পুঁজিবাজারে গুজবে বিপাকে রিং সাইন

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বেকায়দায় ফেলতে দেশীয় একটি কুচক্রী মহল নানা গুজব ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগে অস্থিতিশীল সৃষ্টিতে ওই মহলটি কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর নতুন করে যখন স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছিল তখনই ওই চক্র তৎপর হয়ে ওঠেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে তারা। এমনকি বাজার যাতে স্থিতিশীল না হতে পারে সেজন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশ থেকে বিতারিত করতে পর্যন্ত তৎপর হয়েছে ওই চক্র। তাই বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য নিরাপদ পরিবেশ চায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

তালিকাভুক্ত শক্ত মৌলভিত্তির রিং সাইন টেক্সটাইল যে কোম্পানির বার্ষিক টার্টওভার বছরে এক হাজার কোটি টাকা। ইপিজেডে ৬০টি প্লটে কোম্পানির কার্যক্রম চলছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশে ২২ বছর ধরে কাজ করছে। বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদী কোনো ঋণও নেই। মাসের ৭ তারিখের মধ্যে তাদের কর্মীদের বেতন পরিশোধ করা হয়। অথচ এ কোম্পানি নিয়ে সম্প্রতি গুজব ছড়ানো হয়। বলা হয় ওই কোম্পানির বিদেশি পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুং ওয়ে মিন আর বাংলাদেশে ফিরবেন না এবং রিং সাইন বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ সব গুজব মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে বাংলাদেশে কাজে যোগদান দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ পাওয়া গেছে, রিং সাইন টেক্সটাইলের বিদেশি পরিচালক ও এমডিকে সম্প্রতি দেশের একটি মহল হুমকি দেয়। এমনকি জোর করে খালি কাগজে ওই বিদেশির স্বাক্ষর নেয়। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরকম ভালো একটি কোম্পানি যাতে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে না পারে সেজন্য দেশীয় ওই চক্রটি নানা গুজব ছড়াচ্ছে। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলো এখন এ কোম্পানিটির সঙ্গে লেনদেন করতে অনীহা প্রকাশ করছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এভাবেই দেশের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চায় না। তার উপর যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ড হয় তাহলে যারা আছেন তারাও চলে যাবেন। এতে ভয়াবহ সংকটে পড়বে দেশের শেয়ারবাজার। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি রিং সাইনের এমডি বাংলাদেশে ফিরেছেন। আর গত বৃহস্পতিবার কারখানায় কাজে যোগ দেন।

গত ৯ জানুয়ারি এমডিসহ ৩ পরিচালক – ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুং ওয়ে মিন এবং পরিচালক ও এমডির বোন সুং ওয়েন লি অ্যাঞ্জেলা এবং পরিচালক ও এমডির মামী হাসিয়ো লিউ ই চাই নিজেদের দেশে যান। এমডির শাশুরী মারা যাওয়ায় তারা সেখানে যান। এরমধ্যেই চায়না নববর্ষ হওয়ার কারণে কিছুদিন বেশি নিজের দেশে অবস্থান করেন তারা।

এদিকে আইপিওর টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই এবং কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাবেই ওই অর্থ রয়েছে। এছাড়া এমডি কাজেও যোগদান করেছেন। এরমাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন রিং সাইন কর্তৃপক্ষ।

রিং সাইনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির আইপিও ফান্ডের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে ৪টি হিসাব রয়েছে। এরমধ্যে

আইপিওতে বাংলাদেশীদের আবেদনের জন্য ১টি, বিদেশীদের মধ্যে ডলারের জন্য ১টি, ইউরোর জন্য ১টি এবং পাউন্ডের জন্য ১টি হিসাব।

ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী, রিং সাইনের আইপিও ফান্ডের ৪ হিসাবে ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ও আইপিওবাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর ব্যাংকে আইপিও ফান্ড রাখায় সুদজনিত ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার আয় হয়েছে।

আইপিও হিসাবের ৪টির মধ্যে বাংলাদেশীদের জন্য ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৩ নম্বর ব্যাংক হিসাবে ৮২ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৪ নম্বর হিসাবে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ডলার বা ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৫ নম্বর হিসাবে ৬ হাজার ৮৪২ পাউন্ড বা ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৬ নম্বর হিসাবে ২ হাজার ৭০৭ ইউরো বা ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা রয়েছে। অর্থাৎ রিং সাইনের আইপিও ব্যাংক হিসাবগুলোতে বর্তমানে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে।

রিং সাইন কর্তৃপক্ষ একাধিক ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করে। তবে সম্প্রতি একটি ব্যাংক থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাবে থাকা আইপিও ফান্ডগুলো ওই ব্যাংকে স্থানান্তর করতে বলেন। একইসঙ্গে ওই ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হুমকি দেন। কিন্তু রিং সাইনের পর্ষদ অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। এমন সিদ্ধান্তে ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রিং সাইনের বিদেশি পরিচালকদের সরাসরি হুমকি দিয়েছে। এতে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েন রিং সাইনের বিদেশি পরিচালকেরা।

বিপর্যস্ত শেয়ারবাজার টেনে তুলতে খোদ সরকার নজর দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংক থেকে নতুন করে বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে যখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা নানা সুবিধা দিয়ে বিদেশিদের আকৃষ্ট করছেন। তখন প্রতিষ্ঠিত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশ থেকে বিতারিত করতে কুচক্রী মহলটি ওঠে পড়ে লেগেছেন।

এভাবে প্রতিনিয়ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্নভাবে বাধা দিলে তারা এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। যা পুঁজিবাজার ও দেশের অর্থনীতির জন্য অশিনসংকেত।