‘মার্গারেট থ্যাচার-বিরোধী’ গান বাজাবে নিরুপায় বিবিসি

এপ্রিল ১৩, ২০১৩

images (1)ঢাকা জার্নাল: মার্গারেট থ্যাচারের মৃত্যুর পর তাঁর বিরোধীদের রাজপথে নেমে উল্লাসের ছবি আগেই দেখেছে দুনিয়া। তাঁদের সেই লাগামছাড়া উদ্দীপনার ঠেলায় এ বার চরম সমস্যায় পড়েছেন বিবিসি রেডিও-১ কর্তৃপক্ষ। যে দোটানার এক দিকে পেশাদারি বাধ্যবাধকতা, অন্য দিকে নৈতিকতা। আর এ সবের মূলে একটি গান ‘ডিং ডং, দ্য উইচ ইজ ডেড’!

১৯৩৯ সালের ছবি ‘উইজার্ড অফ ওজ’-এর গান ‘ডিং ডং, দ্য উইচ ইজ ডেড’! প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর বিরোধীরা এই গানটিকে নিয়ে মেতে উঠেছেন। থ্যাচার-বিরোধী প্রচারের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে গানটিকে। সাইট থেকে পয়সা দিয়ে ডাউনলোডের হিড়িক পড়েছে। সোমবার থেকে বিক্রি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কপি। মাতামাতি সোশ্যাল মিডিয়াতেও। এ সবের ঠেলায় ব্রিটিশ রেকর্ড কোম্পানিগুলির প্রথম দশটি হিট এবং সব চেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গানের তালিকায় চলে এসেছে ‘ডাইনি’র মৃত্যু ঘিরে উল্লাস। সেই গান এখন তালিকায় তিন নম্বরে।
আর এখানেই সমস্যায় বিবিসি রেডিও-১।

প্রতি রবিবার তারা সম্প্রচার করে ‘দ্য অফিশিয়াল চার্ট’ নামে একটি অনুষ্ঠান। বর্তমানে সেই শোয়ের সঞ্চালিকা এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত জামিলা জামিল। সপ্তাহের জনপ্রিয়তম গানগুলি ওই শোয়ে বাজানো হয়। অনেকে বলছেন, অনুষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী ‘টপ-টেন’ গানগুলি বাজাতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য। আর বিবিসি তো সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। কাজেই করদাতাদের পছন্দ-অপছন্দকে মর্যাদা দেওয়ার প্রশ্নটাও রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রেক্ষিতটা আলাদা। যেখানে খোদ ব্রিটিশ সরকারও চাপ দিচ্ছিল গানটি সম্প্রচার না করার জন্য। থ্যাচারের অন্ত্যেষ্টি বুধবার। সরকারের আশঙ্কা, এই সময়ে এই গানটি সম্প্রচার হলে অশান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 
ভারতীয় বংশোদ্ভূত সঞ্চালিকা জামিলা

চিত্রবিবিসি-র নতুন ডিরেক্টর জেনারেল টনি হলও বলছেন, “ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি গানটি কুরুচিকর। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতার প্রশ্নটাও তো রয়েছে। গানটা নিষিদ্ধ করলে তা বেশি প্রচার পাবে।” রেডিও-১-এ শীর্ষ কর্তা বেন কুপার বলছেন, “এক দিকে রয়েছে কিছু মানুষের ক্ষোভ। অন্য দিকে এমন এক পরিবার, যাদের আপনজনের শেষকৃত্য এখনও হয়নি। কিন্তু অনুষ্ঠানের ঐতিহ্যের কথা ভেবে গানটাকে উপেক্ষা করাও তো চলে না। কারণ, এই তালিকায় যে সমস্ত গান উঠে আসে, ধরা হয় সেগুলোর বিশেষ তাৎপর্য আছে।”

অগত্যা? কুপার জানিয়েছেন, জুডি গারল্যান্ডের গাওয়া ওই গানটি তাঁরা বাজাবেন, কিন্তু মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের জন্য। “ওই গান সংক্রান্ত অংশটুকুকে আমরা একটা সংবাদ প্রতিবেদন হিসেবে তুলে ধরব। যার মধ্যে গানটার অংশবিশেষ শোনানো হবে। সত্তর বছরেরও পুরনো একটা গান কেন আজকের শ্রোতাদের একাংশের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল, সেটাই ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হবে,” বলছেন কুপার।

রোবার জামিলার শোয়ের পর কী হয়, এখন সেটাই দেখার। ২৭ বছরের ‘জ্যাম জ্যাম’ (শ্রোতামহলে জামিলার ডাকনাম) জীবনে বহু পরীক্ষা দিয়েছেন। ১৭ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁর মেরুদণ্ড। ডাক্তাররা বলেছিলেন, বোধহয় আর হাঁটতে পারবেন না। কিন্তু চিকিৎসা আর অদম্য মনোবলের জোরে সুস্থ হয়ে ওঠেন জামিলা।

থ্যাচার সম্পর্কে জামিলার মনোভাব জানা যায়নি। তবে রবিবার হয়তো চাকরি-জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা তাঁর।

সূত্র আনন্দবাজার পত্রিকা, এপ্রিল ১৩, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.