হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডব ছুঁতে পারেনি দিল্লির যে মহল্লা

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০

উত্তর-পূর্ব দিল্লির পাশাপাশি দুই এলাকা জাফরাবাদ ও মৌজপুর। গত রবিবার ভারতের রাজধানীতে চলতে থাকা হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডবের শুরু ওই দুটি এলাকায়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্রও। ৩ দিন পরেও ওই দুই এলাকার এক কিলোমিটার পথজুড়ে ইট-পাথরের টুকরোর সঙ্গে পড়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া গাড়ির ধ্বংসাবশেষ। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না সেখানকার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতেও ওই অঞ্চলে গিয়ে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি বজায় রাখা এক মহল্লার সন্ধান পেয়েছেন সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির সাংবাদিকেরা।
দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের হিন্দুত্ববাদী উসকানির পর গত রবিবার দিল্লিতে শুরু হয় তাণ্ডব। মসজিদসহ মুসলিমদের দোকানে তাণ্ডব চালানোর পাশাপাশি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বহু গাড়ি। অন্তত ২৩ জন নিহতসহ আহত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। তিন দিনের তাণ্ডবের পর জাফরাবাদ ও মৌজপুর এলাকার পরিস্থিতি দেখতে যান এনডিটিভির দুই সাংবাদিক।

জনশূন্য ওই দুই এলাকার মাঝামাঝি স্থানে একটি ব্যারিকেডের পেছনে কিছু মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন এনডিটিভির সাংবাদিকেরা। পরিচয় পাওয়ার পর তাদের ভেতরে ঢুকতে দেন। হিন্দু-মুসলমানদের বসতি থাকা এই এলাকাটিতে এখনও তাণ্ডব ঢুকতে পারেনি বলে জানান তারা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজ আহমেদ জানান, ‘সহাবস্থান থাকা এটাই শেষ রাস্তা। রাস্তার (জাফরাবাদের দিকে ইঙ্গিত করে) এদিকে মুসলমানদের বাস আর (মৌজপুরের দিকে ইঙ্গিত করে) ওদিকে সব হিন্দুদের বাস’। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী শেহজাদ বলেন, শান্তি নিশ্চিত করতে পুরো রাত সবাই সজাগ থাকেন। তিনি বলেন, উভয় সম্প্রদায়ই পরস্পরকে পাহারা দেয়। তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই এখানে প্রতিবাদ হচ্ছে কিন্তু কখনোই সহিংসতা হয়নি। হঠাৎ কপিল মিশ্র এসে উসকানি দিলো আর তা তাণ্ডব শুরু হয়ে গেলো।’

স্থানীয় বাসিন্দা মুকেশ কুমারও ওই বর্ণনার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের সহিংসতা এখানে কখনোই হয়নি। তিনি বলেন, সবাই ভ্রাতৃত্ববোধ নিয়ে বসবাস করেন।

সংঘবদ্ধ হামলাকারীদের প্রবেশ ঠেকাতে ব্যারিকেড দেওয়া গেট বসানো হয়েছে বলে জানান তারা।

ওই মহল্লার মধ্যে একটি মন্দির, মসজিদ ও একটি গুরুদুয়ারা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী শেহজাদ বলেন, ‘তাণ্ডব চালাচ্ছে বহিরাগতরা। এখানে ঈদ, দিওয়ালি, গুরু পরব সবই পালিত হয় কিন্তু আমাদের মনে কখনোই সাম্প্রদায়িক মনোভাব তৈরি হয়নি’।