‘পরার্থপরতার’ অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ

এপ্রিল ১, ২০২০

ড. নাজনীন মনে করেন, করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধের সময় দেশের ১৬ কোটি মানুষের কথা ভাবতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া নয়, দেশকে বাঁচাতে দেশের মানুষকে বাাঁচতে যা করা প্রয়োজন তাই করতে হবে। আর এই যুদ্ধে জাতি বিত্তবানদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ মানবিক ভূমিকা আশা করে।

বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি, গরীব মানুষের জন্য করণীয়, নির্দিষ্ট আয়ের চাকরিজীবী ও প্রণোদনা নিয়ে অনেক অর্থনীতিবিদই এই সময় সংবাদমাধ্যমে কথা বলছেন। বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদও তার বাইরে নন। তবে শুরু থেকেই আমি খেয়াল করেছি তিনি তার অবস্থান এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে দেশের সাধারণ মানুষকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আর কখনোই তিনি তার অবস্থান থেকে সরে যাননি।

আমার মনে হয়েছে এই সময়ে তিনি এক মানবিক যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন। তিনি এক সাম্য ও সমতার অর্থনীতির কথা বলছেন। ড. আকবর আলি খানের ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ হয়তো এটাই। আর ড. নাজনীন আমার দৃষ্টিতে ‘পরার্থপরতার অর্থনীতিবিদ’।
করোনাকালে এ পর্যন্ত আমি ড. নাজনীনের যেসব লেখা এবং সাক্ষাৎকার পড়েছি ও দেখেছি তাতে যা তিনি বলেছেন তার মূল কথা হলে—

১. এটা একটা যুদ্ধ। মানবিক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমাদের একাত্তরের মতই একসাথে লড়াই করতে হবে।

২.সবার আগে গরীব মানুষ, মেহনতি মানুষ, কৃষক, শ্রমিকের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. এটা শুধু সরকারের একার কাজ নয়। বিত্তবানসহ সবাইকে যার যার সাধ্যমত এগিয়ে আসতে হবে।

৪. প্রণোদনার জন্য প্রতিযোগিতা না করে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। যেসব শিল্প মালিক সবল তাদের উচিত হবে দুর্বলদের সহয়াতা করা।

৫. প্রণোদনার টাকা শ্রমিকদের বেতন দিতে নয়, শিল্প সুরক্ষার কাজে লাগাতে হবে। সরকারের দেয়া টাকার সাথে শিল্প মালিকরাও টাকা দিয়ে একটা ফান্ড করতে পারেন।

৬. বাংলাদেশের হোটেল রেস্তোরার শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা চালক, কৃষক, গৃহকর্মী, পরিবহণ শ্রমিক তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা জরুরি। তাদের প্রণোদনা দেবে কে?

৭. শ্রমিকদের বেতন আগামী অন্তত তিন মাস মালিকদেরই দেয়া উচিত। তারপর পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া যাবে। আর এই সময়ে ছাঁটাই বা চাকরিচ্যুত করা যাবেনা। মনে রাখতে হবে এতদিন ব্যবসা করেছেন। এখন সংকটে দেশের মানুষর পাশে থাকার পালা।

৮. শ্রমিকদের সবেতন ছুটি দিতে হবে। প্রয়োজনে একমাসের অগ্রিম দিতে হবে।

৯. প্রণোদনা দিতে হলে দিতে হবে সত্যিকারে বিশেষ করে ছোট আকারের শিল্প যারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এটা কোনো সেক্টর ভিত্তিক হতে পারেনা।

১০.কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা করে এই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

ড. নাজনীন মনে করেন, করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধের সময় দেশের ১৬ কোটি মানুষের কথা ভাবতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া নয়, দেশকে বাঁচাতে দেশের মানুষকে বাাঁচতে যা করা প্রয়োজন তাই করতে হবে। আর এই যুদ্ধে জাতি বিত্তবানদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ মানবিক ভূমিকা আশা করে।
ড. নাজনীন আহমেদের মত আরো অনেক অর্থনীতিবিদ হয়তো ভাবেন। তাদের ভাবনা এবং কথা আরো স্পষ্ট হবে বলে আশা করি।