সুন্দরবনের জন্য হুমকি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র

এপ্রিল ১৩, ২০১৩

imazzges

ঢাকা জার্নাল: বাগেরহাট রামপালে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পশুর নদী ও কৃষি জমিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও দাবি করে তারা বলেন, সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই।

শুক্রবার বিকেল বিদ্যুত ভবনে এক অনুষ্ঠানে (বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পযন্ত) সরকারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তারা বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহন ও নানা চুক্তির পর জনমত জরিপ করা একটি ‘প্রহসন’।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির যৌথ উদ্যোগে রামপাল এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপনের (ইআইএ) বিষয়ে জনমত পর্যালোচনা সভায় এসব অভিযোগ করা হয়।

রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপনের (ইআইএ) সমীক্ষা প্রত্যাখান করেন বিশেষজ্ঞরা।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী বলেন, সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হোক সরকারও তা চায়  না, সব ধরনের সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়েই সমীক্ষা করা হয়েছে।

রামপালে কয়লা আসতেই যেখানে বেগ পেতে হবে, সেখানে আরো দুরে এই কেন্দ্র করা হলে বিদ্যুত উদপাদন মূল্যে আরো বেড়ে যাবে। এ জন্য উচ্চ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্প্ন্ন লোকজনদের দিয়ে বিষয়গুলো পযবেক্ষন করতে হবে বলেন তৌফিক ই ইলাহী।

বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আরো বলেন, আগামী ৮ বছরে আরো ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হবে। আগামী জুলাই-আগস্ট নাগাদ ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে। এ মাসেই ভুটান ও ভারতের সঙ্গে কারিগরি বিষয়ে আলোচনা হবে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়া এটা কোনভাবেই পূরণ করা যাবেনা।

জ্বালানি সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, এই প্লান্টটি আমাদের জন্য জরুরি, তাই পরিবেশের বিষয়গুলো আপোষযোগ্য।

প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপর পরিচালিত পরিবেশ সমীক্ষা এবং ওয়েবসাইটে দেওয়া জনমতের বিষয়ে বিভিন্ন দিন উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিআইএস) পরামর্শক ওয়াজি উল্লাহ।

ওয়াজি উল্লাহ দাবি করেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে না। পরিবেশগত যেসব  সমস্যা হবে তা মোকাবিলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কোন গরম পানি নদীতে ছাড়বে না। সেখানে যে ছাই উৎপন্ন হবে; তার শতকরা ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ সংগ্রহ করা হবে।

ওয়াজি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে যা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বশেষ প্রযুক্তি। এতে কার্বন এবং সালফার নির্গমনের পরিমান হবে সর্বনিম্ন।

এই উপস্থাপনার দাবিগুলো সঠিক নয় দাবি করে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বন্দর বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মানের ফলে কি হবে না হবে তা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কিন্তু সুন্দরবনের কি ক্ষতি হবে তা বিবেচনায় নেয়নি সরকার।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হলে সুন্দরবন ধ্বংস হবে দাবি  করে শহিদুল্লাহ বলেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মতামত দেওয়া হলেও সমীক্ষায় তার প্রতিফলন নেই।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, সুন্দরবন নিয়ে দেশের মানুষ একটা স্পর্শকাতর অবস্থায় রয়েছে। এলাকার উন্নয়নে সেখানেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে হবে এটা ঠিক নয়। বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, অনেকগুলো ভয়ঙ্কর দিক চেপে রেখেই ইআইএ রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। মাত্র ১৯ ভাগ স্থানীয় মানুষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পক্ষে বাকিরা সবাই এর বিপক্ষে।

সংগঠনের আরেক নেতা স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, “সুন্দরবন শেষ করে বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই।”

রামপাল এলাকার বাসিন্দা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “হাজার বছর চেষ্টা করেও একটি সুন্দরবন হবে  না।  তাই এ এলাকায় বিদ্যুত কেন্দ্র না করে অন্য স্থানে করা উচিত।”

অধ্যাপক শামসুল আলম, অ্যাডভোকেট তাহসিন, প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা,পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আব্দুল হাই মজুমদার, সেভ দ্য সুন্দরবনের সমন্বয়কারী শেখ ফজলুল ইসলামসহ প্রায় ২৫ জন বক্তা অনুষ্ঠানে রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মানে বিভিন্ন ঝুকি তুলে ধরেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.