স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে জামায়াত

ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার দায়ে অভিযুক্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নতুন নির্বাচিত কমিটি নীতিগতভাবে একমত হওয়ায় বাৎসরিক পরিকল্পনার বিষয়টি গৃহীত হয়েছে। তবে ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ উদযাপন কবে নাগাদ শুরু হবে, কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় আয়োজন করা হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। জামায়াতের  নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপন করবো। কিন্তু, বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়ে আরও আলোচনা হবে। আলোচনার পর বুঝতে পারবো কীভাবে উদযাপন করা হবে।

জানতে চাইলে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অবশ্যই আমরা করবো। আমাদের বার্ষিক পরিকল্পনায় বিষয়টিকে কর্মসূচি হিসেবে নেওয়া হয়েছে, বিস্তারিত কর্মসূচি নিচ্ছি। আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী ও তৎকালীন দলটির অনুসারী সংগঠন ছাত্র সংঘ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সক্রিয় বিরোধিতা করেছিল। তাদের পূর্বসূরীদের কৃতকর্মের জন্য জাতির সামনে ক্ষমা না চেয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন হচ্ছে দলটির আত্মহত্যার শামিল, এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে দলটি একাত্তরে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত নয়। কারণ, ইতোমধ্যেই গত কয়েক বছরে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামায়াতের প্রতিষ্ঠালগ্নের ৫ জন নেতার ফাঁসি হয়েছে। 

এক সময় জামায়াতের ডাকসাঁইটে নেতা ছিলেন সামনে বসা সবাই। কিন্তু, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হয়ে ফাাঁসি হয়েছে সবার।

জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, ‘তাদের পিতৃপুরুষরা খুন-খারাবি করেছে, এটার জন্য ক্ষমা চাইবে না? এটা তো জামায়াতের বোকামি হবে।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত কয়েকবছর ধরেই জামায়াতকে একাত্তরে ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ২০১৬-১৭ সালে একাধিকবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও পরামর্শ দিয়েছিলেন দলটির সঙ্গত্যাগের।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী যদি ক্ষমা না চায়, তাহলে বোকামি হবে, ভুল হবে। কারণ, তারা যে তাদের ভূমিকার জন্য, খারাপ কাজের জন্য অনুতপ্ত না, সেটা প্রমাণ হবে। এটা দলটির জন্য বুমেরাং হবে। রাজনৈতিকভাবে আত্মহত্যা হবে বলে মনে করি।’

উল্লেখ্য, জামায়াতের পক্ষ থেকেও একাধিকবার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত বছরের শেষ দিকে।

যদিও জামায়াতের নেতারা দাবি করছেন, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সময়কার ভূমিকার সঙ্গে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর’ কোনও সম্পর্ক নেই। দলের বর্তমান নেতৃত্বে থাকা নেতারা একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্মের নেতা। বিশেষ করে দলের নতুন আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জাসদের হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছেন বলে বিভিন্ন সময় দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন। তারা আরও দাবি করেন, গত কয়েকবছর ধরে জামায়াত ও দলটির অনুগত ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে উদযাপন করে আসছে।

জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের প্রথম প্রজন্মের প্রতিনিধি শফিকুর রহমান। তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা জাসদ ছাত্রলীগের হাত ধরে। সিলেটের এমসি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দেন তিনি।’

জামায়াতের প্রচার বিভাগ জানায়, দলের মহাসচিব মিয়া গোলাম পরওয়ার ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ১৯৭৪ সালে তিনি জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালের শেষার্ধে তিনি ছাত্রশিবিরে যোগ দেন।

এ বিষয়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এখানে তো একাত্তর প্রসঙ্গ না। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সৃষ্টি ও দলের যাত্রা। আমাদের দলের গঠনতন্ত্রে স্বাধীনতা-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আমাদের ঘোষিত যে সম্মান ও শ্রদ্ধা এবং স্বাধীনতারক্ষায় যে অঙ্গীকার আমাদের গঠনতন্ত্রেই তা ঘোষণা করেছি।’

গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘এই দেশের স্বাধীনতা না থাকলে আমরা ইসলাম কায়েম করবো কোথায়? আমাদেরকে যা বলা হয়, এটা হচ্ছে রাজনৈতিক অপপ্রচার। এ কারণেই মনে করি যে, নিজেদের আন্দোলনের জন্য স্বাধীনতারক্ষার দায়িত্ব আমাদের বেশি। এজন্য জানমাল দিয়ে স্বাধীনতারক্ষার প্রয়োজনটা আমাদের আদর্শের জন্যই সবচেয়ে প্রয়োজন।’

জানতে চাইলে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং স্বাধীনতার জন্য যে কোনও ধরনের ত্যাগ স্বীকার করার মতো মানসিকতা সম্পন্ন একটি রাজনৈতিক দল। সুতরাং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের সঙ্গে বিরোধ হওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। দলের বর্তমান যে নেতৃত্ব আছে-আমিরে জামায়াত থেকে শুরু করে, আমরা সকলেই একাত্তর পরবর্তী প্রজন্মের মানুষ।’ সূত্র বাংলা ট্রিবিউন।