। ফলে একটা সামঞ্জস্য রক্ষা হতো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউনের সময় সবাই বাসায় থাকতো। তখন ভাগাভাগি করে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হতো। গতি সবাই ভালোই পেতো। এখন দেখা যাচ্ছে, সন্তানরা বাসায় থাকছে। তারা আগের চেয়ে ভালো গতি পাচ্ছে নেটে। ওদিকে বাবা মা অফিসে গিয়ে ইন্টারনেটে লগইন করছে। এভাবেই ব্যবহার বাড়ছে। অবস্থা আগের মতো স্বাভাবিক হলে এই ব্যান্ডউইথেই আগের মতো গতি পাওয়া যাবে। কারণ হিসাবে তারা মনে করেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় হঠাৎ করে প্রায় ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময় ফিরে এলে ব্যবহারের পরিমাণ ৩০০ জিবিপিএস থেকে কিছু কমতেও পারে। কিছু কমলেও তা কোনও প্রভাব ফেলবে না। গতি স্বাভাবিকই থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যে অতিরিক্ত ২০০ জিবিপিএস’র চাহিদা বেড়েছে তা কিনে পূরণ না করে সময়ের অপেক্ষায় থেকে তা সমন্বয় করার চেষ্টা করা হবে যাতে, এ সংক্রান্ত ব্যয় বৃদ্ধি না পায়।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ওভারহেড ক্যাবল অপসারণ করার পরে নতুন করে সংযোগ রিস্টোর শুরু হয়। আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক জানান, এখনও ৪০ হাজার গ্রাহক সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছেন। এই কারণেও সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহার সমস্যা হচ্ছে।

জানা গেছে, গত ঈদের পরে মোবাইল অপারেটররা তাদের ব্যান্ডউইথ আপগ্রেড করেনি। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের চাপ বাড়লেও ব্যান্ডউইথ সীমাবদ্ধ থাকায় গত কয়েকদিন ধরে মোবাইল ইন্টারনেটেও ধীরগতি পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মাঝে টুজিও দেখা যাচ্ছে মোবাইলের পর্দায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল দেশের একটি মোবাইল ফোনের ডাটা সেন্টার ডাউন হয়ে যাওয়ায় ওই অপারেটরটির গ্রাহকরা বুধবার (১৯ আগস্ট) দিনের বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় ‘সমস্যা’ পেয়েছেন। ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারলেও পেলেও তাতে ছিল ধীরগতি। ওই সূত্রের দাবি, মোবাইল অপারেটররা ব্যান্ডউইথ আপগ্রেড করলে ইন্টারনেটের এই সমস্যা থাকবে না। একই কথা আইএসপিগুলোর (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) বেলায় প্রযোজ্য বলে তিনি মনে করেন। তার জানা মতে কয়েকটা আইএসপি ব্যান্ডউইথ আপগ্রেড করেছে। ফলে তাদের সেবা ভালো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। যাদের খারাপ হচ্ছে ব্যান্ডউইথের ঘাটতির কারণেই হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন আইএসপিগুলোর ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা।

তিনি জানান, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সবে খুলতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো বকেয়া পরিশোধ করতে চাইছে না ইন্টারনেট ব্যবহার না হওয়ায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তো তাদের সেবা রেডি ছিল, লাইনম্যানরাও ছিল, কিন্তু তারা বকেয়া পরিশোধে অনাগ্রহী। কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান কিছু অংশের বিল পরিশোধে রাজি হলেও কবে করবে তা ঠিক হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে চুক্তি করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কস্ট কাটিংয়ে যাচ্ছে। আগের চেয়ে অর্ধেক দামে একই সেবা নিতে চায়। আমি যদি চুক্তি না করি তাহলে অন্যরা এই সুযোগ নেবে। আমি গ্রাহক হারাবো। এসবের ফলে আমার আয় কমে যাচ্ছে। ফলে আমার পক্ষে ব্যান্ডউইথ আপগ্রেড না করে সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ইন্টারনেটের গতি তো কমবেই।